খাগড়াছড়িতে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ ছয় দিনেও মেলেনি। তাদের উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ সোমবারের অভিযানে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) গোপন আস্তানা পাওয়ার দাবি করেছে যৌথবাহিনী।

জানা গেছে, আজ ভোর পাঁচটার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পূর্ণচন্দ্র কারবারি পাড়ায় যৌথবাহিনী অভিযান চলায়। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা টিনশেডের তালাবন্ধ একটি ঘর দেখতে পান। এরপর স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে তালা ভেঙে ঘরটিতে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় তিন জোড়া পোশাক ও ১৯টি ইউনিফর্ম, পিস্তলের গুলি, ১টি ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি সেট, দুটি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি প্রিন্টার, সেলাইমেশিন, তাঁবু, নেট, লোহার শেকল, খাবারের তৈজসপত্র ও খাবারের কাঁচামাল, চাঁদা আদায়ের রসিদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই আস্তানায় অপহরণের শিকার শিক্ষার্থীদের রাখা হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো.

আমান হাসান। 

অভিযানের বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে আজ ভোরে ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় পূর্ণচন্দ্র কার্বারি পাড়ার একটি ঘর থেকে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানার সন্ধান পায় যৌথবাহিনী। সেখান থেকে ইউপিডিএফের প্রশিক্ষণ সরঞ্জামসহ ল্যাপটপ, মোবাইল, ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। পাঁচ শিক্ষার্থীকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন সড়কেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

বিজু উৎসব উদযাপন শেষে ফেরার পথে গত ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাঁদের বহন করা অটোরিকশার চালককে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন– পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপহরণকারীরা চালককে ছেড়ে দিলেও পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি।

এ ঘটনায় ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস- সন্তু লারমা) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অভ য ন

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে এবার দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণ

খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের চার দিনের মাথায় বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি রবির দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার মানিকছড়ি উপজেলা সদরের ময়ূরখীল এলাকায় রবির টাওয়ার মেরামতকালে তাদের অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রোববার মানিকছড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। অপহরণের শিকার ব্যক্তিরা হলেন ইসমাইল হোসেন ও আব্রে মারমা।

রবির মানিকছড়ির টাওয়ারগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা মাঠকর্মী মংথুই মারমা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ময়ূরখীল এলাকার অচল টাওয়ার মেরামতের কাজ চলছিল। দুপুর ১টার দিকে পাশের গচ্ছাবিল এলাকা থেকে ফিরে মেরামতের কাজে নিয়োজিত ইসমাইল ও আব্রেকে দেখতে পাননি মংথুই। মোবাইল ফোনে কল করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এ ঘটনায় রোববার দুপুরে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন মংথুই। মানিকছড়ি থানার ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, অস্ত্রধারীরা দুই টেকনিশিয়ানকে টাওয়ার থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে গেছে।

এর আগে ১৬ এপ্রিল চবির পাঁচ আদিবাসী শিক্ষার্থী খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথে জেলা সদরের গিরিফুল এলাকায় তাদের বহনকারী অটোরিকশা আটকায় দুর্বৃত্তরা। এর পর অটোরিকশাচালক ও পাঁচ শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তারা। পরে অপহরণকারীরা চালককে ছেড়ে দিলেও শিক্ষার্থীদের খোঁজ পাঁচ দিনেও মেলেনি। ওই শিক্ষার্থীরা হলেন– মৈত্রীময় চাকমা, অলড্রিন ত্রিপুরা, দিব্যি চাকমা, রিশন চাকমা এবং লংঙি ম্রো। তারা চবির বিভিন্ন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মুক্তি দাবিতে আজ ‘আদিবাসী ছাত্র সমাজ’ ব্যানারে খাগড়াছড়ি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। কর্মসূচিতে একই সঙ্গে রাঙামাটির কাউখালীতে এক আদিবাসী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে বিচার দাবি করা হয়। সমাবেশ শেষে অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার ও কাউখালীর ঘটনার বিচার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের প্রতিবাদ ও তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে চবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে তারা অপহৃত শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রোববার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। তারা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

পাঁচ শিক্ষার্থীকে মুক্তি ও কাউখালীতে নারী ধর্ষণের বিচার দাবিতে রোববার রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। ‘আদিবাসী ছাত্র সমাজ’ ব্যানারে কুমার সমিত রায় জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে আয়োজিত 
সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। 

পাঁচ শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে উদ্ধার করার দাবি জানিয়েছে সাতটি বাম ছাত্র সংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। রোববার জোটের বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। 

খাগড়াছড়ির এসপি আরেফিন জুয়েল জানান, পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তাদের উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন রাঙামাটি অফিস, মানিকছড়ি ও চবি প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় মিলল ইউনিফর্ম-ওয়াকিটকি 
  • খাগড়াছড়িতে এবার দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণ
  • মানিকছড়িতে মোবাইল টাওয়ারের দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণের অভিযোগ
  • খাগড়াছড়িতে এবার ২ টেকনিশিয়ান ‘অপহরণ’
  • চবির অপহৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে সমাবেশ 
  • খাগড়াছড়িতে অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
  • ভবেশের মৃত্যু: ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের
  • বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় ব্যর্থ: ভারত
  • সন্তানদের অপেক্ষায় দিন কাটছে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের