পটুয়াখালীতে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
Published: 20th, April 2025 GMT
পটুয়াখালীর দুমকিতে ৯০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই নারীকে এক যুবক পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ স্বজনদের। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মনির হোসেন (৪৮) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি নিহত নারীর দূরসম্পর্কের নাতি।
নিহত নারীর পুত্রবধূ জানান, গতকাল গভীর রাতে মনির হোসেন তাঁদের ঘরের কাছে এসে পানি খাওয়ার কথা বলে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি (পুত্রবধূ) দরজা না খুললে মনির বসতঘরের পেছনের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। ঘরে ঢোকার পর মনির তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন। তিনি এ সময় মনিরকে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর ঘুমন্ত স্বামীকে পিটিয়ে জখম করেন। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তিনি (পুত্রবধূ) তাঁর প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে দ্রুত পাশের ঘরে আশ্রয় নেন।
ওই পুত্রবধূ আরও বলেন, ঘটনার সময় মনিরের আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। তাঁর ধারণা, মনির ওই সময়ে মাদকাসক্ত ছিলেন। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর মনির ঘর থেকে চলে গেলে তিনি ঘরে ফিরে আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর শাশুড়ি মৃত ও বিবস্ত্র। তাঁর ধারণা, তাঁর শাশুড়িকে ধর্ষণের পর পিটিয়ে হত্যা করেছেন মনির।
নিহত নারীর ছেলে দুমকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিহত নারীর মেয়ে বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে দুমকি থানা–পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, আজ রোববার সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে এক বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, এ ঘটনায় নিহত বৃদ্ধার মেয়ে বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেছেন। তবে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর জানা যাবে। আপাতত হত্যা মামলা হচ্ছে। আইনিপ্রক্রিয়া শেষে আটক মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন র হ স ন এ ঘটন য় প ত রবধ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে হ্যান্ডকাফ পরানো অমর্যাদাকর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হ্যান্ডকাফ দেখিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। এটা আমার জন্য লজ্জাজনক ও অমর্যাদাকর।’
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার অপরাধের মামলায় রোববার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে শাজাহান খানকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় হাতকড়া পরানো নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন আসামি, পুলিশ, প্রসিকিউশন।
এর আগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, হানাসুল হক ইনুসহ ১৮ জনকে এদিন প্রিজন ভ্যান থেকে হাতকড়া পরিয়ে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে তাদের তোলা হয় কাঠগড়ায়। এর মধ্যে শাজাহান খানসহ কয়েকজনকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় কাঠগড়ায় নেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, প্রিজন ভ্যানে থাকা অবস্থায় সাবেকমন্ত্রী-এমপিদের পেছনে হাতমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। যা লজ্জাজনক ও অমর্যাদাকর।
এদিকে ট্রাইব্যুনালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে এসব আসামিদের হ্যান্ডকাফ, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরানো হয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, সামনের দিনে এখানে আর হ্যান্ডকাফ পরানো যাবে না। যারা এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহজাহান খান বলেন, ‘অতীতে আমরা রাজাকারদের হাতকড়া পরাইনি, আমাদের কেন হাতকড়া পরানো হয়েছে? এটা লজ্জাজনক।’
এ সময় মুহম্মদ ফারুক খানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ইতোপূর্বে এই আসামিদের হ্যান্ডকাফ ছাড়াই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হত। কিন্তু কিছুদিন ধরে তাদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে আনা হচ্ছে। বিশেষ করে আজ কাঠগড়ায় হাজির করার পরেও কয়েকজন হ্যান্ডকাফ পড়ানো অবস্থায় ছিলেন।
এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য জানতে চান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। পুলিশের দুই সদস্য বলেন, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে আসামিদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিতে হবে।
চেয়ারম্যান বলেন, উনাদের হ্যান্ডকাফ পরানোর প্র্যাকটিস তো এই ট্রাইব্যুনালে নেই, পরাচ্ছেন কেন?
ট্রাইব্যুনালকে পুলিশ সদস্য নুরুন্নবী জানান, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের হ্যান্ডকাফ, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে এভাবে হাজির করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের হ্যান্ডকাফ পরানোর নিয়ম রয়েছে। আর কোর্টরুমে আসার আগেই সেটা খোলা হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা আসামিদের আজকের আচরণ নিয়ে যেটা আমাদের বলেছেন, তা বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা।
এ সময় শাহজাহান খান বলেন, প্রিজন ভ্যান থেকে নামার আগেই আমাকে পেছনে দুই হাতমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। আর এজলাসে উঠানোর পর হ্যান্ডকাফ খোলা হয়েছে। আমি তখন পুলিশকে আপত্তি জানিয়ে বলেছি, তোমরা আমাকে নামার আগেই হ্যান্ডকাফ পরাচ্ছো কেন? তাহলে আমি কীভাবে গাড়ি থেকে নামবো। তারা আমার কোনো কথা শুনেনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের আরও ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার ন্যূনতম মর্যাদাটুকু চাই। সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এ সময় প্রশ্ন করেন, ‘আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ দল?’
এদিন এই মামলার ১৭ আসামিকে কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক দুই উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, ডা. দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, বিচারপতি এ এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহ্মেদ পলক, সাবেক এমপি সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
এছাড়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।