দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘অনেক সময় আমাকে শুনতে হয়, আপনারা দুর্নীতির কথা বলেন, কিন্তু আপনার নিজের অফিস তো দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। আমি এটি মোটেও উড়িয়ে দিই না। আমরা যদি দুর্নীতি করি সেটাও আপনারা আমাদের দেখিয়ে দেবেন। আমরা চেষ্টা করব যতটা সম্ভব এই দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে। কারণ, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন যদি দুর্নীতি করে, তখন তো আর বাকিদের বলার কিছু থাকে না।’

আজ রোববার সকালে নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণশুনানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’ স্লোগানে রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই গণশুনানি হয়।

নীলফামারী জেলা প্রশাসন ও দুনীতি প্রতিরোধ কমিটির সহযোগিতায় দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.

আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. তালেবুর রহমান।

গণশুনানিতে জেলার বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অভিযোগকারীদের মুখোমুখি করা হয়। এ সময় অভিযুক্তদের অনেকের উপস্থিতিতেই এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ লিখিতভাবে ৮১টি অভিযোগ উপস্থাপন করেন। সেই সঙ্গে সেবাবঞ্চিত জনসাধারণের করা অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, গণশুনানিতে ৮১টি অভিযোগের মধ্যে ২টি আদালতে বিচারাধীন, কয়েকটি অপ্রাসাঙ্গিক ও ৫৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানীকে পঞ্চপুকুর শাহ পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের কার্যালয় সহকারী বোরহান উদ্দিন বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ইএফটি ও এফপিও সংশোধনের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তাঁকেও বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়।

সমাপনী বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আমার ধারণা নীলফামারীতে দুর্নীতির প্রকোপ কম। কিন্তু আমি ঢাকার অবস্থা যেটা দেখি, সেটা অনেক বেশি। যেখানে প্রকোপ কম, সেটাকে একটা মডেল জেলা হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব। আমি আশা করব, একটা সময় আপনারা নিজেরাই ঘোষণা করবেন নীলফামারী হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা।’

দুর্নীতি রুখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহেলা রয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান যদি ঠিকমতো কাজ করে তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন আসবে? প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান পর্যন্ত হচ্ছে শেষ দোষ। তারপরও আইনগত কিছু বিষয় আছে। যেগুলো অনেক সময় আদালতে চলে যায়। এটা ছাড়া আমি তো মনে করি, আজকে যে অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে, এর দু–একটি ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ এখানে আসার কোনো কারণ ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসলে জনগণের অর্থে আমাদের বেতন হয়, আমরা বড় চেয়ারে বসি, ভালো পোশাক পরি। আমাদের সেই কমিটমেন্ট থাকা দরকার। সেই প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার। আমরা যেন তাদের (জনগণের) ঋণ শোধ করতে পারি।’

ভবিষ্যতে দুর্নীতি যাতে না হয় তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মনে করেন, আমাদের যে কর্মপদ্ধতি, এটার মধ্যে খানিকটা ভ্রান্তি আছে। সেটা হচ্ছে আমরা যে সময় ব্যয় করি, মোট সময়টা পুরোনো দুর্নীতিকে কীভাবে নিরসন করা যায়, তার পেছনে। আসলে আমাদের বড় কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয়, সেটা রোধ করা। কোথায় দুর্নীতি হয়, আমি, আপনি, আমরা সবাই জানি। যদি জেনেই থাকি তাহলে ভবিষ্যতের দুর্নীতি ঠেকানোর জন্য এখন থেকেই যদি আমরা সতর্ক থাকি তাহলে কি দুর্নীতি দূর হবে না?’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ গণশ ন ন আম দ র সরক র আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

অলির এলডিপিতে যোগ দিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সারওয়ার্দী

অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। তাঁকে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত আরও কিছু সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিপিতে যোগ দিয়েছেন।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তাঁরা অলি আহমদের দলে যোগ দেন। এই অনুষ্ঠানে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘তাঁদের যোগদানে এলডিপি আরও শক্তিশালী হলো। আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাই।’

অলি আহমদের হাতে ফুল দিয়ে এলডিপিতে যোগ দেওয়ার পর সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘এই দলে যুক্ত হয়ে আমি সত্যিকারের সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করতে পারব। আমরা একটি শোষণহীন সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি বলেন, জনগণের বেঁচে থাকা, ভোট দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার সবকিছুর সঙ্গে রাজনীতি জড়িত। সবচেয়ে বড় মানবসেবা করতে পারে রাজনীতিবিদেরা।

পরে অলি আহমদ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ হয় আপনারা দেশের জন্য কাজ করছেন না; বরং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের অপেক্ষায় আছেন। যাঁরা রাজনীতি করেন, যাঁরা জনগণের প্রতিনিধি, তাঁরাই ঠিক করবে অন্তবর্তীকালীন সময় কতটুকু হবে। আপনি বা অন্য কেউ ঠিক করবেন না।’

সংস্কারের নামে জনগণের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার নাটক করছে উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য না হলে সংস্কারের নাটক করেও লাভ হবে না। তিনি সরকারকে যথাসময়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নইলে তাঁদেরকেও আওয়ামী লীগের মতো পালাতে হবে।

এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব, দেরি হলে সংকট বাড়বে
  • বরিশালে মুফতি ফয়জুল করিমকে মেয়র ঘোষণার দাবিতে গণমিছিল
  • বিএনপির জন্ম হয়েছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য: সালাম
  • অলির এলডিপিতে যোগ দিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সারওয়ার্দী
  • জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে বিএনপিই দেশ সংস্কার করবে: রিজভী
  • জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে যা যা থাকা উচিত
  • খুনিদের বিচার ও সংস্কার ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না: জামায়াতের আমির
  • জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়, বললেন জিএম কাদের
  • এনসিপির কাছে প্রত্যাশা