যৌন হয়রানি নিয়ে বক্তব্য দিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে সোমবার (২১ এপ্রিল) যৌন নিপীড়ক শিক্ষকদের প্রতীকী জুতার মালা পড়িয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।

পরে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যৌন হয়রানি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। তার এ মন্তব্য ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

আরো পড়ুন:

যৌন হয়রানি: ২ বেরোবি শিক্ষকের কুশপুত্তলিকায় জুতা নিক্ষেপ

বেরোবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে কমিটি

নারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রক্টরের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে ভিকটিমকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য নারীর প্রতি অবমাননার শামিল।

ফেসবুকে ছড়িয়ে ভিডিওতে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রক্টর ড.

ফেরদৌস রহমান বলছেন, “হাওয়ায় বা বায়বীয় অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো বিচার হয় না। ফেইসবুক ফাঠায় ফেলাচ্ছে, খবরে নিউজ হচ্ছে। কিন্তু কারো কোনো সৎ সাহস নাই যে, আমাকে যৌন হয়রানি করছে? কেউ দুই লাইন লিখে দিতে পারে না?

তিনি আরো বলেন, “এখন যাকে যৌন হয়রানি করেছে, সেও মজা নিছে। সেও পরীক্ষায় মার্ক কপচিয়েছে। যে শিক্ষকই হোক না কেন, আমিও যদি হই, তাহলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিক।”

প্রক্টর বলেন, “দুই লাইন লিখে দিক, তার সঙ্গে কি কি যৌন হয়রানি করা হয়েছে। বিচার অবশ্যই হবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া বায়বীয় অভিযোগের ভিত্তিতে কারো বিচার হবে না। এটা প্রশাসনের স্পষ্ট বক্তব্য। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। (দোষীদের) অবশ্যই বিচার হবে।”

তার এ বক্তব্য বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ার পরই অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য শুরু করেন। 

ইমন সরকার নামের একজন লিখেছেন, “আগেই বলেছিলাম এই প্রক্টর কোনো কাজের না।” মোকসুদুল মমিন নামের আরেকজন লিখেছেন, “আপনারা গোপন রাখতে পারেন না, জুলাই হত্যাকাণ্ডে অভিযোগকারীদের নাম ফ্ল্যাশ হয়ে গেছিল।” 

এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বেরোবি সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিষয় দেখভালের জন্য প্রক্টর মহোদয় নিয়োজিত থাকেন। আমাদের প্রক্টর স্যারের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে অপমানজনক। উনি নিজেই বলেছেন, এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। সেহেতু কোনো তদন্তও হয়নি।”

তিনি বলেন, “তদন্ত ছাড়াই বা অভিযোগের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ না করেই উনি বলতে পারেন না, অভিযোগদাতা মজা নিয়েছেন। যদি উনার কাছে মনে হয়ে থাকে, যৌন হয়রানির দাবি তোলা নারী শিক্ষার্থী মজা নিয়েছে বা সুবিধা হিসেবে ভালো রেজাল্ট হাতিয়ে নিয়েছে। তাহলে উনার উচিত সেই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শুধু তাই নয়, তিনি শিক্ষকের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেনি।”

প্রক্টরের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মজা দেওয়া-নেওয়ার কোনো সম্পর্ক হতে পারে না। যদি এ রকম কিছু হয়েও থাকে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষায় উভয়পক্ষকে শাস্তির আওতায় আনা। একজন প্রক্টরের এ ধরনের মানসিকতা এবং শব্দচয়ন তার অপেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়। সেই সঙ্গে এটিও প্রতীয়মান হয়, তিনি প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখেন না।” 

বক্তব্যের ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, “প্রক্টর কি বক্তব্য দিয়েছে সেটা আমি বলতে পারবো না।”

আরো পড়ুন:

যৌন হয়রানি: ২ বেরোবি শিক্ষকের কুশপুত্তলিকায় জুতা নিক্ষেপ

বেরোবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে কমিটি

নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ: এখনও বহাল তবিয়তে বেরোবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

বেরোবি ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের একাধিক অভিযোগ

ঢাকা/আজম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ন হয়র ন র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

খাল–নালায় পড়ে মৃত্যুর দায় নেয় না, তদন্তও করে না

চট্টগ্রাম নগরের অরক্ষিত নালা ও খালে পড়ে গত ৬ বছরে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা তদন্তে কোনো কমিটি গঠন করেনি নালা ও খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে কী কারণে এবং কাদের গাফিলতি ও অবহেলায় এ ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।

মৃত্যুর ঘটনার মতো তদন্তের দায়িত্বও পরস্পরের কাঁধে চাপিয়ে নীরব আছে দুটি সংস্থা। এ কারণে দায়িত্বে গাফিলতির সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বারবার আড়ালে থেকে যাচ্ছেন।

গত শুক্রবার রাত আটটার দিকে মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিশসহ তিনজনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নগরের হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা ও দাদি খাল থেকে উঠে এলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ১৪ ঘণ্টা পরে পরদিন শনিবার সকালে নগরের চাক্তাই খাল থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনার তিন দিন পার হলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি চসিক ও সিডিএ। শুধু এ ঘটনাই নয়, এর আগের ১৩ মৃত্যুর ঘটনায়ও তদন্তের ব্যাপারে নীরব ছিল সংস্থা দুটি।

চট্টগ্রাম নগরের নালা ও খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং তত্ত্বাবধানের দায়ভার চসিক ও সিডিএর। সংস্থা দুটির হাতে নগরের ৫৭টি খাল এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালার দায়িত্ব।

এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত ছিল বলে স্বীকার করেন চসিক ও সিডিএর দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে কেন গঠন করা হয়নি, তার দায় নিতে রাজি হননি তাঁরা।

আরও পড়ুনঅটোরিকশা উল্টে পড়ল খালে, নিখোঁজ ছয় মাসের শিশু১৮ এপ্রিল ২০২৫

তদন্তে অনীহা দুই সংস্থার

গত ৬ বছরে নগরে খাল-নালায় পড়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ২ জন, ২০২১ সালে ৫, ২০২৩ সালে ৩, ২০২৪ সালে ৩ এবং চলতি বছর ১ জন।

খাল ও নালায় পড়ে মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে ৬টিই শিশু। তাদের একজনের বয়স মাত্র ছয় মাস। নারী মারা গেছেন পাঁচজন, আর পুরুষ তিনজন। তাঁদের মধ্যে একজনের মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি।

এই ১৪ জনের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে নগরের চশমা খালে পড়ে। মহেশ খালে পড়ে মারা গেছেন তিনজন। চাক্তাই, কলাবাগিচা, নাসির খাল ও হিজড়া খালে একজন করে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়েছে নালায় পড়ে।

যে খালগুলোতে পড়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, সবগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে সিডিএ। সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছে সংস্থাটি। ২০১৮ সালে নগরের ৩৬টি খাল ও বড় নালাগুলোতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিডিএ, এ কাজ এখনো চলমান। আর যেসব নালায় পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, সেগুলো সিটি করপোরেশনের আওতাধীন।

মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কেন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি, জানতে চাইলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নালা ও খালে পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় অবশ্যই তদন্ত কমিটি হওয়া উচিত। হিজড়া খালে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চসিক ও সিডিএ যৌথভাবে তদন্ত করতে পারে। চাইলে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনও করতে পারে। তবে এটি নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

কাজী হাসান বিন শামস দাবি করেন, মুরাদপুরে চশমা খালে সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদের (৫০) তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর খালের পাশে স্থায়ী নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে ১৯টি খালে দেওয়া হয়েছে। বাকি খালগুলোতেও কাজ চলছে। আর নগরের আগ্রাবাদে যে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মারা গিয়েছিলেন, সেটি ছিল সিটি করপোরেশনের। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করলে তারা করতে পারত।

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে খালে পড়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার১৯ এপ্রিল ২০২৫বৃষ্টি হলে এসব নালা আর সড়ক পানিতে একাকার হয়ে যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘরোয়া বাজি এবং ফেসবুক সমাচার
  • চিকিৎসাকর্মীদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইসরায়েলি বক্তব্য মিথ্যা: গাজা কর্তৃপক্ষ
  • ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপের কাজ কী?
  • ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনে ট্রাম্পের যত আলোচিত উক্তি
  • আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি গোলরক্ষক হুগো গাত্তি আর নেই
  • ‘বিসিবি আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে’
  • শিক্ষকদের বিচারক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ কতটা যৌক্তিক
  • প্রাণনাশের ভয় নিয়ে পালাতে হয়েছিল, দাবি হাথুরুসিংহের
  • খাল–নালায় পড়ে মৃত্যুর দায় নেয় না, তদন্তও করে না