বেরোবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে কমিটি
Published: 20th, April 2025 GMT
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে দীর্ঘ পোস্ট করেন। ওই পোস্টের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে কথোপকথনের স্ক্রিনশট যুক্ত করে দেন। যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ভুক্তভোগী একই বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমি আমার ডিপার্টমেন্টের রশীদুল স্যারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। শুরুতেই আমি ডিপার্টমেন্টে তার নজরে আসি আমার মুখের হাসির (উনার ভাষ্যমতে) জন্য । আমার সাথে এভাবেই উনি কমপ্লিমেন্ট দিয়ে কথা বলা শুরু করে। তারপর ইনবক্সে নক দিয়ে নানাভাবে পড়ালেখার খোঁজখবর নেয় এবং আমি সরল মনে বিশ্বাস করি, আমি অনেক দূর থেকে এসেছি তাই এভাবে খোঁজ নিচ্ছে।”
আরো পড়ুন:
ভিক্ষুককে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গণধোলাই
শিশুকে যৌন নিপীড়ন, যুবক গ্রেপ্তার
তিনি লিখেছেন, “এভাবে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের ডিপার্টমেন্টের পিকনিক হয়। সেখানে তার বউয়ের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর একদিন ওনার বউ আমাকে নক দিয়ে বলে আমাদের এলাকায় কি কি খাবার (যেটা ফেমাস) পাওয়া যায়, যেটা উনি খেতে চান। আর আমিও বাসায় গিয়ে তাকে দিয়ে আসি (যেহেতু সরাসরি চেয়েছে), এভাবেই একটা সম্পর্ক তৈরি হয় তার সাথে আমার।”
তিনি আরো লিখেছেন, “এরপর আমি আমার ডিপার্টমেন্টের চিয়ারের সাথে তার রুমে যাই দু’একবার। উনি আমাকে বলেছিলেন ক্লাসের লেকচার না বুঝলে তার কাছ থেকে গিয়ে বুঝে নিতে। এটাও আমি খুব সরল মনে বিশ্বাস করি। কারণ আমার সাথে থাকা বান্ধবীরা প্রায়ই যেত তার কাছে, আমিও তাদের সাথেই যেতাম। এভাবে এভাবে চলতে চলতে উনি ইনবক্সে কথা বলা বাড়িয়ে দেয় এবং এক পর্যায়ে আমার শাড়ি পরা ছবি চায়। ব্যাপারটা ইমিডিয়েটলি আমি আমার কাছের এক বান্ধবীকে জানাই স্যার আমার কাছে এভাবে শাড়ি পরা ছবি চেয়েছে, আমি কি দিব? সে আমাকে বলে, স্যার আমার কাছেও চেয়েছিল। আমি স্যারকে বলি, স্যার আমার শাড়ি পরা কোন ছবি আপাতত নেই।”
ভুক্তভোগী পোস্টে বলেন, “এর কিছুদিন পরে আমাদের ভাইভা হয়, আর আমি সেখানে শাড়ি পরি। আর এ সময় উনি আমার কাছাকাছি এসে বারবার ছবি তোলেন। বিষয়টা অনেক বেশি অকওয়ার্ড হলেও আমি সবার সামনে কিছু বলতে পারি না। এরপর আমি কিছুটা ইগনোর করা শুরু করলে উনি আমাকে নক দিয়ে ওনার চেম্বারে যেতে বলেন। আমি তখনও ভাবি নি এত এত লোকের ভিড়ে উনি কিছু বলবেন বা কিছু করার সাহস পাবেন।”
ভুক্তভোগী পোস্টে আরো বলেন, “এতোটুকু ভরসা নিয়ে আমি তার রুমে যাই। উনি তখন শুরুতে আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল শুরু করে বলেন, ‘তুমি এত দূর থেকে পড়াশোনা করতে এসেছ। কোনোভাবে যদি তোমার রেজাল্টটা খারাপ হয়, বাবা মার কাছে কি জবাব দিবে।’ এরপর উনি আমাকে বলেন, ‘তোমার কোনো আইডিয়া আছে একজন ভার্সিটি টিচার সম্পর্কে? তোমার পাশ ফেল সবকিছুই আমার হাতে আমি যেভাবে বলবো তোমাকে সেভাবেই শুনতে হবে। এভাবে তোমার সিনিয়র রাও পাশ করে গেছে।’ এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর করোনা চলে আসে আমিও বাসায় চলে যাই। আর আমার আইডি ডিলিট করে দিই।”
তিনি বলেন, “কিছুদিন পরে অন্য একটি আইডি খুললে উনি আমাকে খুঁজে খুঁজে আবার রিকোয়েস্ট দেয় আর মেসেজ দিয়ে বলে তুমি কি আমাকে ব্লক করে দিয়েছো। আমি তাকে বলি আমার আইডি নষ্ট হয়ে গেছে। পড়ানো সময় সবকিছু আনসার টেন থাকার কারণে আমি ভাবছি যা হওয়ার হবে। তাই তার সাথে ওই সময় কোন যোগাযোগ রাখিনি। কিন্তু বিপত্তিটা করোনা পরবর্তী সময়ে ঘটলো।”
তিনি আরো বলেন, “ডিপার্টমেন্টে আবার ব্যাক করার পর সে তার বউয়ের আইডি থেকে নক করত শুরুতে। আমি ব্যাপারটা ধরতে পারিনি। এরপর আমাদের অনার্সের প্রজেক্ট এর সময় চলে আসে। আমার রোল ডিপার্টমেন্টের অন্য একজন শিক্ষকের আন্ডারে আসে কিন্তু উনি আমাকে ফোর্স করে অ্যাপ্লিকেশন দেওয়ায় তার গ্রুপে আসার জন্য। এত কষ্ট করে এতদিন পড়াশোনা করে আসলাম এখন তিনটা কোর্সে সে যেন ফেল করায় দিতে বাধ্য না হয়। এসব ভয়ে আমি অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়ে তার গ্রুপে আসি।”
ভুক্তভোগী লেখেন, “এভাবে প্রজেক্ট এর কাজে একদিন আমার বান্ধবীর সহ তার রুমে গেলে প্রজেক্ট নিয়ে নানা আলোচনা করার পর আমার বান্ধবীকে বলেন, ‘তুমি সিঁড়ির কাছে একটু যাও। তোমার বান্ধবীর সাথে আমার একটু কথা আছে। আমি তো বাঘ না, ওকে খেয়ে ফেলবো।’ পরে উনি সরাসরি আমাকে বলেন, ‘তুমি কি জানো ক্লাসে পড়াই, আমার পড়ানো থেকে তোমার দেখে মনোযোগ বেশি থাকে। তোমাকে দেখলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।’ এর থেকেও আরও অনেক নোংরা নোংরা সেনসিটিভ কথা বলে, যা আমি পাবলিকলি বলতে পারব না। পরে আমি ওখানে কান্না করে দিলে উনি আমার ফোন নেয় এবং লক খুলতে বলে। তারপর ওনার লিস্টে ঢুকে ওনার চ্যাট ডিলিট করে আর বলে, ‘তুমি এসবের কোন রেকর্ড রাখো নাই তো?’ পরে ওই মুহূর্তে আমার বান্ধবী চলে আসলে আমি ওখান থেকে বের হয়ে চলে আসি।”
ভুক্তভোগী আরো লেখেন, “এরপর একদম প্রজেক্ট শেষ করে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার দিনে আমি যাই। সেদিনও উনি আমাকে একা অপেক্ষা করতে বলে। আমি আমার বান্ধবীকে বলি যে, ‘তুই প্লিজ থাক আমি একা একা ভয় পাচ্ছি।’ আমার বান্ধবী বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে, উনি কথা বলতে বলতে এক সময় এসে আমাকে ব্যাড টাচ করার চেষ্টা করে। তখন আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে আসি। আমি তখন কান্না করতে করতে হলের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আমার এক বান্ধবী আমার দেখা পেয়ে কথা বলে আমার সাথে। আমার কাছে জানতে চায় আমার কি হয়েছে আমি তার সাথে কথা বলে ভরসা পাই শেয়ার করার। তাই তাকে আমি সব খুলে বলি। আমার সেই বান্ধবী এবং আরো একজন বন্ধু আমাকে সাজেস্ট করে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার সময় যে ছবিগুলো তোলা হয় আমার ফোন থেকে। সেগুলো সে চাওয়ার জন্য নক দিলে আমি যেন এমনভাবে কথা বলি তার সাথে, যেন সে যে আমাকে নোংরা প্রস্তাব দিয়েছে তার কোন প্রমাণ রাখতে পারি। ওদের কথা মতো আমি তার সাথে সেভাবেই কথা বলি। আর রাতের মধ্যেই সব কিছু গোছগাছ করে হল ত্যাগ করে বাসায় চলে আসি। নিচে আমার সেই প্রমাণস্বরূপ কনভারসেশন এর স্ক্রীনশট দেওয়া হলো।”
শেষে ওই শিক্ষার্থী লেখেন, “সে যেহেতু আমার ফোন নিয়ে তার সাথে আমার সমস্ত কনভারশেসন ডিলিট করে দেয়, সেহেতু আমি তাকে আমার ক্লাসমেট বন্ধুর কথামতো হানি ট্রাপে ফেলে শেষে এই কথাটুকু বের করে সস রেখে দিছি। যার কারণে আমি তার সাথে তালে তাল মিলিয়ে কথা বলতেছিলাম।”
পোস্টে দেওয়া স্ক্রিনশর্টে দেখা যায়, শিক্ষক রশীদুল ইসলাম বলছেন, ‘মিষ্টি মেয়ে একটা!’ উত্তরে ছাত্রী বলেন, ‘থ্যাংক ইউ স্যার, আপনি খুব ভালো মনের মানুষ।’ এবার শিক্ষক বলেন, ‘তোমাকে কী যেন করতে বলেছিলাম?’ শিক্ষার্থী উত্তরে বলেন, ‘বাসায় যেতে! আর আপনার বাসায় গেলে কেউ যদি দেখে ফেলে, কি না কি হবে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রশীদুল ইসলামকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য সচিব প্রক্টর অধ্যাপক মো ফেরদৌস রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে গত ১৭ এপ্রিল অধ্যাপক ড.
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড প র টম ন ট র আম র ক ছ র আম র আম র স আম দ র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘ও’ পজিটিভের বদলে ‘বি’ পজিটিভি রক্ত পুশ, রোগীর মৃত্যু
মানিকগঞ্জে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় চিকিৎসাধীন এক রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভের বদলে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করায় সেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে রক্ত দেওয়ার পর রাত ১০টার দিকে রোগীর মৃত্যু হয়। নিহত ওই রোগীর নাম মো. বিল্লাল। তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
এর আগে, গত বুধবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
আরো পড়ুন:
চোর সন্দেহে গণপিটুনির ২ দিন পর যুবকের মৃত্যু
ধান মাড়াইয়ের সময় বজ্রপাত, নারীর মৃত্যু
রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আমাদের ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটি এনে নার্সের কাছে দেওয়ার পর নার্সরা বলেন, ডাক্তারের অর্ডারপত্র লাগবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার রক্ত দেখে অর্ডারপত্র দিয়েছেন। এরপর নার্সরা রোগীর শরীরে সেটি পুশ করেন। এরপর থেকেই রোগীর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আমরা তখনো বুঝিনি যে রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। পরে বাইরের একজন লোক বলেন, রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হচ্ছে। এরপর আমরা হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারদের অনেক ডাকাডাকি করলেও তারা এসে রোগীর কোনো চিকিৎসা দেননি। তারা তড়িঘড়ি করে সেই রক্তের ব্যাগ ও রক্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে যান। পরে রাত ৮টার দিকে আরেকজন ডাক্তার এসে আমাদের রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। আমরা বলেছি, রোগীকে ঢাকায় নেওয়ার মত অবস্থা আমাদের নেই। এটা একটা সরকারি মেডিকেল, আমাদের রোগীর চিকিৎসা এখানেই করেন। তারপর তারা রোগীকে আর কোনো চিকিৎসা দেয়নি। এটি ভুল রক্ত নাকি সঠিক রক্ত সেটি বোঝার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। তারা তিন জায়গায় চেক করে রক্ত দিয়েছে। এক জায়গায় ভুল হতে পারে, তিন জায়গায় তো ভুল হওয়ার কথা না। তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘‘বিকেল ৪টার দিকে ডিউটিতে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান। সেসময় রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়েছে। এরপর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আমি রাত ৮টায় ডিউটি শুরু করেছি। আমি ডিউটি শুরু করার পর যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। এরপরও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে, কাগজপত্র না দেখে রক্ত পুশ করা ঠিক হয়নি। এটি একটি মারাত্মক ভুল।’’
রোগীর মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে।’’ ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি উল্লেখ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এটি করা হয়েছে।’’
এ বিষয়ে জানতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহানকে খুঁজলেও পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, ‘‘এ ঘটনায় এখনো আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/চন্দন/রাজীব