বাংলাদেশেও অনার্স বোর্ড চান মিরাজ
Published: 21st, April 2025 GMT
‘ঘরের মাঠে তো অনেক দিন পর ৫ উইকেট পেলেন...’—কথাটা শুনে মেহেদী হাসান মিরাজ পাল্টা জানতে চাইলেন, ‘কত দিন?’
স্মৃতি হাতড়ে নিজে মনে করতে পারলেন না। সময়ের হিসাবে আড়াই বছর পর আর ম্যাচের হিসাবে ৮ ম্যাচ পর দেশের মাটিতে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে শেষবার ৫ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন তিনি।
টেস্টে অবশ্য গত বছরই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ ফাইফার পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় ওই স্মৃতি। রাওয়ালপিন্ডিতে ৫ উইকেট নেওয়ার পর নাম তুলেছিলেন সেই স্টেডিয়ামের অনার্স বোর্ডে। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে গিয়ে বোর্ডে নিজের নামটা দেখেও এসেছেন তিনি।
সেই স্মৃতি রোমন্থন করে মিরাজ আজ বলেছেন, ‘অর্জন কিন্তু একদিনে আসে না। কষ্ট করতে হয়, তারপর অর্জনটা আসে। রাওয়ালপিন্ডিতে ৫ উইকেট পেয়েছিলাম। যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে গিয়েছি, অনার্স বোর্ডে নিজের নাম দেখেছি, ভালো লেগেছে।’
বাংলাদেশেও এমন কিছু দেখতে চান তিনি, ‘বাংলাদেশে এই রীতিটা চালু করা উচিত। যাঁরা বর্তমানে আছেন (দায়িত্বে), আশা করি তাঁরা এটা নিয়ে চিন্তা করবেন।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে বেশ বিপদেই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম দিন বাংলাদেশকে ১৯১ রানে অলআউট করে সেদিনই কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান করে ফেলে জিম্বাবুয়ে।
সেই অবস্থা থেকে কাল পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ পিছিয়ে ২৫ রানে। জিম্বাবুয়েকে ২৭৩ রানে অলআউট করার পথে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ।
এ অর্জনের অনুভূতি জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘উইকেট পেলে তো সবারই ভালো লাগে। চেষ্টা ছিল ঠিক জায়গা বল করা, দলকে ভালোভাবে সমর্থন দেওয়া। একই সঙ্গে ভাগ্যও সহায় হতে হবে।’
সিলেটের উইকেটে বেশ বাউন্স দেখা যাচ্ছে এবার। স্পিনাররা শুরুতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। একই অবস্থা ছিল মিরাজেরও। তবে দিনের শেষ সেশনে ৪ উইকেট পেয়েছেন তিনি।
উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কথা জানাতে গিয়ে মিরাজ বলেছেন, ‘যেহেতু আমরা খেলার ভেতরে থাকি, অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের এই উইকেটে কীভাবে বল করতে হয়। কোচদের একটা বার্তা ছিল যে এই উইকেটে পেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কীভাবে পেসটা ধরে রাখা যেতে পারে। তাঁরা আমাদের খুব ভালো পরামর্শ দিয়েছেন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের ‘নিজস্ব ঢংয়ের’ ব্যাটিং, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাই এই দশা
সিলেটের আবহাওয়ার নিজস্ব একটা ঢং আছে। কখন রোদ উঠবে, কখন বৃষ্টি নামবে বোঝা কঠিন। সেই সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলও দেখিয়েছে ব্যাটিংয়ের নিজস্ব ঢং। কখন যে কী হবে বোঝা কঠিন!
যখনই কেউ উইকেটে থিতু হয়েছেন, বড় ইনিংস খেলার আশা জাগিয়েছেন; তখনই উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন! আর হঠাৎ ব্যাটিং ধস তো সেই কবে থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বাটিংয়ে চিরাচরিত সবকিছুই যখন এভাবে দাড়ি-কমাসহ মিলে যাবে, সেদিন বাংলাদেশের সংগ্রহ বড় না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। হয়েছে সেটাই। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৯১ রানে।
উপহার না দিলে এই উইকেটে ব্যাটসম্যানদের আউট করা যে কঠিন, সে তো প্রথম দিনের শেষবেলায় জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং দেখেই বোঝা গেছে। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারেন। বেনেট ৩৭ বলে ৪০ রানে অপরাজিত, কারেন ৪৯ বলে ১৭ রানে। প্রথম দিনে খেলা হয়েছে ৭৫.১ ওভার, জিম্বাবুয়ে পিছিয়ে ১২৪ রানে।
বাংলাদেশি ঢংয়ের ব্যাটিংয়ের ‘নেতৃত্বে’ ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেনই। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪ সালে নিজের ব্যাটিংয়ের কিছু ভুল তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩০-৪০ রানের ইনিংসগুলোকে কীভাবে বড় করা যায়, সেটি নিয়েই কাজ করেছেন বলেই জানান নাজমুল। এত কিছু বলে বছরের প্রথম টেস্টে সেই একই ভুল! ব্লেসিং মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন ব্যক্তিগত ৪০ রানে।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে কেন এমন শট খেলতে গেলেন, এই যুগে সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বরং অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা বলটি কেন ফিল্ডারের হাতে গেল, সেই প্রশ্ন নিজেকে করতে পারেন নাজমুল। সঙ্গে আর কত দিন ভালো খেলতে খেলতে মনযোগ হারিয়ে এভাবে উইকেট দিয়ে আসবেন, সেটিও!
নাজমুলের বিদায়ে যিনি উইকেটে আসেন, সেই মুশফিকুর রহিম যেভাবে আউট হয়েছেন, তা আরও দৃষ্ট কটু। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার যে বলটিতে আউট হয়েছেন, সেটিতে চার মারার চেয়ে আউট হওয়া কঠিন। মুশফিক কঠিন কাজটাই করেছেন। নিরীহ শর্ট বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ৪ রান করে।
ক্রিকেটে দিনটা নিজেদের হলে অবিশ্বাস্য কিছুই করেন ব্যাটসম্যানরা। অন্তত বিশ্বমানের ক্রিকেটে সেটাই হয়। তবে আজ মুমিনুল হকের বিষয়টি ছিল অন্যরকম। শূন্য রানে জীবন পেয়েছেন, এজ হয়ে চার পেয়েছেন কয়েকটি। এরপরও ৫৬ রানের বেশি করতে পারেননি। হয়তো বুঝতেই পারেননি, ভাগ্যবিধাতাও তাঁর কাছ থেকে একটা বড় ইনিংস চাইছেন! তাই শেষ পর্যন্ত মাসাকাদজার হাওয়ায় ভাসানো বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন।
কাছাকাছি সময়ে বাউন্সারে ব্যাটসম্যানদের একের পর এক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন মুজারাবানি। এই পেসার গতির ঝড় তুলতে না পারলেও সিলেটের উইকেট আর নিজের উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বাউন্স ঠিকই আদায় করেছেন। ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলেছেন। তাঁর লাফিয়ে ওঠা বলে অনেকটা অসহায় আত্মসমর্পণ করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
দলের ৪ জন মূল ব্যাটসম্যানের এমন হতশ্রী বিদায়ে ব্যাটিং ধস তো হবেই! এরপর তাইজুল ইসলামও যোগ দেন এই তালিকায়। এতে ২ উইকেটে ৯৮ রান করা বাংলাদেশ পরের ৫৬ রান করতে হারায় ৫ উইকেট। ১৪৬ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে জাকের আলী লড়াইটা না করলে সংগ্রহটা আরও ছোট হতে পারত। সেখান থেকে হাসান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে ৪১ রানের জুটি গড়েন জাকের।
সেই জুটি ১৮৭ রানে ভাঙার পর বাংলাদেশ দল আর টিকেছে ৯ বল। যোগ করতে পেরেছে ৪ রান। জাকের আউট হয়েছেন ২৮ রানে। ঘরের মাঠে টেস্টে ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়া অনেকটা অভ্যাসে পরিণত করেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে সর্বশেষ ৮ ইনিংসে এ নিয়ে ছয়বার দুই শর নিচে অলআউট।
মুজারাবানি উইকেট নিয়েছেন ৩ টি। প্রথম দিনে নাহিদ রানার সঙ্গে লড়াইয়ে আপাতত এগিয়েই আছেন এই পেসার। বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজাও।
অথচ তাঁকে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন প্রথম বল দেন ম্যাচের ৩৮ তম ওভারে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যে এত এত ‘উপহার’ দেবেন, আরভিনের অবশ্য তা জানার কথা নয়!