মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মূল কারণ হিসেবে শৈশবে যৌন নিপীড়নের বিষয়টি উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ২৮.৩ শতাংশ মেডিকেল শিক্ষার্থী শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এই অভিজ্ঞতা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। বিশেষত বিষণ্নতা ও ইন্টারনেট আসক্তির মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষকরা সমাজে শৈশব যৌন নিপীড়ন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। 

রবিবার (২০ এপ্রিল) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গবেষক দলের প্রধান এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো.

আবু বকর সিদ্দিক।

আরো পড়ুন:

হাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রোগী ভর্তি শুরু 

গবেষক দলে আরো রয়েছেন, শাবিপ্রবির একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাহ জালাল আহমেদ, মো. রাজওয়ানুল্লাহ শাকিল এবং খান মোহাম্মদ আন নাজমুস সাকিব।

গবেষণায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৩ হাজার ২৬৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ২৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। পুরুষ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭.৩৫ শতাংশ শৈশবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, ৭০.২ শতাংশ শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত, ৬২.১ শতাংশ ইন্টারনেট আসক্তিতে ভুগছেন এবং ৫০.৪ শতাংশ বিষণ্নতার লক্ষণ প্রকাশ করেছেন।

গবেষকরা মনে করেন, শৈশবে যৌন নিপীড়নের ইতিহাস, ইন্টারনেট আসক্তি ও পর্নোগ্রাফির অতিরিক্ত ব্যবহার— এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে শক্তিশালী পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। যা বিষণ্নতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। বিশেষত, পুরুষদের শৈশবে যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা তাদের ইন্টারনেট ও পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে মানসিক শান্তি খোঁজার প্রবণতা তৈরি করে, যা শেষ পর্যন্ত আরো গভীর মানসিক সমস্যায় রূপ নেয়।

গবেষক দলের মতে, শৈশবে যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্রাজেডি নয়, এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণগত বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলে। পুরুষ ভিকটিমদের জন্য সহায়তার পথ আরো উন্মুক্ত করা জরুরি।

গবেষণাটি শৈশবে যৌন নিপীড়ন নিয়ে সামাজিক সচেতনতা, মনো-সামাজিক সহায়তা, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরামর্শসেবা জোরদার করার আহ্বান জানায়। পাশাপাশি, ইন্টারনেট ও পর্নোগ্রাফি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা এবং বৈজ্ঞানিক মনস্তাত্ত্বিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়।

গবেষক দলের প্রধান মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, তুরস্কের ইস্তানবুল তিচারেট ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ স্টাডিজ সম্মেলনে তাদের ‘চাইল্ডহুড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ, ইন্টারনেট অ্যাডিকশন, প্রবলেমেটিক পর্নোগ্রাফি ইউজ অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যামাং মেডিকেল স্টুডেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়েছে।

ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ন গ র ফ আসক ত

এছাড়াও পড়ুন:

সালিশ চলাকালে শিশুকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

নেত্রকোনার মদনে ১২ বছরের এক শিশু দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে সালিশ বৈঠকে বসেন স্থানীয় মাতবররা। সেখান থেকে শিশুটিকে তুলে নিয়ে গেছে অভিযুক্ত কিশোর মাহিন মিয়াসহ কয়েকজন। কাইটাইল ইউনিয়নের একটি গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগের সত্যতা জানতে আজ রোববার ওই গ্রামে গিয়ে শিশুটির দাদিকে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত মাহিন মিয়ার বাড়িতে গেলে পাওয়া যায় তার চাচা সাদেক মিয়া ও বাবা আরজু মিয়াকে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েটির বাবা কয়েক বছর আগে বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যান। পোশাক কারখানায় চাকরি করেন মা। শিশুটি গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ দাদির কাছে থাকে। এদিকে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে স্থানীয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন মিয়া। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। শারীরিক পরিবর্তন দেখে মেয়েটির খালা জানতে চাইলে মাহিনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলে। বিষয়টি নিয়ে মাহিনের বাবার সঙ্গে কথা বললে তারা মেয়েটির সঙ্গে মাহিনের বিয়ের কথা জানায়। এ ঘটনা নিয়ে গত শুক্রবার রাতে সালিশ-বৈঠকে বসেন গ্রামের মাতবররা। এ সময় মেয়েটিকে ঘরের ভেতর একা পেয়ে তুলে নিয়ে যায় মাহিনসহ কয়েকজন। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও তাদের সন্ধান মিলছে না।

শিশুটির দাদির ভাষ্য, তার নাতনি দুই থেকে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি মাহিনের পরিবারকে জানালে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত দেন। পরে গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে সালিশ-বৈঠকে বসলে হঠাৎ মাহিনসহ কয়েকজন ঘর থেকে তার নাতনিকে তুলে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘এখন বুঝতে পারলাম আমার নাতনিকে মাহিন বিয়ে করবে না। তার পরিবারের পরামর্শে বাচ্চাটা নষ্ট করে আবার আমার নাতনিকে ফেরত দেবে। আমরা খুবই গরীব মানুষ। থানায় কিভাবে অভিযোগ করবো বুঝতেও পারছি না।’

অভিযুক্ত কিশোরের বাবা আরজু মিয়া জানান, বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু দু’জনেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। খোঁজাখুঁজি করছেন তারা।

সালিশে উপস্থিত ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন রুবেল বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠকে বসে ছিলাম। পরে শুনেছি মেয়েটিকে মাহিন তুলে নিয়ে গেছে। বৈঠকে ছেলের পরিবার খুবই খারাপ আচরণ করেছে।’

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসানের ভাষ্য, এ ঘটনা জানতে পেরে রোববার ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মেয়েটির পবিবারকে বলা হয়েছে থানায় অভিযোগ করতে। নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অলিদুজ্জামনের সঙ্গে। তিনি জানান, বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ