আলোচিত মডেল মেঘনা আলমের সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য তলব করা হয়েছে। আজ সোমবার সব ব্যাংকের কাছে এই তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

বিএফআইইউয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মেঘনা আলমের ব্যক্তিগত তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে।

মেঘনা আলমকে ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে ১৫ এপ্রিল মেঘনা, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ধানমন্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম।

সেই মামলায় বলা হয়েছে, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা জনৈক কূটনীতিকের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬০ কোটি টাকা) অর্থ দাবি করেছেন। তবে মামলার এজাহারে ওই কূটনীতিকের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯ মার্চ ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে মেঘনা, সমিরসহ কয়েক ব্যক্তি অংশ নেন। এতে কূটনীতিকের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবি ও আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। এই গোপন বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল প্রতারণা করে অর্থ আদায় করা। আসামিদের এই কার্যক্রমের কারণে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে ভাটারা থানায় করা আরেকটি চাঁদাবাজির মামলায় ১১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন ব্যবসায়ী সমির।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পলক বললেন, কারাগার থেকে শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে, উদ্ভট বলছেন তত্ত্বাবধায়ক  

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক আইনজীবীদের কাছে দাবি করেছেন, কারাগার থেকে তাঁর দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে।

আইনজীবীর উদ্দেশে পলক বলেন, ‘আগামী শীতকাল পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে কিনা জানি না। কিন্তু আমার দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে। যদি সে পর্যন্ত থাকতে হয়, তাহলে আবার সোয়েটার জোগাড় করে নিতে হবে।’

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ও ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর বলছেন, জুনাইদ আহমেদ পলকের এসব কথা একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি আলোচনায় থাকার জন্য এসব বানোয়াট কথা বলছেন।

বিভিন্ন হত্যা মামলায় আজ সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনাইদ আহমেদ পলক, তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শুনানি শেষ হলে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, তাঁর মক্কেল কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁর শীতের দুটি সোয়েটার কারাগার থেকে হারিয়ে গেছে।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে জুনাইদ আহমেদ পলককে যখন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বারান্দায় আনা হয় তখন একজন সংবাদকর্মী তাঁর কাছে জানতে চান, ‘পলক ভাই, আপনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) গতকাল দুই হাত এক করে কি বোঝাতে চেয়েছেন?’এ সময় পলক হেসে ঘাড় দুদিকে ঘোরান।

কাঠগড়ায় নেওয়ার পর পলকের হেলমেট ও এক হাতের হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। পলকের ডান পাশে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তাঁর ডানহাতে পরানো ছিল হাতকড়া। এ সময় পলক তাঁর দুজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।

পলক তাঁর আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিনের উদ্দেশে বলতে শুরু করেন, ‘আমাকে দু-এক দিনের মধ্যেই গাজীপুরের আদালতে তোলা হবে। তোমাদের সেখানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মামলার  কাগজগুলো তুলে রেখো। নারায়ণগঞ্জের আদালতেও তোমরা যেও না। সেখানে অনেক বেশি সিনক্রিয়েট হয়।’

কারাগার থেকে পলকের সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনায় থাকার জন্য জুনাইদ আহমেদ পলক উদ্ভট সব দাবি করে থাকেন। এই সোয়েটার  হারিয়ে যাওয়ার তথ্য, এমন একটি উদ্ভট দাবি। কারাগার থেকে কোনো বন্দীর জিনিসপত্র হারানোর সুযোগ নেই।’

কারা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, একজন বন্দীকে যদি কারাগার থেকে কোনো কাপড়-চোপড় বাইরে নিয়ে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে কারাগারে সেই কাপড়চোপড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।  পরে কারারক্ষীরা তাঁর স্বজনদের কাছে কাপড় হস্তান্তর করেন।

এ ব্যাপারে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ  আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুনাইদ আহমেদ পলক, শাজাহান খানরা প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করছেন। বিতর্কিত করার জন্যই তাঁরা রাজাকার শব্দ উচ্চারণ করেছেন। পলক বলছেন, কারাগার থেকে সোয়েটার চুরি হয়ে গেছে। এগুলো বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা।’

এর আগে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁর মক্কেল কারাগারে ডিভিশনের সুযোগ পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে কারা তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুনাইদ আহমেদ পলক আমার কারাগারের চতুর্থ তলায় থাকেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জেলকোডের বিধান অনুযায়ী তিনি প্রথম শ্রেণির একজন কারাবন্দী। প্রথম শ্রেণির কারাবন্দী যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, তিনিও ঠিক একই সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাঁর আইনজীবী তথ্যও সঠিক নয়।’

সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে  একই কাঠগড়ায় তখন আনা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে।  গত ৮ এপ্রিল তুরিন আফরোজকে যখন আদালতে তোলা হয়েছিল, সেদিন নিজেই তাঁর শুনানি করেন। কোনো আইনজীবী ছিল না। আজও তাঁকে কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি। মিরপুর থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

শাজাহান খানকে আজ শাহবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শুনানির সময় তিনি কাঠগড়ায় কোনো কথা বলেননি।

আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু আদালত কক্ষে চুপচাপ ছিলেন। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে  আদালতে তোলা হয়েছে। সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে হেলমেট পরিয়ে রাখা হয়।তাঁরা আইনজীবী ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ