প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে গুরুত্ব পাবে কী কী
Published: 21st, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন–২০২৫’–এ যোগ দিতে আজ সোমবার কাতার যাচ্ছেন। চার দিনের এ সফরের সময় তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল–থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। যেখানে ব্যবসা ও জ্বালানি সহযোগিতার পাশাপাশি ভিসা উন্মুক্ত করা এবং জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেতে পারে।
দোহা থেকে কূটনৈতিক একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, ২৩ বা ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ও কাতারের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের প্রস্ততি চলছে।
আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কাতার থেকে এলএনজি সরবরাহের যে সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হতে পারে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য পর্যটনসহ নানা খাতে ভিসা চালু করা এবং ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার বিষয়গুলো আসতে পারে।কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো.নজরুল ইসলাম
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারকে উদ্ধৃত করে বাসস জানায়, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে এ সফরে যাচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন। এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।
ওই সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হলে কাতারের আমির সংযুক্তি, পর্যটনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫আর্থনার ওয়েবসাইটে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী, দোহায় ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এবারের আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’। কাতার ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আর্থনা সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল ফিউচার এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক। দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনে কাতারের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও অনন্য প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে। শীর্ষ সম্মেলন আলোচনার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করবে, যেখানে প্রথাগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবনের সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচন এবং এক সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনের উপায়গুলো উঠে আসবে। এই শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করবেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের অগ্রাধিকারঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, দোহায় ২৩ বা ২৪ এপ্রিল অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির বৈঠক হতে পারে। ওই বৈঠকে গত বছরের এপ্রিলে কাতারের আমিরের ঢাকা সফরের সময় নেওয়া সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, জ্বালানি, বিশেষত এলএনজি রপ্তানি, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা চালু করা এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার মতো বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে।
২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পর দুই দেশ পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল। ওই চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়বস্তুগুলো ছিল ব্যবসা, বাণিজ্য, সংযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ওই সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হলে কাতারের আমির সংযুক্তি, পর্যটনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
কাতার থেকে প্রতিবছর ১৫ লাখ মেট্রিক টন এলএনজি আমদানির জন্য ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোবাংলা ও কাতার গ্যাসের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে নতুন এ চুক্তি কার্যকর হবে।বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের অন্যতম উৎস কাতার। কাতার এখন যে এলএনজি বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করে, সেগুলো জাহাজে করে বন্দরে বহির্নোঙরে এনে সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এলএনজি সরবরাহের জন্য তাদের টার্মিনাল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সমুদ্রবন্দর অবকাঠামো কাজে লাগিয়ে কাতার এলএনজি সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কাতার থেকে প্রতিবছর ১৫ লাখ মেট্রিক টন এলএনজি আমদানির জন্য ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোবাংলা ও কাতার গ্যাসের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে নতুন এ চুক্তি কার্যকর হবে।
জানতে চাইলে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাতারের আমিরের বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। পরিকল্পিত ওই বৈঠকে ২০২৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কাতার থেকে এলএনজি সরবরাহের যে সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হতে পারে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য পর্যটনসহ নানা খাতে ভিসা চালু করা এবং ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার বিষয়গুলো আসতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ খ ত ম ম ব ন হ ম দ আল থ ন ক ত র র আম র এর প শ প শ ২০২৪ স ল সরবর হ র র প রস ত ব ষয়গ ল সহ ন ন র জন য ব যবস র সফর আখত র
এছাড়াও পড়ুন:
চীন থেকে ফেরত গেল বোয়িংয়ের আরও একটি উড়োজাহাজ
ট্রাম্পের কর আগ্রাসনের শিকার হলো বোয়িংয়ের আরও একটি এয়ারক্রাফট। চীনের জন্য নির্মিত দ্বিতীয় বোয়িং উড়োজাহাজটিও নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ ও চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে এয়ারক্রাফটিকে ফিরতে হলো বলে মত বিশ্লেষকদের। খবর রয়টার্সের।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট এয়ারনাভ রাডারের তথ্য বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার সাংহাইয়ের কাছে বোয়িংয়ের ঝোশান কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার পর ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ মডেলের উড়োজাহাজটি মার্কিন ভূখণ্ডের গুয়ামে অবতরণ করে।
চীনা আকাশসেবা প্রতিষ্ঠান জিয়ামেন এয়ারের জন্য যাত্রীবাহী এই উড়োজাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
এর আগে গতকাল রোববার চীনের জিয়ামেন এয়ারলাইন্সের জন্য নির্মিত ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের একটি উড়োজাহাজ ঝোশান থেকে ফিরতি যাত্রা করে এবং সিয়াটলের বোয়িং ফিল্ডে অবতরণ করে।
তবে কোন পক্ষ দুটির সিদ্ধান্তে এয়ারক্রাফট দুটি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেছে তা স্পষ্ট করেনি কেউ।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনা ক্রেতারা ক্রয়াদেশ অনুসারে ডেলিভারি না নিলেও মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সকে বিকল্প ক্রেতা হিসেবে পেতে পারে বোয়িং। এর আগে এই ধরনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে মার্কিন প্রস্তুতকারকের কাছে আগ্রহের কথাও জানিয়েছে মালয়েশিয়ার আকাশসেবা প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি মাসে চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এর জবাবে চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন পণ্যে আরোপ করা হয় ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক।
উড়োজাহাজ পরিবহনবিষয়ক পরামর্শদাতা সংস্থা আইবিএ জানিয়েছে, ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের নতুন একটি উড়োজাহাজের বাজারমূল্য প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর শুল্ক চীনা উড়োজাহাজ সংস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো।
তবে বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে জিয়ামিন এয়ারও কোনো জবাব দেয়নি। আকাশযানশিল্পটি কয়েক দশক ধরে শুল্কমুক্ত অবস্থায় ছিল। পাল্টাপাল্টি শুল্কের জেরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন এটা নতুন উড়োজাহাজ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার সর্বশেষ লক্ষণ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক পরিবর্তন নিয়ে বিভ্রান্তি অনেক ক্ষেত্রে উড়োজাহাজ সরবরাহকে স্থবির করে দিতে পারে। বেশ কিছু উড়োজাহাজ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) বলেছেন, তাঁরা বাড়তি শুল্ক দেওয়ার বদলে বরং আপাতত উড়োজাহাজ সরবরাহ স্থগিত রাখবেন।