আমরণ অনশনে চবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা
Published: 21st, April 2025 GMT
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে সোমবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দিনভর বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের পর বিকেল চারটা থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন বিভাগটির নয় শিক্ষার্থী।
তারা হলেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম; ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নূর ইকবাল সানি; ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শাহরিয়ার হাসান সোহেল; ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান ইয়ামিন, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান ইপা; ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তরিকুল ইসলাম মাহী ও মাহমুদুল ইসলাম মিনহাজ।
এর আগে সোমবার বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দুপুর ১২ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর এই আন্দোলন চলে। এসময় চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধনে যোগ দেন। পরে বিকেল চারটায় প্রেস ব্রিফিং এর পর আমরণ অনশনে বসেন নয় শিক্ষার্থী।
মানববন্ধনে চারুকলার শিক্ষার্থী আল মাশরুল ফাহিম বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল চলমান এপ্রিল মাস থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করবো। কিন্ত আমরা এখনও মূল ক্যাম্পাসে আসতে পারিনি।’
ইনস্টিটিউটের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের দায়ী করে তিনি বলেন, 'চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে আনতে আমাদের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ভেটো দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফেরত আসলে তাদের অনৈতিক অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে বলে তারা ফেরত আসতে চাননা।'
আমরণ অনশন থেকে নুসরাত জাহান ইপা বলেন,‘যতক্ষণ পর্যন্ত জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে চারুকলা ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে না ততক্ষণ আমরা অনশন চালিয়ে যাবো।’
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান ও উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের যাত্রা ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক করে গঠন করা হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে এখন এর অবস্থান। আন্দোলনের মুখে ২০২৩ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ক্লাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও আন্দোলন নামেন তারা। গত ১২ ডিসেম্বর চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আমরণ অনশন শ ক ষ বর ষ র আমরণ অনশন ইনস ট ট চ র কল
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন শুরু
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষার্থী দুপুর ৩টার দিকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী জড়ো হন। বিকেল ৪টার দিকে তারা অনশন শুরু করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অনশনরত শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।
আরো পড়ুন:
খামারবাড়িতে শেকৃবি-কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্সকে স্নাতকের সমমান করার দাবিতে বিক্ষোভ
অনশন শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক। আজ দুপুর ১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার, সহকারী ছাত্র কল্যাণ পরিচালক রাজু আহমেদ ও ইইই বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফুল গনি ভূঁইয়া।
স্টুডেন্ট ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের সামনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, “ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা তাদের নিয়ে বসেছি। তারা তাদের সমস্যার জায়গাগুলো আমাদের জানাবে। তাদের সব সমস্যা যাতে দ্রুত সমাধান করা যায় সে লক্ষ্যে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা চলছে।”
তিনি আরো বলেন, “ছাত্ররা আমাদের সন্তানের মতো। তারা অন্যায় বা ভুল করতে পারে। এমনকি আমরাও ভুলের ঊর্ধ্বে নই। শিক্ষক হিসেবে আমাদের অগ্রাধিকার সব সময় শিক্ষার্থী। তাদেরকে নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিটা ছাত্রের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আমি বদ্ধ পরিকর। আমি একটি বিষয় নিশ্চিত করতে চাই, ছাত্রদের কোনো বিষয়ে কোনো সমস্যা হলে তার সমাধান করা আমার অন্যতম ও প্রধান দায়িত্ব।”
তিনি আরো বলেন, “৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। উক্ত বহিষ্কার কিন্তু চূড়ান্ত নয়। এখানে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি বসবে। যে সব ছাত্রদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তির মুখোমুখি না হন, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সাহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন, অধ্যাপক ড. তৌহিদ হোসেন, অধ্যাপক ড. রাজিয়া খাতুন, অধ্যাপক ড. রোকনউদ্দিন, অধ্যাপক ড. ইলিয়াস এনাম, অধ্যাপক ড. আরিফুজ্জামান, অধ্যাপক ডক্টর মনির হোসেন, অধ্যাপক ড. আওলাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. আহমেদ হাসান আলী, অধ্যাপক ড. কাউসার আহমেদ রিজভী, অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম।
কুয়েট ক্যাম্পাসে ১৮ ফেব্রুয়ারি বহিরাগত ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা কুয়েট ভিসি, প্রো-ভিসি, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ ও ছাত্ররাজনীতি বন্ধসহ ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কুয়েট কর্তৃপক্ষ।
বন্ধের ৫২ দিন পর গত ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা জোর করে ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খোলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ১৫ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার এবং আগামী ২ মে হল খুলে দেওয়া ও ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৬ এপ্রিল ছয়টি আবাসিক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন ছাত্ররা।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ