প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, দুর্নীতি, হত্যা মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত বিভিন্ন দেশে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ও বিগত সরকারের মন্ত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার উদ্যোগ নেবে।

তিনি বলেন, যারা যারাই অভিযুক্ত, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, খুনের মামলা আছে তাদের ব্যাপারে আমরা সিরিয়াস এবং প্রত্যেকের আমরা প্রত্যাবাসন চাইব। তাদের বাংলাদেশের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা আমাদের এবং পরবর্তী সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।

সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

পলাতক নেতাদের দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এরা বাংলাদেশের মানুষের টাকা চুরি করে বাইরে নিয়ে মোজ-ফুর্তি করছে। তাদের ফেরানো অবশ্যই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই কাজটা আমরা করব।

বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতার হাতে রক্ত লেগে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনে যুক্ত; বড় বড় দুর্নীতিতে যুক্ত।

এ সময় নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে ইসলামপন্থি দলগুলোর আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, প্রতিবেদনটি ঐকমত্য কমিশনে যাবে। তা নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ অনেকগুলো বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনার বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে আমরা প্রতিবেদনের কতটুকু নেব, কতটুকু নেব না।

কাতারে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এ পরিকল্পনা আমাদের অনেক দিন ধরেই আছে। একই বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। যাতে করে দেশটির শ্রমবাজার আমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়; আরো শ্রমিক যেন বাংলাদেশ থেকে নেয়, সে বিষয়ে আমরা দেখছি। একইভাবে অন্যান্য যেসব দেশে আমাদের ভাই-বোনেরা কাজ পেতে পারেন তা নিয়ে কাজ করছি। শ্রমবাজারগুলোতে যাতে আরো ভালো বেতনে, বেশি সংখ্যক যেতে পারে সেটা সরকারের অগ্রাধিকার।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপিকে জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠানের দাবিতে একমত পোষণ করেছে বিএনপি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে খুব দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চায় দল দুটি। যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলসহ ডান, বাম ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে সোমবার রাজধানীর গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে বিএনপি নেতাদের পৃথক বৈঠক হয়। বৈঠকে বিগত এক দফা দাবি ও শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক জোট ও দল রাজপথে ছিল তাদের নিয়ে বিএনপির কাছে একটি জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। তারা আশা করেন, বিএনপি তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেবে। 

এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতৃত্ব দেন জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ডিসেম্বরের বেশি অপেক্ষা করার কারণ আমরা দেখি না। এ ব্যাপারে যদি কেউ ভিন্নমত পোষণ করে তাহলে তাদের যুক্তি দিয়ে বলতে হবে, কেন এর বেশি সময় দরকার। সরকার বলেছে, ডিসেম্বর থেকে জুন। তার মানে কি? তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে- এটাকে ধরে একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। সরকার বলছে যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার মানে তারা তো বলেনি, যে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না। কিন্তু আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে- এ রকম একটা তারিখ ধরে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। পার্থক্য তো খুব বেশি না। সরকার বলেছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, তার মানে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের কথা অনুযায়ী নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারিতেও হতে পারে। কাজেই আমাদের সঙ্গে সরকারের পার্থক্য তো বহু মাসের না। আমরা শুধু সরকারকে বলছি, এভাবে না বলে, এভাবে বলেন।

প্রশাসনের সব জায়গায় বিএনপির লোকজন বসে আছে, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যিনি এ কথা বলেছেন তিনিও তো সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তাহলে তারা কি সব জায়গায় বিএনপির লোক বসিয়েছেন নাকি? 

বিএনপিকে তো প্রশাসন থেকে উৎখাত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় কোথাও বিএনপির লোক ছিল না। যারা (আওয়ামী লীগের সময়) বৈষম্যের শিকার হয়েছিল, অন্যায়ভাবে যাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে একজনকেও এখনও পদায়ন করা হয় নাই। তাহলে বিএনপির লোককে বসানো হলো কোথায়? যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের একজনকেও কেউ যদি পদায়ন করা হতো, তাহলে বলতে পারতেন বিএনপির লোক বসানো হয়েছে। তাহলে এই কথাটির যুক্তি কি জানতে চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা তাদের জিজ্ঞাসা না করে আমাদের কেন জিজ্ঞাসা করেন? আপনারা জানেন না এসব? 

ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, শেখ হাসিনার পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা একটি দাবিতে জয়ী হয়েছি। এখন কথা হচ্ছে নির্বাচনের বিষয়ে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে- জুনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে। সংস্কার কমিশনও বলেছে মে’র মধ্যে এসব শেষ করবে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। কারণ, একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার দরকার। এজন্য আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। এ জন্য আমরা চাই সরকার একটি রোডম্যাপ দিক। আমরা বিএনপির কাছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছি। আশা করি, বিএনপি তা বিবেচনা করবে। লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও বলেছেন, তারা জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব করেছে বিএনপির কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ