মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে এবার অনশনে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী
Published: 21st, April 2025 GMT
মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চতুর্থ দফায় আন্দোলন শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেছেন ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী।
আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে এই অনশন শুরু হয়। রাত পৌনে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শেষ করে লিখিত সিদ্ধান্ত প্রশাসন না জানানো পর্যন্ত তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন।
অনশনে বসা ৯ শিক্ষার্থী হলেন ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম, চতুর্থ বর্ষের নূর ইকবাল, তৃতীয় বর্ষের মো.
খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, এখন তাঁরা প্রশাসন থেকে মৌখিক আশ্বাস চান না, লিখিত সিদ্ধান্ত চান। এই সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের অনশন কর্মসূচি চলবে।
একই কথা বলেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নূর ইকবাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেছেন; কিন্তু লিখিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশাসন এখনো কিছু জানায়নি। তাঁরা চান দ্রুত সিন্ডিকেট সভা করে চারুকলা ক্যাম্পাসে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। আর এক সপ্তাহের মধ্যে চারুকলার শ্রেণি কার্যক্রম মূল ক্যাম্পাসে শুরু হোক। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁদের অনশন চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও চান চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরুক। ইতিমধ্যে প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সময় চেয়েছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের বলেছেন, সমাবর্তনের পর সিন্ডিকেট সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এতে রাজি হচ্ছেন না।
চতুর্থ দফায় আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।
শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ দফা দাবিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে তাঁদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। এ অবস্থায় ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চারুকলায় ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এরপরও শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন৷ তবে একপর্যায়ে সেশনজট কমাতে ওই বছরের ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। সরকার পতনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও একই দাবিতে আন্দোলনে নামেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। পরে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান চলতি বছরের এপ্রিলের আগে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে না আসায় আজ আবার আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য বর ষ র চ র কল প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
আমরণ অনশনে চবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে সোমবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দিনভর বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের পর বিকেল চারটা থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন বিভাগটির নয় শিক্ষার্থী।
তারা হলেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম; ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নূর ইকবাল সানি; ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শাহরিয়ার হাসান সোহেল; ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান ইয়ামিন, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান ইপা; ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তরিকুল ইসলাম মাহী ও মাহমুদুল ইসলাম মিনহাজ।
এর আগে সোমবার বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দুপুর ১২ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর এই আন্দোলন চলে। এসময় চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধনে যোগ দেন। পরে বিকেল চারটায় প্রেস ব্রিফিং এর পর আমরণ অনশনে বসেন নয় শিক্ষার্থী।
মানববন্ধনে চারুকলার শিক্ষার্থী আল মাশরুল ফাহিম বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল চলমান এপ্রিল মাস থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করবো। কিন্ত আমরা এখনও মূল ক্যাম্পাসে আসতে পারিনি।’
ইনস্টিটিউটের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের দায়ী করে তিনি বলেন, 'চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে আনতে আমাদের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ভেটো দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফেরত আসলে তাদের অনৈতিক অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে বলে তারা ফেরত আসতে চাননা।'
আমরণ অনশন থেকে নুসরাত জাহান ইপা বলেন,‘যতক্ষণ পর্যন্ত জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে চারুকলা ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে না ততক্ষণ আমরা অনশন চালিয়ে যাবো।’
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান ও উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের যাত্রা ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক করে গঠন করা হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে এখন এর অবস্থান। আন্দোলনের মুখে ২০২৩ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ক্লাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও আন্দোলন নামেন তারা। গত ১২ ডিসেম্বর চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান। তবে এই প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।