জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ‘মানসিক ভুলের’ ধারা ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ। একের পর এক ভুলে ব্যাটিং বান্ধব সিলেটের উইকেটে প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে মেহেদী মিরাজের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়ে ২৭৩ রানে অলআউট হয়েছে। দারুণ শুরু করার পর তাদের ৮২ রানের লিডে আটকাতে পারাও যেন বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়: টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ব্যর্থ হন। সাদমান ইসলাম ১২ ও মাহমুদুল জয় ১৪ রান করে ফিরে যান। ৩২ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তিনে নামা মুমিনুল হক ও চারে নামা নাজমুল শান্ত সেট হয়ে ফিরে যান। শান্ত ৪০ রান করেন। মুমিনুল ৫৬ রানের ইনিংস খেলেন। পরের ব্যাটাররা উইকেট বিলিয়ে দেন। জাকের আলী ২৮ ও হাসান মাহমুদ ১৯ রান যোগ করেন।
মুজুরাবানি-মাসাকাদজার দাপট: বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দাপট দেখান জিম্বাবুয়ের বোলার ব্লেজিং মুজুরাবানি ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। তারা দু’জন তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি করে উইকেট দখল করেন নায়োচি ও মেধেভেরে।
জিম্বাবুয়ের দাপুটে শুরু: জিম্বাবুয়ে ওপেনিং জুটিতে ৬৯ রান যোগ করে। এর মধ্যে প্রথম দিন ৬৭ রানে কোন উইকেট হারায়নি তারা। দ্বিতীয় দিন ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ৫৭ করে আউট হন। শন উইলিয়ামস ৫৯ রান যোগ করেন। মেধেভেরে ২৪ ও উইকেটরক্ষক নায়াশা মায়োভি ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন। এনগ্রাভা ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন।
প্রথম সেশন রানার ও মিরাজের ফাইফার: বাংলাদেশ দলের বা হাতি স্পিনার মেহেদী মিরাজ ২০.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাটিং ব্যর্থতাকে কৌশলগত দুর্বলতা বললেন সালাউদ্দিন
বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে বোলিংয়ে, আর পরাজয় লেখা হয় ব্যাটিং ব্যর্থতায়। অনেক বছর ধরেই বোলিংনির্ভর দল বাংলাদেশ। বোলিং ইউনিট প্রতিপক্ষকে কম রানে অলআউট করলে ব্যাটাররা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলে ম্যাচ জেতান। তেমনি বোলারদের উজ্জীবিত করতে ভালো ব্যাটিং করাও জরুরি। বাংলাদেশ এই জায়গাতেই দুর্বল। টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০– কোথাও ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। টেস্টের ব্যাটিং যে একটু বেশিই অধারাবাহিক, সেটা বোঝা যায় পরিসংখ্যান দেখলে। শেষ ১৮ ইনিংসের ৯টিতেই ২০০ রান করতে পারেননি শান্তরা। সিলেট টেস্টে গতকাল জিম্বাবুয়ের কাছে ১৯১ রানে অলআউট হওয়ায় সংখ্যাটি দশে উন্নীত হলো।
ব্যাটিংয়ের কেন এ হাল– জানতে চাওয়া হলে জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, টেকটিক্যাল তথা কৌশলগত দুর্বলতার কারণে ইনিংসগুলো বড় করতে পারছেন না ব্যাটাররা। ক্রিকেটাররা এখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। যদিও মুশফিকুর রহিমদের এই চেষ্টার পরও কাটছে না ব্যাটিং ব্যর্থতা।
দেশ-বিদেশে ভালো করার পরিকল্পনা থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলছে বাংলাদেশ। সে জন্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিলেট টেস্টের উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া রাখা হয়েছে। নিজেদের কন্ডিশনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বড় ইনিংস আশা করা হচ্ছিল। অথচ নিজেদের ভুলে ব্যর্থ হয় ব্যাটিং। কোচ সালাউদ্দিনের মতে, ‘টেকনিক্যালি আমরা কিছু ভুল করেছি। হঠাৎ করে বাজে শট খেলেছি। যখনই কামব্যাক করছি, তখনই একটা সেট ব্যাটার আউট হয়ে গেছে। পুরোটাই আসলে মানসিক ব্যপার। আমি মনে করি ব্যাটারদের হয়তো রুটিন বা প্রক্রিয়া ভালো হয়নি। প্রতিটি বল কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সেই প্রক্রিয়ায় ওরা থাকেনি।’
এই রুটিন নিয়ে ব্যাটারদের সঙ্গে দ্রুত কাজ করতে চান সালাউদ্দিন, ‘এখানে আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। প্রতিটি বল মোকাবিলা করার আগে যেভাবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক করার কথা, সেটা করতে হবে। অন্য ফরম্যাটে আপনি একবারই সুযোগ পাবেন। টেস্ট ক্রিকেটে আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়। সেখানে ভালো করাটা অনেক বেশি জরুরি।’
ওপেনিং জুটিতে অনেক দিন ধরেই ভুগছে বাংলাদেশ। সাদমান ইসলাম এক ম্যাচে ভালো করলে পরের ম্যাচে ফ্লপ। বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়েই খেলাতে হচ্ছে মাহমুদুল হাসান জয়কে। মিডলঅর্ডারে মুশফিকুর রহিমের ফিফটি নেই ১১ ইনিংসে। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক সেট হয়ে ইনিংস বড় করতে পারছেন না। গতকাল যেমন ১২৮ বলে ৬৬ রানের জুটি গড়ে আউট হলেন দলকে বিপদে ফেলে।
কোচ সালাউদ্দিনের চোখেও ব্যাটিং ব্যর্থতার মূল কারণ সেট ব্যাটারদের উইকেট ছুড়ে দেওয়া, ‘শান্ত ও মুমিনুল সেট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভুল শট খেলে আউট হয়েছে। ভালো বোলারের বিরুদ্ধে তারা কঠিন সময় কাটিয়ে উঠেছিল। শান্তর শটটা মারার বল ছিল না। সেটা সে নিজেও স্বীকার করেছে। মিরাজকে এ লেভেলে আরও ভালো করতে হলে শর্ট বলে উন্নতি করতে হবে। নয়তো ওকে প্রতিপক্ষরা ওই জায়গাতেই বারবার অ্যাটাক করবে। মুশফিকও ভুল শটে আউট হয়েছে।’
এই ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর বোলিংটাও ভালো হয়নি। ফলে ব্যর্থতায় শেষ হয়েছে প্রথম দিন। সালাউদ্দিনের বিশ্বাস আজই ঘুরে দাঁড়াবেন শান্তরা। পেছন থেকেই ফিরবেন প্রবল শক্তি নিয়ে।