সিপিএমের বিশাল সমাবেশে সেলিম: তৃণমূল বিজেপির স্ক্রিপ্ট এক, তা লেখা হয়েছে নাগপুরে
Published: 20th, April 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এবং কেন্দ্রে থাকা বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘তৃণমূল বিজেপির স্ক্রিপ্ট এক, তা লেখা হয়েছে নাগপুরে, লিখে দিয়েছেন মোহন ভাগবত।’
আজ রোববার বিকেলে কলকাতার ঐতিহাসিক ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে পশ্চিমবঙ্গের বাম দল সিপিএম–সমর্থিত চার গণসংগঠনের ডাকে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে এ কথা বলেন সেলিম।
আজ ব্রিগেডে প্রচুর বাম কর্মী–সমর্থকের ভিড় হয়। সেই জনস্রোতের দিকে তাকিয়ে সেলিম বলেন, ‘যাঁরা দুরবিন দিয়ে লাল ঝান্ডা দেখতে পাচ্ছিল না, তাদের বুকে কাঁপন ধরাবে এই ব্রিগেড। কাজের জায়গা ছোট হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্র, রাজ্যে কোথাও নিয়োগ হচ্ছে না। যেখানে নিয়োগ হচ্ছে, সেখানে দুর্নীতির পাহাড়।’
ব্রিগেডে এই মহাসমাবেশের ডাক দেয় সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু, প্রাদেশিক কৃষক সভা, ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন এবং রাজ্যের বস্তি ফেডারেশন।
সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। আরও ভাষণ দেন সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি শাহু, প্রাদেশিক কৃষক সভার সম্পাদক অমল হালদার, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সম্পাদক নিরাপদ সরদার, বস্তি উন্নয়ন পরিষদের সম্পাদক সুখরঞ্জন দে, আদিবাসী নেত্রী বন্যা টুডু প্রমুখ।
সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, এই রাজ্যে আরএসএস এবং বিজেপিকে এনেছেন মমতা। মমতার দয়ায় এই রাজ্যে ঘর বেঁধেছে আরএসএস। এই মমতাই একদিন এই রাজ্যের লাল ঝান্ডার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। সেই লাল ঝান্ডার এখনো বিদায় হয়নি। আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দিল লাল ঝান্ডার মৃত্যু নেই। লাল ঝান্ডা আবার জেগে উঠেছে।
মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, সামনে দিন আসছে, সব চুরির হিসাব দিতে হবে। কেউ রেহাই পাবে না। চাকরি বিক্রি, কয়লা বিক্রি, রেশন চুরি, সব চুরির হিসাব দিতে হবে এই বাংলার জনগণকে। লাল সরকারকে হটিয়ে দেশ বাঁচানোর জন্য নেমেছিল। কিন্তু দেশ বাঁচাতে পারেনি। আজ দুর্নীতিতে ডুবে গেছে এই বাংলা। তাই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাজ্যকে বাঁচানের লক্ষ্যে রাজ্যে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ভরে যায় বাম কর্মী ও সমর্থকদের ভিড়ে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প এম র
এছাড়াও পড়ুন:
মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য আরএসএসকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপিকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করলেও ভারতে হিন্দুত্ববাদের মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (আরএসএস) সাধারণত কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন না। বরং তিনি অতীতে বলেছেন, আরএসএসে ভালো লোক আছেন। কিন্তু ১১-১২ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এক খোলাচিঠিতে মমতা সরাসরি আরএসএসের সমালোচনা করেছেন।
‘শান্তির আবেদন’ শীর্ষক ওই খোলাচিঠি গতকাল শনিবার রাতে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসে।
খোলাচিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ খুব আক্রমণাত্মক হয়েছে। এই সঙ্গীদের মধ্যে আরএসএসও আছে। আমি আগে আরএসএসের নাম নিইনি, কিন্তু এবার বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে, রাজ্যে যে কুশ্রী মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে তারাও আছে। প্ররোচনার সূত্রে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা (মুর্শিদাবাদের দাঙ্গা) ঘটে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতটিকে এরা ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে বিভেদের রাজনীতি করার জন্য। এরা “ডিভাইড অ্যান্ড রুল”-এর খেলা খেলতে চায়। এ খেলা বিপজ্জনক।’
আরএসএসকে ভারতে হিন্দুত্ববাদের প্রধান পরিচালক বলা হয়ে থাকে। এই সংগঠনের অধীনে অসংখ্য শাখা, সংগঠন বা অনুসংগঠন আছে। ভারতের জাতীয় স্তরে ক্ষমতাসীন বিজেপি আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরএসএসের সম্পর্ক খারাপ নয়। অতীতে তিনি আরএসএসের কাজকর্মের প্রশংসাই করেছেন। একসময় বিজেপির সরকারকে সমর্থনও দিয়েছিলেন মমতা। সে সময় বিজেপির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি, যাঁর প্রতি মমতা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি সরাসরি সমালোচনা করলেন আরএসএসের। এটা তিনি অতীতে করেননি।
মমতা উল্লেখ করেন, ‘আগুনের সঙ্গে খেলা করার জন্য ওরা প্রথমে রামনবমী দিনটিকেই বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী উদ্যাপন হয় খুবই শান্তিপূর্ণভাবে। এরপর ওরা ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কিছু বিষয়কে ব্যবহার করতে চায়।’
বিজেপি ও তার সঙ্গীরা মিথ্যা ও সংকীর্ণতার ওপরে ভিত্তি করে রাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করে মমতা খোলাচিঠিতে বলেন, ‘তারা যা বলছে তা অসত্যের ঝুড়ি, অপব্যাখ্যায় ভর্তি। দয়া করে ওদের বিশ্বাস করবেন না। ওরা দাঙ্গা বাধাতে চায়। দাঙ্গায় সবার ক্ষতি হয়। আমরা সবাইকে ভালবাসি। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরা দাঙ্গার নিন্দা করি, আমরা দাঙ্গার বিরুদ্ধে। ওরা সংকীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।’
মমতা আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে এবং মানুষের প্রাণ ও সম্মান রাখার প্রয়োজনে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশের দুজন অফিসার-ইন-চার্জকে সরানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দয়া করে মনে রাখবেন, দাঙ্গা যারা ঘটায়, তারা হিন্দুও নয়, তারা মুসলমানও নয়, দাঙ্গা বাধায় দুর্বৃত্তরা। সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘দয়া করে ধীর ও শান্ত থাকুন। আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিন্দা করি এবং তাদের রুখবই। দাঙ্গার পেছনে আছে যে দুর্বৃত্তরা, তাদের কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণও আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, পরস্পরের ব্যাপারে সহমর্মী ও যত্নশীল হতে হবে।’
আরও পড়ুনমুর্শিদাবাদে ওয়াক্ফ আইন ঘিরে সহিংসতায় তিনজন নিহত১২ এপ্রিল ২০২৫