চট্টগ্রামের রাউজানে গত শনিবার রাতে একটি বাসায় ভাত খাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করা হয় প্রবাসফেরত যুবদলকর্মী মানিক আবদুল্লাহকে। ১৫ বছর আগে তাঁর বড় ভাই রাশেদুল ইসলাম ওরফে খোকনকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছিলেন সন্ত্রাসীরা। যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা রাশেদুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে। তবে তাঁর ভাই মানিক আবদুল্লাহকে খুনে বিএনপিরই একটি অংশ জড়িত বলে অভিযোগ পরিবারের।

রাশেদুল ইসলামকে হত্যার দেড় দশকেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। মানিক আবদুল্লাহকে খুনের ঘটনায়ও এখন পর্যন্ত মামলা করেনি পরিবার। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন। নিহত ব্যক্তিরা চট্টগ্রামের রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরীব উল্লাহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাশেদুল ইসলাম যুবদলের রাজনীতি সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যেই ২০০৩ সালের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান তিনি। ২০০৮ সালে দেশে ফিরে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা হয়। মামলাটিতে তিনি এক বছর কারাগারে ছিলেন। ২০১০ সালের ২৬ মার্চ রাতে স্থানীয় নোয়াপাড়া পথেরহাট বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর কাপ্তাই সড়কের পাশে লাশ ফেলে রেখে চলে যান সন্ত্রাসীরা। নিহত হওয়ার সময় রাশেদুলের বয়স ছিল ৩৫ বছর। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।

রাশেদুলের ছোট ভাই মানিক আবদুল্লাহও প্রায় পাঁচ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই মাস পর তিনি দেশে ফিরে যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। গত শনিবার রাতে গ্রামের ভান্ডারী কলোনির একটি বাসায় ভাত খাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন। পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, মানিক আবদুল্লাহ দেশে ফেরার পর স্ত্রী, ১০ বছর বয়সী ১ ছেলে ও ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। স্ত্রী-সন্তান ছাড়া গ্রামে এলে ভান্ডারী কলোনির ওই বাসাটিতে ভাত খেতেন। শনিবার রাতেও আরেক যুবদলকর্মীসহ তিনি ওই বাসাটিতে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় বাসাটিতে ঢুকে ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী গুলি করে তাঁকে হত্যা করেন। তাঁর শরীরের তিনটি স্থানে গুলি লাগে। হত্যার পর সন্ত্রাসীরা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে চলে যান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মানিক আবদুল্লাহ দেশে ফিরে বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত যুবদলকর্মী ও একই পাড়ার বাসিন্দা আরফাত মামুনের সঙ্গে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কিছুদিন পর তাঁর সঙ্গে আরফাত মামুনের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। দ্বন্দ্বের জেরে মানিক পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মুহাম্মদ জসিম উদ্দিনের পক্ষে যোগ দেন। এর কিছুদিন পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আরফাত মামুন, যা নিয়ে এলাকায় আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয় মানিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে। বিষয়টি নিয়ে মানিকের ওপর মামুনের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত ছিলেন।

গতকাল রোববার ময়নাতদন্ত শেষে নিহত মানিক আবদুল্লাহর লাশ তাঁর বাড়িতে নেওয়া হয়। এ সময় লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা পাকিজা আকতার। তিনি মানিকের দুই শিশুসন্তানের প্রসঙ্গ টেনে বিলাপ করতে থাকেন। পাকিজা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে মানিক কোনো সন্ত্রাসী নন, প্রবাসী ছিলেন। এরপরও মানিককে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। ১৫ বছর আগে মানিকের বড় ভাইকেও খুন করেছেন সন্ত্রাসীরা। দুটি হত্যারই বিচার দাবি করেন পাকিজা আকতার।

নিহত ব্যক্তিদের ছোট ভাই সাকিল আহমেদ মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫ বছরের ব্যবধানে দুই ভাইকে হারিয়েছি। রাশেদুল ভাইকে খুন করেছেন আওয়ামী লীগের লোকজন, এখন মানিক ভাই নিজের দলের মানুষের হাতেই খুন হলেন। আমরা দুটি খুনেরই বিচার চাই।’

মানিক আবদুল্লাহর লাশ ঘরে আনার পর স্বজনদের আহজারী। গতকাল রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের বাড়িতে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন ক আবদ ল ল হ র শ দ ল ইসল ম র জন ত ত ব এনপ র ১৫ বছর পর ব র য বদল বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

ভাত খাওয়ার সময় যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা

চট্টগ্রামের রাউজানে এক যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরিব উল্লাহপাড়া গ্রামের ভান্ডারী কলোনির একটি বাসায় ভাত খাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় একই দলের প্রতিপক্ষের লোকজন জড়িত বলে সন্দেহ নিহত ব্যক্তির পরিবারের।

নিহত যুবদলকর্মীর নাম মুহাম্মদ মানিক আবদুল্লাহ (৩৬)। তিনি গরিব উল্লাহপাড়া গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে। দীর্ঘদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে তিনি দেশে আসেন। স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মানিক আবদুল্লাহ। এলাকার বিভিন্ন স্থানে তিনি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবিসহ তোরণ নির্মাণ এবং ব্যানার টাঙিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।

পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, মানিক আবদুল্লাহ দেশে ফেরার পর স্ত্রী, ১০ বছর বয়সী ১ ছেলে ও ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। স্ত্রী-সন্তান ছাড়া গ্রামে এলে ভান্ডারী কলোনির ওই বাসাটিতে ভাত খেতেন। গতকাল রাতেও আরেক যুবদলকর্মীসহ তিনি ওই বাসাটিতে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় বাসাটিতে ঢুকে ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী গুলি করে তাঁকে হত্যা করেন। তাঁর শরীরের তিনটি স্থানে গুলি লাগে। হত্যার পর সন্ত্রাসীরা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে চলে যান।

নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই সাকিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, একই দলের প্রতিপক্ষের কিছু নেতা-কর্মী তাঁর ভাই মানিক আবদুল্লাহর ওপর তিন মাস আগেও হামলা করেছিলেন। ভাইয়ের ওপর ক্ষোভ থেকে তাঁর কোচিং সেন্টার ও তাঁর বোনের বাড়িতেও হামলা করা হয়। ওই সন্ত্রাসীরাই তাঁর ভাইকে ভাত খাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে বিদেশে থাকতে হয়েছে আমার ভাইকে। দেশে ফেরার পর দলের প্রতিপক্ষের হাতে জীবন দিতে হলো। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত যুবদলকর্মীর মাথা, ঊরু ও পায়ে গুলি করা হয়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।

জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, একটি বাসায় দুজন রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, এ সময় গুলি করে মানিককে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যজনের কোনো খোঁজ মেলেনি। সন্ত্রাসীরা তাঁকে অপহরণ করেছেন, নাকি তিনি পালিয়ে গেছেন, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ওসি আরও বলেন, মানিককে কিছু সন্ত্রাসী হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন, এমন খবর তাঁরা আগে জেনেছেন। এ বিষয়ে তাঁকেও সতর্ক করা হয়েছিল। সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান ওসি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভাত খাওয়ার সময় যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা