রাইজিংবিডি ডটকম-এ অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরপরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রওশন আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে জেলা পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার ওসি শহিদুল ইসলাম।
বিজয়নগর থানার ওসি (তদন্ত) অমিতাভ দাস তালুকদার ওসি রওশন আলীর প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৩ এপ্রিল রাইজিংবিডি ডটকম-এ “ওসির ‘অনিয়মে’ জনতা অতিষ্ঠ, ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের আশ্বাস” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে ওসি রওশন আলীর বিরুদ্ধে সাধারণ মামলা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে টাকা আদায়, সংঘর্ষে আহতদের মামলা না নেওয়া এবং ফসলি জমি কাটায় জব্দ করা ট্রাক্টর ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়াসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ওসির বিরুদ্ধে নানা ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার অনিয়মে তারা ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে পুলিশ সুপার এহতেশামুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/মাইনুদ্দীন/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে রক্তের দাগ
ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি সংক্রান্ত সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক খবরগুলো বড় বেদনার। স্বাভাবিক সময়েই অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। শহীদ রওশনের মায়ের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। ২০১৮ সালের সেই জুলাইয়ের সকালে তিনি তাঁর ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন স্বপ্ন নিয়ে। ফিরে পেয়েছিলেন রক্তাক্ত দেহ। একটি বেপরোয়া বাসের চাকায় শুধু একটি প্রাণই নয়, একটি পরিবারের সব স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়কে গড়ে ২২ জন প্রাণ হারান। প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একটি পরিবারের অশ্রু আর অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গত দশকে আমরা হারিয়েছি ৭৫ হাজার প্রাণ, যা একটি ছোট শহরের জনসংখ্যার সমান।
আমাদের সড়কগুলো যেন মৃত্যুর মিছিল চলার উন্মুক্ত প্রান্তর। প্রতি ১০০টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৪০ শতাংশ চালক বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালায়। এর পেছনে রয়েছে জটিল নেটওয়ার্ক– দুর্নীতি, অদক্ষতা। সর্বোপরি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়।
২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদ। কিন্তু ছয় বছর পর আমরা কতটুকু এগিয়েছি? ডিজিটাল লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু হয়েছে, কিন্তু অনেক আবেদনকারী এখনও
দালালের কারণে হয়রানির শিকার। আইন হয়েছে, কিন্তু প্রয়োগ দুর্বল।
আমাদের সমস্যা শুধু প্রযুক্তিগত নয়। এটি মূলত সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয়ের ছাপ। আমরা যেখানে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছি, সেখানে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ পিছিয়ে পড়ছে।
সরকারের নতুন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন সামাজিক বিবেককে জাগ্রত করা। প্রত্যেক চালক যেন বুঝতে পারে, তার হাতে শুধু স্টিয়ারিং নয়, অসংখ্য প্রাণের দায়িত্বও রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে গাড়ি পরিদর্শন– সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু সড়ক নয়, আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত যানবাহন ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।
২০১৮ সালের সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছিল– পরিবর্তন সম্ভব। আজ আমাদের প্রয়োজন সেই চেতনাকে আবার জাগিয়ে তোলা। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য, প্রতিটি দুর্ঘটনা অপ্রয়োজনীয়। রওশনের মায়ের মতো চোখের জল যেন আর কোনো মাকে ফেলতে না হয়। সড়কগুলো যেন আর না হয় কবরস্থান। এটি শুধু একটি স্বপ্ন নয়, অধিকার। আসুন,সবাই মিলে গড়ে তুলি এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হবে অতীতে ঘটে যাওয়া করুণ ইতিহাস, যা বর্তমানে নেই।
মো. রাইসুল ইসলাম: স্বেচ্ছাসেবক, চট্টগ্রাম