রেলওয়ের কংক্রিট স্লিপার প্লান্টে উৎপাদন বন্ধ
Published: 21st, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় অবস্থিত রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন দেশের একমাত্র কংক্রিট স্লিপার প্লান্টটিতে প্রায় এক মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ কারখানায় সর্বশেষ স্লিপার উৎপাদনের পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে স্লিপার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। প্লান্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে যান্ত্রিক সমস্যা দূর করে স্লিপার উৎপাদন শুরু হবে।
জানা যায়, কংক্রিট স্লিপার তৈরির প্রধান কাঁচামাল বালু, পাথর ও সিমেন্ট একই জায়গায় সহজ প্রাপ্তির কারণে ১৯৮৮ সালের ২৭ অক্টোবর ছাতক কংক্রিট স্লিপার প্লান্টে উৎপাদন শুরু হয়। রেললাইনের এসব স্লিপারের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো হওয়ায় এটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁচামাল প্রাপ্তির সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও রহস্যজনক কারণে কারখানাটির উৎপাদন মাঝেমধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। গত ৩ জানুয়ারি ছাতক কংক্রিট স্লিপার প্লান্ট পরিদর্শনকালে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো.
স্লিপার প্লান্টে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে তালা দেওয়া। স্লিপার প্লান্ট এলাকায় সুনসান নীরবতা। কর্মরত শ্রমিকরা হাজিরা দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্লান্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফোরম্যান আসাদুজ্জামান খান বেশ কিছুদিন ধরে নিজ কর্মস্থলে নেই।
একাধিক শ্রমিকের অভিযোগ, কাঁচামাল, বালু, সিমেন্ট থাকা সত্ত্বেও কারখানা বারবার বন্ধ হচ্ছে। এটি বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বারবার কারখানা বন্ধের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কংক্রিট স্লিপার প্লান্টের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার কবির হোসেন জানান, কারখানার রাবার প্যাড নষ্ট হওয়ায় স্লিপার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কারখানার মিক্সার মেশিনেও সমস্যা ছিল, এটিও দূর করা হয়েছে। রাবার প্যাড সরবরাহ হলেই স্লিপার উৎপাদন শুরু হবে।
ছাতক বাজার রেলওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (এপিএন) মো. আহসান হাবিব বলেন, কারখানায় কিছু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কংক্রিট স্লিপার উৎপাদন বন্ধ ছিল। ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। শিগগিরই মেশিনারি সমস্যা দূর করে প্লান্টে স্লিপার উৎপাদন শুরু হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র লওয র লওয় র ন বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি
গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।
গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।
ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’
তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।