৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 21st, April 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির অধীনে গতকাল রোববার পর্যন্ত ৩১ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চত হওয়া গেছে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩০ পুরুষ ও একজন নারী। অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় হেরে যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং বিভিন্ন মামলায় সাজা হয়েছে– এমন ব্যক্তিদেরই ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকায় যাদের পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনকে এসকর্ট বা বিশেষ নিরাপত্তাসহ পৌঁছে দিয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা। বাকি বাংলাদেশিদের সাধারণ যাত্রীর মতো পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার দুপুরে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে পাঁচ বাংলাদেশিকে। ফ্লাইটটি একই ধরনের যাত্রী নিয়ে নেপাল হয়ে বাংলাদেশে আসে।
ফেরত আসা দু’জনের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। তাদের মধ্যে নোয়াখালীর শাহাদত হোসেন সমকালের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, গত ৯ মার্চ তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। বিমান খরচ যুক্তরাষ্ট্র সরকার বহন করেছে। শাহাদত হোসেন বলেন, ‘তারা আমাকে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তুলে দিয়েছিল। কোনো অসম্মানজনক আচরণ করেনি। হাতকড়া পরানো বা বাজে কোনো ব্যবহার করেনি। আমি সাধারণ যাত্রীর মতো এসেছি।’
শাহাদত যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ অ্যাসাইলাম চেয়েছিলেন। তা মঞ্জুর না হওয়ায় তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি ৯ মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান।
পুলিশের বিশেষ শাখার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের যাতে সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠানো হয়– এ ব্যাপারে শুরু থেকেই জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে সরকার। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকেও এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তোলা হয়। বাংলাদেশের অনুরোধ এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার কারণে বাংলাদেশি কাউকে হাতকড়া পরানো হয়নি বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। অনেক দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে সামরিক বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশিদের সাধারণ ও চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসন সে দেশে অবৈধ অভিবাসী এবং ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে, ভারতীয় নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে সামরিক বিমানবোঝাই করে পাঠানোর ঘটনা গণমাধ্যমে এলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
জানতে চাইলে ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কত বাংলাদেশি অবৈধ হয়ে পড়েছেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনও জানতে পারেনি সরকার। কেউ অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমন নাগরিকদের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায় তারা। এর পর সেই তথ্য পাঠানো হয় বাংলাদেশে। পুলিশের বিশেষ শাখা তাদের নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। আর যে কয়েক দফায় ৩১ জনকে দেশে পাঠানো হয়েছে, প্রতিবারই আগে থেকে তা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের হস্তান্তর করা হয়। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে রেজিস্টারে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
একাধিক সূত্র বলছে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস আগেই বাংলাদেশ সরকারকে অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অবহিত করেছে। এ নিয়ে সরকারকে কূটনৈতিক পত্র দেওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিষয়টি দেখভাল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময় একাধিক বৈঠক করে। সেখানে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অবৈধ অভিবাসী হিসেবে যারা ফেরত এসেছেন, তাদের আইনি কোনো সহযোগিতা দরকার হলে, সরকার তা করবে। এ জন্য বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাককে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান সমকালকে বলেন, যেসব অভিবাসী বিদেশ থেকে ফেরত আসেন, বিমানবন্দরে তাদের সহযোগিতা করে থাকে ব্র্যাক। প্রয়োজনে তাদের কাউন্সেলিং এবং আর্থিক সহযোগিতাও দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসাদের ক্ষেত্রে সরকার চাইলে ব্র্যাক সহায়তা দেবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গত সপ্তাহেও ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। গত শনিবার যে পাঁচ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, তাদের বিষয়ে আগেই বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়। চার্টার্ড ফ্লাইটে ওই পাঁচজনের বুধবার ঢাকায় পৌঁছার কথা ছিল। বিশেষ কারণে তাতে দু’দিন বিলম্ব হয়। ফেরত আসা এই পাঁচজনের মধ্যে দু’জন নোয়াখালীর বাসিন্দা। বাকি তিনজনের বাড়ি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে।
যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি সরকারি দপ্তর অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি তদারক করে থাকে। দপ্তরগুলো হলো– অফিস অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট। ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর ২৯ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হয়। এতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর তথ্য এই প্রথম প্রকাশ পেল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র কর মকর ত সমক ল ব ষয়ট সহয গ সরক র হ তকড়
এছাড়াও পড়ুন:
তৃতীয় দেশে অভিবাসী বিতাড়ন করার ট্রাম্পের পরিকল্পনা আটকে দিয়েছেন আদালত
ট্রাম্প প্রশাসনকে শত শত, এমনকি হাজারো অভিবাসীকে দ্রুত তাঁদের নিজ দেশ ছাড়া অন্য দেশে বিতাড়িত করার নির্দেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারক।
নিজ দেশে বিতাড়িত হওয়ার পর নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া বা প্রাণ হারানোর ঝুঁকির বিষয়ে অভিবাসীদের কোনো কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন। এ অবস্থায় গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট বিচারক ব্রায়ান মারফি ট্রাম্প প্রশাসনের ওই পরিকল্পনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পরিকল্পনায় এটি একটি নতুন আঘাত। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর সব নীতিমালা গ্রহণ করছেন।
এর আগে গত মাসে বোস্টনভিত্তিক একজন বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের বিতাড়ন প্রক্রিয়া দ্রুত করার পরিকল্পনার ওপর অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন, যেন প্রশাসনের অভিবাসীদের অপসারণের ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়।
যেসব অভিবাসীর কিছু ক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে, তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো থেকে প্রশাসনকে বিরত রাখতে ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
গতকালের নিষেধাজ্ঞা ওই আদেশকে বহাল রাখতে জারি করা হয়েছে। আইনিভাবে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী বিতাড়নের পরিকল্পনার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে যখন সরকারের কোনো নীতিমালা আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তখন ফেডারেল বিচারকেরা যে আদেশ দেন, তা প্রায়ই দেশজুড়ে কার্যকর হয়।
আদালতের এসব সিদ্ধান্ত দেশজুড়ে কার্যকর করা বাধাগ্রস্ত করতে ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের আবেদন ছিল, যাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এমন সিদ্ধান্ত দেন, শুধু তাঁদের ওপরই তা কার্যকর করা হোক।
বিচারক ব্রায়ান মারফি বলেছেন, ‘আদালত মনে করছেন, এসব বিতাড়ন ভুলভাবে হয়েছে অথবা ভুলভাবে করা হবে। উল্লেখ করার মতো যেসব ক্ষতির সম্মুখীন বাদীরা হতে পারেন, সে বিষয়ে তাঁদের কিছু বলার কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না।’
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
হিউম্যান রাইটস ফার্স্টের অ্যানওয়েন হিউস বলেছেন, যাঁদের তৃতীয় কোনো দেশে বিতাড়ন করা হয়েছে, তাঁদের অনেকে শরণার্থী এবং তাঁদের নিজ দেশে ফেরত না পাঠানোর সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। নিজ দেশে গেলে তাঁরা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হতে পারেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের দ্রুত বিতাড়নের বিরুদ্ধে যাঁরা আদালতে গেছেন, হিউস তাঁদের পক্ষের একজন আইনজীবী।
২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৭৬৯ জন আদালতের চূড়ান্ত আদেশে তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে সীমিত সুরক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা পান। নিজ দেশে ফেরত পাঠালে তাঁদের জীবন ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে অথবা সেখানে নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আরও পড়ুনআদেশ লঙ্ঘন করে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের বিতাড়ন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে বিচারপতির হুঁশিয়ারি২০ মার্চ ২০২৫এ বছর ফেব্রুয়ারিতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর অভিবাসন কর্মকর্তাদের এ ধরনের সুরক্ষা পাওয়া ব্যক্তিদের মামলা পর্যালোচনার করার নির্দেশ দিয়েছে ও তাঁদের পুনরায় আটক করে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো যায় কি না, তা দেখতে বলেছে।
পরে অভিবাসীদের অধিকারের পক্ষে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন একদল অভিবাসীর পক্ষে আদালতে গিয়ে নতুন জায়গায় তাঁদের দ্রুত বিতাড়ন আটকে দেওয়ার আবেদন করেন।
বিচারক মারফি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আদালতের নির্দেশ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের বিতাড়ন করলে সেটি হয়তো নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার লঙ্ঘন হবে।
আরও পড়ুনঅভিবাসীবিষয়ক ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির আওতা বাড়ানোর ট্রাম্পের পদক্ষেপ আটকাতে মামলা২৩ জানুয়ারি ২০২৫