রেডিওলজির সিরিয়াল পেতে লোকজন আগের দিন রাতে এসে ঘুমায়: বিএমইউ উপাচার্য
Published: 21st, April 2025 GMT
‘এক শুক্রবার রাত ১০টায় এসে (হাসপাতালে) দেখলাম, নিচে লোকজন কাঁথা বালিশ নিয়ে ঘুমাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, তাঁরা পরদিনের রেডিওলজির সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আগে থেকে এসে ঘুমাচ্ছে। চাহিদা কোথায় গেছে বোঝেন!’— আজ সোমবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহিনুল আলম।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের আওতায় এক্স–রে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এমআরআইসহ বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়। উপাচার্য শাহিনুল আলম বলেন, ‘এই সিরিয়াল ব্যবস্থার অপসারণ করতে হবে। ওয়ার্ক লোড (কাজের চাপ) কমাতে হবে ও কাজে পারফেকশন (কাজ নিখুঁত) থাকতে হবে। জনগণের পক্ষে কাজ করার জন্য সুপারিশ তৈরি করা হবে।’
বিএমইউ’র ব্লক বি তে অবস্থিত মিলন হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং (বিএসআরআই)। ‘ফ্রম দ্য ক্যাথ ল্যাব টু দ্য মেমো স্যুট: এমপাওয়ারিং সেইফার, স্মার্টার পেশেন্ট কেয়ার’ (ক্যাথ ল্যাব থেকে মেমো: রোগীর জন্য নিরাপদ, আধুনিক সেবাকে শক্তিশালী করা) শিরোনামের অনুষ্ঠানে রেডিয়েশনের ঝুঁকি, স্তন ক্যানসারসহ অন্যান্য অসুস্থতা এবং টিউমার শনাক্ত নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য শাহিনুল আলম আরও বলেন, ‘ইমেজিং ও রেডিওলজিতে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) সংযুক্ত করার সময় এসেছে। এর জন্য আপনাদের প্রস্তত থাকতে হবে। এ কাজে আপনাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। এখন জেনারালাইজ (সাধারণ) পরীক্ষা করা যাবে না, সুপার সিলেকটিভ (বাছাই করা সুনির্দিষ্ট) পরীক্ষা করতে হবে। এখনকার প্রশাসনের অবস্থা ভালো। রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের জন্য সবচেয়ে ভালো জিনিস কেনা হবে।’
অনুষ্ঠানে টিউমার, লিভার ক্যানসার, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এবং ট্রান্সআর্টেরিয়াল কেমোইম্বোলাইজেশন (টিএসিই) চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করেন এভারকেয়ার হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ জহেরুল আলম। তিনি জানান, এখন এ চিকিৎসা বাংলাদেশে সফলভাবে হচ্ছে।
রেডিয়েশনের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মামুন–উর–রশীদ। তিনি জানান, দেশে পরীক্ষা করার জন্য রোগী ও রেডিওলজিস্ট–রেডিওগ্রাফারদের যে ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন তা মানা হয় না। এমনকি পরীক্ষা কক্ষের যে উচ্চতা ও প্রশস্ততা থাকা প্রয়োজন, যন্ত্র থেকে যত দূরে থাকা প্রয়োজন তাও মানা হয় না। অনেক সময় রোগীর সঙ্গে তাঁর স্বজনকেও এক্স–রে কক্ষে রাখা হয়। এভাবে রোগী ও তাঁর স্বজনেরা যেভাবে রেডিয়েশনের ঝুঁকিতে পড়ছেন, সেভাবে যিনি পরীক্ষা করেন তিনিও ঝুঁকিতে পড়ছেন। টিএলডি (বিকিরণের শক্তি শুষে নেয়) ব্যাজ পরার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক রেডিওলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন, মারাও যাচ্ছেন। ৮ থেকে ১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভধারণ অবস্থায় এক্স–রে কোনো অবস্থাতেই করা উচিত নয় বলে তিনি জানান।
স্তন ক্যানসার ও স্তনের অন্যান্য রোগ নির্ণয় নিয়ে আলোচনা করেন পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শারমিন আখতার রূপা। তিনি বলেন, স্তন ক্যানসার শনাক্তে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছর বয়স থেকে মেমোগ্রাফি করা হয়। তবে আমাদের দেশের গবেষণা তথ্যে দেখা গেছে, এখানে ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের হার বেশি। তাই দেশে ৩০ বছর বয়স থেকে মেমোগ্রাফি শুরু করা উচিত। আগেভাগে শনাক্ত হলে ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়ার হার বাড়ে। তিনি মেমোগ্রাফি, টমোগ্রাফি ও আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করার সুবিধা–অসুবিধা দুটোই তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বি সিদ্দিক। আরও উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠন বিএসআরআইয়ের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ আওসাফ আলী, মহাসচিব অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক খলিলুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরআইয়ের সদস্য অধ্যাপক সাহারা হক জেরিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য অন ষ ঠ ন র ড ওলজ পর ক ষ র জন য ল আলম অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলামের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলামের স্মরণে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক শামসুল ইসলামের পরিবার এই স্মরণ সভার আয়োজনে করে। এতে তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবন, গবেষণা, শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও পরিবারের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক ইসলামের মেয়ে অধ্যাপক জেবা ইসলাম সেরাজ সবাইকে স্বাগত জানান। তিনি প্রয়াত পিতার জন্য ক্ষমা ও দোয়া চান। এরপর তিনি সঞ্চালক হাসিব ইরফানুল্লাহকে পরিচয় করিয়ে দেন। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে হাসিব ইরফানুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসিনা খান এবং জাপানের ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবিদুর রহমানের শোক বার্তা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা অধ্যাপক শামসুল ইসলামের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এবং দেশের বিজ্ঞান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শমসের আলী তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন।
স্মরণ সভায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মিহির লাল সাহা, বিসিএসআইআর-এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিম খান, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নাশিদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী সাখাওয়াত হোসেন, বিএপিটিসিবির প্রতিনিধি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং আইইউবির সাবরিনা এম ইলিয়াস প্রয়াত অধ্যাপক শামসুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অধ্যাপক শামসুল ইসলামের স্মরণ সভায় বোটানিক্যাল সোসাইটি ও অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞান শিক্ষকেরাও অংশ নেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি মুনির হাসান এবং এএসআই স্কুল অব লাইফের সমন্বয়ক মোর্শেদা আক্তার অধ্যাপক শামসুল ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
সভায় অধ্যাপক শামসুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তাঁর বড় ছেলে সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ ইসলাম এবং মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধ্যাপক জেবা ইসলাম পিতার স্মৃতিচারণ করেন।
অধ্যাপক শামসুল ইসলামের ছোট ছেলে ও যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খালিদ ইসলাম তাঁর বাবার জন্য দোয়া চান। সবশেষে অধ্যাপক ইউসুফ ইসলাম দোয়া পরিচালনা করেন।