আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, স্বৈরশাসকেরা পুরো পুলিশ বাহিনীকে নষ্ট করে ফেলেছে। আসামি পুলিশ, তদন্ত কাজেও পুলিশকেই ব্যবহার করতে হচ্ছে। কারণ, কোনো বিকল্প নেই। যে মাত্রায় অপরাধ হয়েছে, তাতে সবার বিচার করা যাবে না। কনস্টেবল পর্যন্ত নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার বিচার করতে হলে কমপক্ষে ৫০ বছর সময় লাগবে।

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে গুমের শিকার নির্যাতিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা সন্ত্রাসবিরোধী মামলাসহ সব মামলা প্রত্যাহার, নিরাপত্তা দেওয়া এবং তাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের দাবিতে আয়োজিত এক সভায় তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ভয়েস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারড পারসনস (ভিওইডি) আলোচনা সভাটির আয়োজন করে।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে কোনো গুম হতো না। তাঁর অমর হওয়ার স্পৃহা, ক্ষমতায় থাকার স্পৃহা ও লুটপাট করার স্পৃহা তাঁকে দানবে পরিণত করেছিল। তিনি অপরাধের নির্দেশ দিয়েছেন, আর নিচের দিকের কমান্ডাররা সেটা বাস্তবায়ন করেছেন। সুতরাং সুপিরিয়র কমান্ডারদের বিচার করলে আর গ্রাউন্ড লেভেলের ফোর্সদের বিচার করার দরকার নেই।’

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যে বাহিনীগুলোর সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে অপরাধের মাধ্যমে, সে বাহিনীগুলা আমাদের প্রাণ। আমাদের সেনাবাহিনী, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, এই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পতাকা তাদের হাতে দিয়েছি; কিন্তু সেখানে কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকে এ অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। ওই দুর্বৃত্তের দায় আমাদের বাহিনীগুলোর নয়।’

সভায় গুমফেরত প্রায় ৭০ জনের মতো ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন। মারুফ জামান নামের একজন নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার শিকার। আজ আমি কথা বলছি যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়, আমরা যাতে ক্ষতিপূরণ পাই এবং হাসিনার বানানো দমনমূলক নিপীড়নের আইন বাতিল হয়।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাসান নাসির, জাতীয় মুক্তি পরিষদের সম্পাদক ফাইজুল হাকিম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) আমান আজমী প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত জ ল ইসল ম র ব চ র কর আম দ র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ