‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বাংলাদেশে মাসাকাদজার পছন্দ ‘বাটার চিকেন’
Published: 21st, April 2025 GMT
জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ একসময় মুখোমুখি হতো নিয়মিতই। ক্রিকেটীয় বন্ধুত্বটা তাই আছেই। জিম্বাবুয়ের অনেক ক্রিকেটারদের জন্যও বাংলাদেশ খুবই চেনা প্রতিপক্ষ। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার জন্য তো নাকি বাংলাদেশ দ্বিতীয় ঘরই।
বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে তিনি আছেন সিলেটে। কাল প্রথম দিনে ১০ ওভার বল করে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। কেমন লাগে বাংলাদেশে?
আজ দ্বিতীয় দিন শুরুর আগে সম্প্রচারকারী টেলিভশনের মুখোমুখি হয়ে মাসাকাদজা বলেছেন, ‘নিশ্চিতভাবেই (বাংলাদেশে ফিরতে ভালো লাগে)। আমার মনে হয়, এটা আমার সেকেন্ড হোম।’
ভালো লাগার একটা ক্রিকেটীয় কারণও উল্লেখ করেছেন মাসাকাদজা, ‘বিশেষ করে স্পিনার হিসেবে এখানকার কন্ডিশন বেশ মানানসই। স্পিনাররা এখানে সুবিধা পেয়ে থাকে।’ ক্রিকেট ছাড়াও আরও একটা কারণের কথা বলেছেন মাসাকাদজা, ‘এখানের বাটার চিকেনও সুস্বাদু।’
২০১৮ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্টে অভিষেক হয়েছিল ওয়েলিংটন মাসাকাদজার।সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে বেশ স্বস্তিতে রেখেছেন বোলাররা। শুরুতে পেসাররা দাপট দেখালেও পরে উইকেট নিয়েছেন মাসাকাদজা ও ওয়েসলি মাধেভেরেও।
আরও পড়ুননাহিদ প্রমাণ করলেন তিনি ‘মেশিনের চেয়ে ভালো’৩৪ মিনিট আগেকীভাবে সফল হলেন, সেই কৌশল জানাতে গিয়ে মাসাকাদজা বলেন, ‘আমরা এই উইকেটে সঠিক লাইনে বলটা করতে চেয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম, এখানে সিমারদের জন্য কিছু সাহায্য থাকবে। সে রকমই হয়েছে। সেই সঙ্গে আমরা স্পিনাররা কিছু উইকেট পেয়েছি, যা নিশ্চিতভাবেই দারুণ টেস্টের বাকি সময়টার জন্য দারুণ আভাস।’
২০১৮ সালে এই সিলেটেই জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মাসাকাদজার। ওই ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ, মাসাকাদজা পেয়েছিলেন ২ উইকেট। মাসাকাদজার অভিষেক রঙিন হয়েছিল জয়ে।
এখন আবার সিলেটে ফিরে ওই স্মৃতি রোমন্থন করেছেন, ‘আমার টেস্ট অভিষেক এখানে হয়েছিল। যেই প্রান্ত থেকে বোলিং শুরু করেছিলাম, সেখান থেকেই গতকাল করেছিলাম। কয়েক বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। এখন ফিরে এসে ভালো কিছু করেছি, এটাই ভালো লাগছে।’
আরও পড়ুনজীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালাতে হয়েছিল—দাবি হাথুরুসিংহের১৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য হয় ছ ল প রথম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে রক্তের দাগ
ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি সংক্রান্ত সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক খবরগুলো বড় বেদনার। স্বাভাবিক সময়েই অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। শহীদ রওশনের মায়ের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। ২০১৮ সালের সেই জুলাইয়ের সকালে তিনি তাঁর ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন স্বপ্ন নিয়ে। ফিরে পেয়েছিলেন রক্তাক্ত দেহ। একটি বেপরোয়া বাসের চাকায় শুধু একটি প্রাণই নয়, একটি পরিবারের সব স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়কে গড়ে ২২ জন প্রাণ হারান। প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একটি পরিবারের অশ্রু আর অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গত দশকে আমরা হারিয়েছি ৭৫ হাজার প্রাণ, যা একটি ছোট শহরের জনসংখ্যার সমান।
আমাদের সড়কগুলো যেন মৃত্যুর মিছিল চলার উন্মুক্ত প্রান্তর। প্রতি ১০০টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৪০ শতাংশ চালক বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালায়। এর পেছনে রয়েছে জটিল নেটওয়ার্ক– দুর্নীতি, অদক্ষতা। সর্বোপরি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়।
২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদ। কিন্তু ছয় বছর পর আমরা কতটুকু এগিয়েছি? ডিজিটাল লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু হয়েছে, কিন্তু অনেক আবেদনকারী এখনও
দালালের কারণে হয়রানির শিকার। আইন হয়েছে, কিন্তু প্রয়োগ দুর্বল।
আমাদের সমস্যা শুধু প্রযুক্তিগত নয়। এটি মূলত সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয়ের ছাপ। আমরা যেখানে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছি, সেখানে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ পিছিয়ে পড়ছে।
সরকারের নতুন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন সামাজিক বিবেককে জাগ্রত করা। প্রত্যেক চালক যেন বুঝতে পারে, তার হাতে শুধু স্টিয়ারিং নয়, অসংখ্য প্রাণের দায়িত্বও রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে গাড়ি পরিদর্শন– সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু সড়ক নয়, আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত যানবাহন ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।
২০১৮ সালের সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছিল– পরিবর্তন সম্ভব। আজ আমাদের প্রয়োজন সেই চেতনাকে আবার জাগিয়ে তোলা। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য, প্রতিটি দুর্ঘটনা অপ্রয়োজনীয়। রওশনের মায়ের মতো চোখের জল যেন আর কোনো মাকে ফেলতে না হয়। সড়কগুলো যেন আর না হয় কবরস্থান। এটি শুধু একটি স্বপ্ন নয়, অধিকার। আসুন,সবাই মিলে গড়ে তুলি এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হবে অতীতে ঘটে যাওয়া করুণ ইতিহাস, যা বর্তমানে নেই।
মো. রাইসুল ইসলাম: স্বেচ্ছাসেবক, চট্টগ্রাম