বোলারদের ঘুরে দাঁড়ানোর দিনে ওপেনিং জুটি নিয়ে হতাশা বাংলাদেশের
Published: 21st, April 2025 GMT
শূন্যে লাথি মেরে শুরু। এরপর মুখ লুকালেন জার্সিতে। কোমরে হাত দিয়ে ৬ ফিট ৮ ইঞ্চির ব্লেসিং মুজারাবানি ধীর পায়ে হাঁটা শুরু করলেন সৈয়দ তুরাব স্টান্ডের দিকে। হতাশ, না ক্ষুব্ধ এই পেসার যেন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চান! উইকেটকিপার নিয়াশো মায়াভোর ক্যাচ মিসে এভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখান ব্লেসিং মুজারাবানি। না দেখিয়েও বা কী করবেন! এমন সহজ ক্যাচ কেউ ছাড়ে!
মুজারাবানির লাফিয়ে ওঠা বলটা বাংলাদেশ ওপেনার মাহমুদুল হাসানের গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল উইকেটকিপার মায়াভোর হাতে। গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে থাকা মায়াভোর হাতই সবচেয়ে বিশ্বস্ত হওয়ার কথা। সেই মায়াভোই ছাড়লেন সহজ এক ক্যাচ। মায়োভো শুধু মাহমুদুলকে ‘জীবন’ই দিলেন না, বাউন্ডারিও উপহার দিলেন। মুজারাবানির রাগ-ক্ষোভ এই কারণেই।
এই ক্যাচটি নিলেই যে সিলেটে দিনের শেষটাও হতো জিম্বাবুয়ের একক আধিপত্যে। তবে মাহমুদুলের ক্যাচ ছাড়ার পরও সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে জিম্বাবুয়েই এগিয়ে আছে বলা যায়। সিলেটে দ্বিতীয় দিনের খেলা বাংলাদেশ শেষ করেছে ১ উইকেটে ৫৭ রান নিয়ে। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস থেকে এখনো পিছিয়ে ২৫ রানে।
বাংলাদেশ দলের আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম আবার মাহমুদুলের মতো ভাগ্যবান ছিলেন না। ৪ রান করে মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।
ওপেনারদের যে ফর্ম, তাতে আসলে ভাগ্যের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে। কারণ, টেস্টে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি সর্বশেষ পঞ্চাশ বা তার বেশি রান তুলেছে ১২ ইনিংস আগে।
জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারের অবশ্য এই উইকেটে কাল শেষ বিকেলে ব্যাটিং করতে সমস্যা হয়নি, ১৪.
বাংলাদেশের বোলাররা অবশ্য আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন আলোচিত নাহিদ রানাই। দিনের শুরুতেই জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারকে ফেরান এই পেসার। আউট করেছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকেও।
হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদও ছিলেন দুর্দান্ত। স্পিনার তাইজুল ইসলাম নিষ্প্রভ ছিলেন। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট। এসবের কল্যাণেই ৬৯ রানে প্রথম উইকেট হারানো জিম্বাবুয়েকে ২৭৩ রানে গুটিয়ে দেওয়া গেছে।
বাংলাদেশের ভালো বোলিংয়ের মধ্যেই কার্যকরী রান তুলে নিয়েছে আরভিনের দল। ব্রায়ান বেনেটের ফিফটির পর শন উইলিয়ামস ফিফটি পেয়েছেন। তিনি ৫৯ রানে মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হওয়ার পরও জিম্বাবুয়ে আরও ৮০ রান যোগ করেছে।
এতে কৃতিত্ব পাবেন জিম্বাবুয়ের লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরাও। নিয়াশো মায়াভোর ৩৫ রানের পর মুজারাবানির ১৬ ও রিচার্ড এনগারাভার ২৮ রান বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়েছে।
উইলিয়ামস থাকলে নিশ্চিতভাবে আরও বড় হতে পারত জিম্বাবুয়ের স্কোর। ৫৯ রানে ব্যাটিং করা উইলিয়ামসই বড় লিডের জন্য জিম্বাবুয়ের বড় ভরসা ছিলেন। মনযোগ না হারিয়ে ইনিংসটা টানতে পারলে বড় লিডের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহটাও হয়তো বড় হতো। ২০১৮ সালে এই সিলেটেই বাংলাদেশকে হারানোর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৮৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন উইলিয়ামস। তাই উইকেট ‘উপহার’ দেওয়ার জন্য উইলিয়ামসকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারে বাংলাদেশ।
সিলেটে এমন এক দিনেও প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের—মিরাজ ৫ উইকেট নিলেন, মুমিনুল বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১টি ক্যাচ ধরার রেকর্ড গড়লেন। ব্যক্তিগত এসব পারফরম্যান্সই এখনো আলোচনার বিষয়। সেটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও!
সংক্ষিপ্ত স্কোরবাংলাদেশ: ১৯১ ও ১৩ ওভারে ৫৭/১ (মাহমুদুল ২৮*, মুমিনুল ১৫*, সাদমান ৪; মুজারাবানি ১/২১, নিয়াউচি ০/১১, এনগারাভা ০/২০)।
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৮০.২ ওভারে ২৭৩ (উইলিয়ামস ৫৯, বেনেট ৫৭, মায়াভো ৩৫, এনগারাভা ২৮*; মিরাজ ৫/৫২, নাহিদ ৩/৭৪, খালেদ ১/৩০, হাসান ১/৫৫)।
* দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৫ রানে পিছিয়ে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
আমরণ অনশনে চবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে সোমবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দিনভর বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের পর বিকেল চারটা থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন বিভাগটির নয় শিক্ষার্থী।
তারা হলেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম; ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নূর ইকবাল সানি; ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শাহরিয়ার হাসান সোহেল; ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান ইয়ামিন, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান ইপা; ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তরিকুল ইসলাম মাহী ও মাহমুদুল ইসলাম মিনহাজ।
এর আগে সোমবার বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দুপুর ১২ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর এই আন্দোলন চলে। এসময় চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধনে যোগ দেন। পরে বিকেল চারটায় প্রেস ব্রিফিং এর পর আমরণ অনশনে বসেন নয় শিক্ষার্থী।
মানববন্ধনে চারুকলার শিক্ষার্থী আল মাশরুল ফাহিম বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল চলমান এপ্রিল মাস থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু করবো। কিন্ত আমরা এখনও মূল ক্যাম্পাসে আসতে পারিনি।’
ইনস্টিটিউটের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের দায়ী করে তিনি বলেন, 'চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে আনতে আমাদের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ভেটো দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফেরত আসলে তাদের অনৈতিক অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে বলে তারা ফেরত আসতে চাননা।'
আমরণ অনশন থেকে নুসরাত জাহান ইপা বলেন,‘যতক্ষণ পর্যন্ত জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে চারুকলা ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে না ততক্ষণ আমরা অনশন চালিয়ে যাবো।’
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান ও উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের যাত্রা ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক করে গঠন করা হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে এখন এর অবস্থান। আন্দোলনের মুখে ২০২৩ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ক্লাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও আন্দোলন নামেন তারা। গত ১২ ডিসেম্বর চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান। তবে এই প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।