বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির সামার সেমিস্টার–২০২৫–এর পাঁচ দিনব্যাপী ভর্তি মেলা আজ রোববার (২০ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

মেলা উদ্বোধন করে উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবারের ভর্তি মেলায় ভর্তিচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরা অনার্স এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত স্কলারশিপের বাইরে কোর্স ফির ওপর অতিরিক্ত ১০ হাজার এবং ৫ হাজার টাকা ছাড় পাবেন। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা মেলা চলাকালে ইউনিভার্সিটির অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন।

আরও পড়ুনফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম, আইইএলটিএসে ৭ স্কোরে বৃত্তির আবেদন১৭ এপ্রিল ২০২৫

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) মো. মাহবুবুল হক, ভর্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. তাজুল ইসলাম, সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. সাদিক ইকবাল, ফার্মেসি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মুজাক্কীরুল হুদা, স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শেখ ইতমাম সউদ, অন্য বিভাগীয় প্রধানরা, শাখা প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। ২৫ এপ্রিল মেলা শেষ হবে। বিজ্ঞপ্তি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট

এছাড়াও পড়ুন:

বে-টার্মিনালসহ ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং দেশের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেতে তাদের চাপিয়ে দেওয়া পরামর্শকের জন্য ব্যয়ের বোঝা টানতে হয়। বড় আকারের ঋণ পেতে এ ছাড়া কিছু করার থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজের ধরন অনুযায়ী দেশীয় পরামর্শকও পাওয়া যায় না। আবার অতীতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের কাজে সহায়তা করতে চাইলেও তাদের সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ তাদের অনেকেই বিদেশে বড় কাজে পরামর্শক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। 

গতকাল রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সামাজিক সুরক্ষা খাতের লক্ষ্যভুক্ত সুবিধাভোগী নির্বাচন-সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের পরামর্শক খাতে বড় অঙ্কের ব্যয়ের বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নেওয়া  প্রকল্পটিতে শুধু পরামর্শক ব্যয় ধরা হয় ১৯৪ কোটি টাকা। ৯০৪ কোটি টাকার প্রকল্পে ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেওয়া এ প্রকল্প আগামী জুলাই মাসে শুরু হবে। শেষ হবে ২০৩০ সালের জুন মাসে। 
উপদেষ্টা আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতের পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ার সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। যারা এখন বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প থেকে সুবিধা পাচ্ছেন, তাদের ৫০ শতাংশ তা পাওয়ার যোগ্য নয়। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা তাদের আত্মীয়স্বজনকে প্রকল্পভুক্ত করে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী যারা প্রকল্পভুক্ত হওয়ার কথা নয়, তাদের বাছাই করে বাদ দিতে পারলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের সুবিধা বর্তমানের দ্বিগুণ করা সম্ভব। নতুন প্রকল্পটির উদ্দেশ্য অযোগ্যদের বাদ দেওয়া।  

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে ১৬ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এ অর্থের মধ্যে ১৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ। সরকার জোগান দেবে ৩ হাজার ১ কোটি টাকা। বাকি ৪ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা জোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজ এ মাসেই শুরু
বৈঠকে  চট্টগ্রাম বন্দরের গতি বাড়াতে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর নির্মাণকাজ  চলতি এপ্রিলেই শুরু হচ্ছে। বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) নামের প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব মডেলে নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয় ১৩  হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। এখানেও ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে সংস্থাটি। প্রকল্পে বাকি ৪ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা দেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০৩১ সালে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।  প্রকল্পের আওতায় সাগরের ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল সুবিধা তৈরি করা হবে। এ ছাড়া রেল, সড়কসহ যাবতীয় অবকাঠামো ও পরিষেবা সুবিধাও নির্মাণ করা হবে। 
বে-টার্মিনাল নির্মাণ অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন,  বড় অবকাঠামো প্রকল্প অর্থনীতির জন্য ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। প্রথমে কিছুটা অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে, তবে কাজ শুরু হলে মনে হয় আরও বড় প্রকল্প প্রয়োজন ছিল। প্রকল্পের আওতায় মোট ৪টি টার্মিনাল হবে। 

রোহিঙ্গাদের জন্য প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ল
জরুরিভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ‘মাল্টিসেক্টর’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন করা হয় বৈঠকে। প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো হয় ৩৯৪ কোটি টাকা। সময় বাড়ানো হয় আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়াবে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। প্রথম অনুমোদনের সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে অনুদান   দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, যার পরিমাণ ২ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন,  রোহিঙ্গাদের জন্য আরও দুই বছরের অনুদান দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ অর্থ তাদের  শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। দুই বছর পর তাদের আরও সহায়তার প্রয়োজন হবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি অনুযায়ী বিশ্বব্যাংকও কতটুকু সহায়তা দিতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। 

নিজেরা কেন গ্যাস উত্তোলন করতে পারে না
নিজস্ব উপায়ে গ্যাস উত্তোলন  প্রসঙ্গে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, নিজেদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান নেই বলে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব দিতে হয় নাইকোর মতো বিদেশি কোম্পানিকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কেন পারি না– এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। দেশের কিছু প্রকৌশলী বিদেশের মাটিতে ভালো করছে। অতীতে অনেকে গ্যাস উত্তোলনে সহায়তা করতে চেয়েছেন। কিন্তু তাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার জলাবদ্ধতার সমস্যাও পুরোনো। এরও যেন কোনো সমাধান নেই। 
অন্যান্য প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে একনেক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ভারতের সহায়তা ছাড়া যতটুকু পানি আসে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জলাধার নির্মাণ করে পানি ধরে রাখার চিন্তাও করা হচ্ছে। তিস্তা প্রকল্পটি চীন করবে– এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তারা একটা নকশা দিয়েছে। অবশ্য এখনও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। 

অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে  রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান উন্নয়নে নেওয়া  আইইএপিএম প্রকল্প। এটি পরিবেশ অধিদপ্তরের নেওয়া এটি  নতুন প্রকল্প। ১০৩ কোটি টাকার  প্রকল্পে ৬৮ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাইকা। কৃষির উন্নয়নে নেওয়া ২৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ২৪৪ কোটি ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। স্থানীয় সরকার বিভাগের নেওয়া একটি প্রকল্পে ১ হাজার ৯০৯ কোটি টাকার মধ্যে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পে প্রথম সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। 
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পের মধ্যে কৃষিতে বিনিয়োগে প্রকৌশল সহায়তা, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন,  রেলওয়ের কারিগরি সহায়তা, তিতাস ও বাখরাবাদ দ্বিতীয় গভীর কূপ খনন, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের খনন সক্ষমতা বাড়ানো, মাধ্যমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ, আর্থিক খাত সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে প্রকল্প রয়েছে।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ