অনুমোদনের পাঁচ বছর পর দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মূল কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। বন্দর নির্মাণের প্যাকেজ-১-এর অবকাঠামো নির্মাণ করবে জাপানি প্রতিষ্ঠান। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা চুক্তি করবে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে এই গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে পণ্য পরিবহনে সময় এবং ব্যয় সাশ্রয় হবে। 
চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে এখন সর্বোচ্চ ১০ মিটার গভীরতার, ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজ নোঙর করতে পারে। কিন্তু মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রথম পর্যায়েই নোঙর করতে পারবে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ। এতে ১ লাখ টন ধারণক্ষমতার বড় জাহাজ সহজে ভিড়তে পারবে। পণ্য পরিবহন সহজতর করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযোগকারী ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনাও নিয়েছে। এতে বর্তমানের চেয়ে জাহাজের পরিবহন খরচ ও অপেক্ষমাণ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন জানান, বর্তমানে এক টিইইউ (২০ ফুট সমমানের ইউনিট) কনটেইনার পরিবহনে গড়ে ৩ হাজার ডলার খরচ হয়। ইউরোপে একটি চালান পৌঁছাতে ৪০ থেকে ৪২ দিন সময় লাগে। কিন্তু গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বড় কনটেইনার জাহাজ সরাসরি নোঙর করতে পারবে। এতে করে ডেলিভারির সময় ১৫ থেকে ১৬ দিন কমে আসবে এবং খরচ নেমে আসবে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ডলারে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকার প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাপানের দুই খ্যাতনামা নির্মাণ ও প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান পেন্টা-ওশান লিমিটেড এবং টিওএ করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এ চুক্তির মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত হবে জাপান।
চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও মিউচুয়াল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ আহমেদ জানান, বন্দরটি বাংলাদেশের ‘আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট’ হিসেবে পরিচিতি পাবে। ব্যবসায়ীদের খরচ ও সময়ও অন্তত ৬০ শতাংশ সাশ্রয় করবে। বন্দর চালু হলে ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর থেকে ফিডার জাহাজে করে পণ্য পরিবহনের সুযোগ মিলবে। আবার ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই নির্মাণকাজ শুরু হবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই এবং জমি অধিগ্রহণ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আবার জাপানের দুটি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে টাগবোট ও পাইলট বোটের মতো প্রয়োজনীয় নৌযান সংগ্রহ করা হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মাতারবাড়ীতে ১২শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ গভীর সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো দ্রুত তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা ও অন্যান্য উপকরণ পরিবহনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। এই চ্যানেলে এরই মধ্যে ১৬১টি জাহাজ নোঙর করেছে। পরিবহন করেছে প্রায় ৩৩ লাখ
টন পণ্য।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি ২০২০ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুমোদন পায়। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মূল কাজ শুরু হতে দেরি হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটির ব্যয় সংশোধন করে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ত রব ড় প রকল প পর য য় র করত

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ