পলক বললেন, কারাগার থেকে শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে, উদ্ভট বলছেন তত্ত্বাবধায়ক
Published: 21st, April 2025 GMT
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক আইনজীবীদের কাছে দাবি করেছেন, কারাগার থেকে তাঁর দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে।
আইনজীবীর উদ্দেশে পলক বলেন, ‘আগামী শীতকাল পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে কিনা জানি না। কিন্তু আমার দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে। যদি সে পর্যন্ত থাকতে হয়, তাহলে আবার সোয়েটার জোগাড় করে নিতে হবে।’
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ও ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর বলছেন, জুনাইদ আহমেদ পলকের এসব কথা একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি আলোচনায় থাকার জন্য এসব বানোয়াট কথা বলছেন।
বিভিন্ন হত্যা মামলায় আজ সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনাইদ আহমেদ পলক, তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শুনানি শেষ হলে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, তাঁর মক্কেল কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁর শীতের দুটি সোয়েটার কারাগার থেকে হারিয়ে গেছে।
সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে জুনাইদ আহমেদ পলককে যখন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বারান্দায় আনা হয় তখন একজন সংবাদকর্মী তাঁর কাছে জানতে চান, ‘পলক ভাই, আপনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) গতকাল দুই হাত এক করে কি বোঝাতে চেয়েছেন?’এ সময় পলক হেসে ঘাড় দুদিকে ঘোরান।
কাঠগড়ায় নেওয়ার পর পলকের হেলমেট ও এক হাতের হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। পলকের ডান পাশে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তাঁর ডানহাতে পরানো ছিল হাতকড়া। এ সময় পলক তাঁর দুজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
পলক তাঁর আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিনের উদ্দেশে বলতে শুরু করেন, ‘আমাকে দু-এক দিনের মধ্যেই গাজীপুরের আদালতে তোলা হবে। তোমাদের সেখানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মামলার কাগজগুলো তুলে রেখো। নারায়ণগঞ্জের আদালতেও তোমরা যেও না। সেখানে অনেক বেশি সিনক্রিয়েট হয়।’
কারাগার থেকে পলকের সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনায় থাকার জন্য জুনাইদ আহমেদ পলক উদ্ভট সব দাবি করে থাকেন। এই সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য, এমন একটি উদ্ভট দাবি। কারাগার থেকে কোনো বন্দীর জিনিসপত্র হারানোর সুযোগ নেই।’
কারা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, একজন বন্দীকে যদি কারাগার থেকে কোনো কাপড়-চোপড় বাইরে নিয়ে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে কারাগারে সেই কাপড়চোপড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে কারারক্ষীরা তাঁর স্বজনদের কাছে কাপড় হস্তান্তর করেন।
এ ব্যাপারে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুনাইদ আহমেদ পলক, শাজাহান খানরা প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করছেন। বিতর্কিত করার জন্যই তাঁরা রাজাকার শব্দ উচ্চারণ করেছেন। পলক বলছেন, কারাগার থেকে সোয়েটার চুরি হয়ে গেছে। এগুলো বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা।’
এর আগে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁর মক্কেল কারাগারে ডিভিশনের সুযোগ পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে কারা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুনাইদ আহমেদ পলক আমার কারাগারের চতুর্থ তলায় থাকেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জেলকোডের বিধান অনুযায়ী তিনি প্রথম শ্রেণির একজন কারাবন্দী। প্রথম শ্রেণির কারাবন্দী যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, তিনিও ঠিক একই সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাঁর আইনজীবী তথ্যও সঠিক নয়।’
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে একই কাঠগড়ায় তখন আনা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে। গত ৮ এপ্রিল তুরিন আফরোজকে যখন আদালতে তোলা হয়েছিল, সেদিন নিজেই তাঁর শুনানি করেন। কোনো আইনজীবী ছিল না। আজও তাঁকে কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি। মিরপুর থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
শাজাহান খানকে আজ শাহবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শুনানির সময় তিনি কাঠগড়ায় কোনো কথা বলেননি।
আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু আদালত কক্ষে চুপচাপ ছিলেন। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে। সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে হেলমেট পরিয়ে রাখা হয়।তাঁরা আইনজীবী ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলেননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র আইনজ ব ম দ পলক পলক র বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আজহারের আপিল কার্যতালিকায় উঠছে আগামীকাল
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আপিল আগামীকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যদের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ সিদ্ধান্ত দেন। আপিল শুনানি করতে দিন ধার্যের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ সিদ্ধান্ত জানান।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ লিভ (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। সেই সঙ্গে পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। পরে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দেওয়া হয়। আপিল শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আজ আদালতে আরজি জানান আজহারুলের আইনজীবী।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধ: জামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ শুনানি মঙ্গলবার২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আদালতে আজহারুলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
পরে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিলের সারসংক্ষেপ এরই মধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। আগামীকাল আপিলটি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।’
এর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল।
এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনমৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আজহারের আপিল শুনবেন আপিল বিভাগ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি। এই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় মৃত্যুদণ্ড বহালের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউর পরিপ্রেক্ষিতে আজহারুলের করা আপিলের ওপর শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। আজহারুল বর্তমানে কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুনজামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ শুনানি শুরু, আগামীকাল পরবর্তী শুনানি২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫