অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত নারী বিষয়ক সুপারিশমালা অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করার দা‌বি জা‌নি‌য়ে‌ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

রবিবার (১৫ এপ্রিল) এক বিবৃ‌তি‌তে দল‌টির সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা পবিত্র কুরআনের বিধানের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের অস্তিত্বের ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত। এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে দেশের ধর্মীয় ভারসাম্য, পারিবারিক কাঠামো ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।”

তিনি অবিলম্বে অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত নারীবিষয়ক সুপারিশমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,  “নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, তা ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়। কমিশনের সুপারিশমালার ২৫ পৃষ্ঠায় মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করে নারী-পুরুষকে সমান সম্পত্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।”

“আমরা মনে করি, বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন মূলত আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত উত্তরাধিকার বিধান দ্বারা রচিত। এটিকে বাতিল করার অর্থ সরাসরি কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এটি শুধু শরীয়তের অবমাননাই নয়, বরং মুসলিম পরিচয়ের মূলে কুঠারাঘাত।”

তিনি বলেন, “পবিত্র কুরআনে যিনাকে মহাপাপ ও ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ প্রদত্ত সুপারিশমালায় যিনাকে উৎসাহিত এবং বিবাহকে নিরুৎসাহিত করে সরাসরি পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

আমরা মনে করি এই ধরনের প্রস্তাবনা সমাজে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। সমাজকে অস্থিতিশীল করার সর্বনাশা চক্রান্তে কারা কলকাঠি নাড়ছে এবং মুসলিম পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন নিয়ে কারা ছিনিমিনি খেলছে জাতির সামনে অতি দ্রুত তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।”

“কমিশনের সুপারিশমালার ৯ম পৃষ্ঠায় সকল ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে; যা বাস্তবায়ন করা হলে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাইকে ধর্মীয় পারিবারিক বিধান থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি ধর্মহীন কাঠামোয় আসতে বাধ্য করা হবে।” 

এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন ব‌লে ম‌নে ক‌রেন তি‌নি।

জামায়াত সে‌ক্রেটা‌রী ব‌লেন, “ক‌মিশ‌নের প্রস্তাবনা ৯ম পৃষ্ঠায় আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘ প্রণীত CEDAW সনদের অধীনে বিবাহ ও পারিবারিক ক্ষেত্রে আইনের বাস্তবায়ন করা দরকার। CEDAW-এর অনেক শর্ত সরাসরি ইসলামবিরোধী; যেখানে বিয়েকে শুধু একটি সামাজিক চুক্তি হিসেবে দেখা হয় এবং ইসলামী নিকাহ ও অভিভাবকত্বের মতো মৌলিক ধারণাগুলোর বিরোধিতা করা হয়।” 

তিনি আরও বলেন, “উক্ত সুপারিশমালার ৯ম পৃষ্ঠার আরেক জায়গায়, নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকাকে অভিন্নভাবে দেখার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন, ইসলাম নারী-পুরুষের মর্যাদা সমান মনে করলেও, তাদের ভূমিকায় প্রাকৃতিক পার্থক্যকে স্বীকার করে। তাই ‘নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকাকে অভিন্নভাবে দেখার’ প্রস্তাবটি ইসলামী সমাজব্যবস্থাকে বিকৃত করার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়।”

এমতাবস্থায় দেশের বিজ্ঞ আলেম সমাজসহ আমরা মনে করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপরোক্ত বিষয়াদি সুবিবেচনায় নিয়ে জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন এবং দেশের সকল ধর্মের নাগরিকদের ধর্মীয় বিধান সমুন্নত রেখে এ অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত সুপারিশমালা অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করবেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র প রস ত ব ব ষয়ক স ইসল ম ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত ঐক্যবদ্ধ থাকবে

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াত যেভাবে গত ১৬ বছর নির্যাতন সহ্য করে আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনাকে উৎখাত করেছে, সেভাবেই সামনে যে কোনো জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ১৫ বছর আমাদের নেতাদের হত্যা করে হাসিনা ও তাঁর সহযোগীরা দেশকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন। তাদের বিচার হতে হবে। বিচার দৃশ্যমান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে এবং জামায়াতে ইসলামী সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জানান, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরের একটি ডেডলাইন ইতোমধ্যে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময়ের মধ্যে সব সংস্কার করে, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

এ ছাড়া গতকাল কুমিল্লার লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ও লাকসাম পৌরসভার কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেন গোলাম পরওয়ার। এ সময় তিনি বলেন, দেশে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর মতো নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ন্যূনতম সংস্কার ও গণহত্যার দায়ে সহযোগীসহ শেখ হাসিনার বিচার দ্রুত দৃশ্যমান করুন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের অবস্থানের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। কিন্তু আমিরে জামায়াত বৃহস্পতিবারও প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনি ২০২৬ সালের জুন অথবা চলতি বছরের ডিসেম্বরের যে সময়সীমা দিয়েছেন, তার মধ্যে নির্বাচন করুন। এ সময়ের মধ্যে সংস্কার ও মানবতাবিরোধীদের বিচার করুন। আমরা নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত রয়েছি।’

লাকসাম পৌর জামায়াতের আমির জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারির সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মা’ছুম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমির মুহাম্মদ শাহজাহান, কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর পিপি মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন প্রমুখ।
পরে গোলাম পরওয়ার আগামী সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৮ আসনে অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল, কুমিল্লা-৯ আসনে ড. এ কে এম সৈয়দ সারোয়ার সিদ্দিকী, কুমিল্লা-১১ আসনে ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, কুমিল্লা-১০ আসনে মাওলানা ইয়াসিন আরাফাতকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী করার জন্য নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীবিষয়ক সুপারিশমালা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জামায়াতের
  • যাদের নির্বাচন থেকে বাদ দেবেন, তারা কী ঘরে বসে আঙুল চুষবে
  • ‘সংস্কারের ন্যূনতম শর্ত পূরণ হলে জামায়াত নির্বাচনের বিবেচনা করবে’
  • জাতীয় ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত ঐক্যবদ্ধ থাকবে