টাঙ্গাইলে এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কেন্দ্রসচিবকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ
Published: 21st, April 2025 GMT
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে উঠেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
রবিবার (২০ এপ্রিল) টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহানের ছেলে আব্দুল ওয়ারেছ।
এর আগে, ভূঞাপুর ফাজিল মাদ্রাসায় এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ওই কেন্দ্রের সচিব অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহানকে শারীরিক লাঞ্ছিত করেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, সম্প্রতি জমিয়াতুল মোদারেছিন (মাদ্রাসার শিক্ষকদের সংগঠন) উপজেলা শাখার সভাপতি আফছার উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুলসহ সংগঠনের অন্যান্যরা সহায়ক পাঠ্য বইয়ের একটি কোম্পানি থেকে নেওয়া অর্থ আত্মসাৎ করলে অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহান এর প্রতিবাদ করেন।
এ ক্ষোভে ১৬ মার্চ জামিয়াতুল সংগঠনের নেতারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ এনে চলমান এসএসসি দাখিল পরীক্ষার ভূঞাপুর ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রসচিবের দায়িত্বের জন্য জমিয়াতুল সংগঠনের সভাপতি আফছার উদ্দিনকে মনোনয়ন করে মাদ্রাসা বোর্ড।
২৪ মার্চ এ মনোনয়নের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ৮ এপ্রিল কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব বহালের রায় পান অধ্যক্ষ আব্দুছ ছোবহান। ৯ এপ্রিল রায়ের কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রদান করলে কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিন রাতে উপজেলা সহকারী কমিশনার মাদ্রাসায় গিয়ে জানান, আফছার উদ্দিনই কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন এবং আপনার (আব্দুস ছোবহান) বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব।
কিন্তু, উপজেলা সহকারী কমিশনারের এমন নির্দেশনা অমান্য করে কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুস ছোবহান। পরীক্ষা চলাকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব অবহেলা ও প্রশ্নপত্র কম থাকার অভিযোগে অধ্যক্ষসহ ৬ জনকে আটক করেন। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।
অভিযোগ আরো বলা হয়, এ ঘটনার দিন কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহানের ওপর দায় চাপিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.
অধ্যক্ষ আব্দুস ছোবহানের ছেলে আব্দুল ওয়ারেছ বলেন, ‘‘বাবার সঙ্গে কথা বলতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। এসিল্যান্ড শুধু তাকে শারীরিক নির্যাতনই করেননি বরং তাকে অপমানও করেছেন।’’
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘যেহেতু ডিসি স্যারের কাছে অভিযোগ করেছে। কতটুকু সত্য তদন্ত করে তারা দেখুক।’’
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সঞ্চয় কুমার মহন্ত বলেন, ‘‘এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এরকম একটা অভিযোগ পেয়েছি। এটা নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/কাওছার/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন দ রসচ ব র দ য় ত ব পর ক ষ স গঠন সহক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হামাগুড়ি দিয়ে কেন্দ্রে এসে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ইউনুস
এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে পরীক্ষার্থীদের ভিড়। ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদাভাবে চোখে পড়ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরকে। একটি ইজিবাইক থেকে নামার পর কিশোরটি হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করে কেন্দ্রে। গায়ের ইউনিফর্ম দেখে বোঝা যায় সেও পরীক্ষার্থীদের একজন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা মেলে মো. ইউনুস নামের এই কিশোরের। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে ইউনুস। কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আবদুস শুক্কুর ও নুরুজ্জামান দম্পতির সন্তান সে। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে সে পঞ্চম।
পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থী মো. ইউনুসের সঙ্গে কথা হয়। সে বলে, ‘আল্লাহ আমাকে যেভাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তাতে আমি সন্তুষ্ট। বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে খুবই কষ্ট হতো। সহপাঠী বন্ধুরা সাহায্য করত নানা সময়। ক্লাসে গিয়ে বসার সময়ও বন্ধুরা আমাকে পছন্দমতো জায়গায় বসতে দিত। আমি লেখাপড়া করে ভালো একজন ব্যবসায়ী হতে চাই।’ সে আরও বলে, ‘আমার বাবা নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। আটজনের সংসার বাবার একার রোজগারে চলে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে অবশ্যই আমার শিক্ষার এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
ইউনুসের মা নুরুজ্জামান বলেন, জন্মগতভাবে ইউনুস প্রতিবন্ধী। দুই হাঁটুর পাশাপাশি দুই হাতের ওপর ভর করে সে চলাফেরা করে। জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ থাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। সে প্রতিনিয়ত লেখাপড়া করে যাচ্ছে।
শুধু ইউনুস নয়, আবদুল হামিদ নামের আরও এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ওই পরীক্ষার্থী ইউনুসের খালাতো ভাই। কেন্দ্রের সচিব ও এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাব্বির আহমদ বলেন, দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীই দুটি কক্ষে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্রের পরিদর্শকসহ সবাই তাদের প্রতি খেয়াল রাখছেন।
কেন্দ্রের পরিদর্শক সৈয়দা তাহমিনা খানম বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তারা ভালোভাবেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। খাতা জমা দেওয়ার সময় রোল নম্বর ঠিকমতো লিখেছে কি না, যাচাই-বাছাই করা হয়।
মো. ইউনুস ও আবদুল হামিদের বিষয়ে টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ইউনুস ও হামিদ পরস্পর খালাতো ভাই। দুজন শিক্ষার্থী খুবই ভদ্র। তাদের পড়াশোনা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে, এমনটা আশা করি।’