জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে (পারভেজ) ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা জড়িত।

রাকিবুল বলেছেন, পারভেজের ওপর হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন রাকিবুল ইসলাম।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম।

তবে রাকিবুলের এ অভিযোগকে ‘ঘৃণ্য মিথ্যাচার’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের ফেসবুক পেজে রাকিবুলের এ অভিযোগের বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘এক মৃত ব্যক্তির লাশকে ব্যবহার করে ছাত্রদল যে নোংরামি করছে, তা নতুন বাংলাদেশ ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কাম্য নয়।’

রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (২২) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আজ ওই ঘটনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে রাকিবুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের অপকৌশল অনুসরণ করে বৈষম্যবিরোধী নেতারা দীর্ঘদিন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে তারা নানা ষড়যন্ত্রের কৌশল অবলম্বন করেছে। পারভেজের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড পেজ থেকে অশোভনীয় ভাষায় যে পোস্ট দেওয়া হয়েছে, এর নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) অভিযুক্তদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করতে পারত। কিন্তু তা না করে অশোভন ভাষায় আক্রমণ এবং তদন্তের আগেই অভিযুক্তদের পক্ষ নেওয়া প্রমাণ করে তারা অপরাধ আড়াল করতে বিশ্বাসী।

পারভেজকে হত্যার ঘটনায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মেহরাজ ইসলামকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, মামলার বাকি আসামিরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ (তুষার), যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজী, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির অপর দুই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা আবু জর গিফারি ও মাহাদী হাসান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসব নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সবার সঙ্গে সমতা ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারছে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিভিন্ন সময় দফায় দফায় আলোচনা করলেও ছাত্রদলের মতো বৃহৎ এবং জুলাই আন্দোলনে সর্বাধিক শহীদের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেনি। বিভিন্ন ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। প্রশাসনে এখনো হাসিনার প্রেতাত্মারা লুকিয়ে আছে। আর এদের উৎসাহ ও আশ্রয় দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতা, বিভিন্ন ঘটনায় যা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বনানী থানায় গিয়েও বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কাদের নামে মামলা হবে, সেই তালিকা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। মূল অপরাধীদের আড়াল করার জন্য তাঁরা বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করছে বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, সে কারণে তাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের চেইন অব কমান্ড নেই। তারা সোশ্যাল মিডিয়ার স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে মব জাস্টিসের সূচনা করে দেয়।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনেক বড় বড় অভিযোগ এসেছে। একটি অভিযোগের কোনো বিচার হয়নি। তারা দায় স্বীকার করেনি। তবে ছাত্রদল সংগঠনের কারও বিরুদ্ধে সামান্য অভিযোগ পেলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, সহসভাপতি এইচ এম আবু জাফর, ইজাজুল কবির, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হুরায়রা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ

এদিকে রাকিবুলের এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক পেজে দেওয়া প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজীকে দায়ী করেছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরসহ অন্যরা। একজন মৃত ব্যক্তির লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্রদলের এমন ঘৃণ্য মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সোবহান নিয়াজ তুষার এবং হৃদয় মিয়াজী, পারভেজ হত্যার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সবচেয়ে বড় সংগঠন PUSAB তাদের ফেসবুকে যে তিনজন হত্যাকারীর নাম উল্লেখ করেছে, সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উল্লিখিত দুজন নেতা অন্তর্ভুক্ত নন। দেশের সব প্রথম সারির মিডিয়াতে পারভেজ হত্যার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোথাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো নেতা–কর্মীর বিন্দুমাত্র অভিযোগের কথা বলা হয়নি। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেখানেও সোবহান নিয়াজ তুষার এবং হৃদয় মিয়াজীর কোনো উপস্থিতি ও হত্যার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়নি। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক ইতিপূর্বে ‘দায় দিয়ে দাও’ সংস্কৃতির প্রচলন দেখেছি প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলনে। তিনি পারভেজ হত্যার ক্ষেত্রে একই সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি করছেন।

প্রতিবাদে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ছাত্রদল কর্মীরা যাচাই-বাছাই না করে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম জড়াচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কেউ একটি প্রমাণও দিতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোনো ব্যক্তির বরাতেও তুষার ও হৃদয়ের কথা পাওয়া যায়নি। বিষয়টি আমাদের ছাত্রলীগের ‘চালাই দেন’ গুজব বাহিনীর কথাই মনে করায় আরও একবার। একজন মৃত ব্যক্তির লাশকে ব্যবহার করে ছাত্রদল যে নোংরামি করছে, তা নতুন বাংলাদেশ ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কাম্য নয়।

কোনো প্রমাণ ছাড়াই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন নেতার নাম জড়িয়ে ফেসবুকে মব ট্রায়াল চালানোতে তাঁদের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটছে। একই সঙ্গে পারভেজ হত্যার মূল আসামিরা অনালোচিত থেকে যাচ্ছে। পারভেজ ছাত্রদল কর্মী হলেও ছাত্রদলেরই সাধারণ সম্পাদক হত্যাকারীদের কেন আড়াল করতে চাইছেন, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। হত্যাকারীদের আড়াল করতে চাওয়ার পেছনে তাঁর অন্য কোনো দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটি গোয়েন্দা বাহিনীকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। সর্বোপরি ছাত্রদলকে অনুরোধ জানাব স্বীয় দলের কর্মীদের লাশ ব্যবহার করে নোংরামির রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ক ব ল ইসল ম ছ ত রদল র স ন ছ ত রদল ফ সব ক স গঠন সরক র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে, তা না হলে এই ব্যাধি থেকে সমাজ মুক্তি পাবে না।

রোববার দুপুরে নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পুরোনো দুর্নীতির পেছনে বেশি সময়ক্ষেপণ না করে, ভবিষ্যতে দুর্নীতি রোধের জন্য কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে দুদক। অতীত ও বর্তমান সময়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান শক্ত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয়, সে জন্য কাজ করছে দুদক। দুদকের কোথাও দুর্নীতি থাকলে, তাও ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিকে মন থেকে ঘৃণা করতে হবে। তা না হলে এ সংকট কাটবে না। তিনি আগামী প্রজন্মকে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ারও আহ্বান জানান।

গণশুনানিতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ এবং দুদকের অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়। গণশুনানিতে সৈয়দপুর উপজেলার গোলাহাট এলাকায় বিভিন্ন সেবা গ্রহণকারী একাধিক অভিযোগ তুলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান। 

অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মুহাম্মদ আকবার আলী আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহসিনসহ দুদকের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক তালেবুর রহমান বক্তব্য দেন। এর পর নীলফামারী সদর উপজেলার সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩১টি দপ্তরের ৮১টি অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং সংশিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ অভিযোগের বিষয়ে জবাবদিহি করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ