ঢাকার আশুলিয়ায় রোকসানা আক্তার (২৮) নামের এক পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন তার স্বামী। খবর পেয়ে সেই লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

রবিবার (২০ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি এলাকায় কালাম মাদবরের মালিকানাধীন ৫ তলা ভবনের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাটে রোকসানা আক্তারকে হত্যা করা হয়। এর পর থেকে পলাতক আছেন ওই নারীর স্বামী।

রোকসানা আক্তার শেরপুরের মো.

আব্দুর রশিদের মেয়ে। তিনি আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় ন্যাচারাল ইনডিগো লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। রোকসানার স্বামীর পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার পেশা সম্পর্কেও বাড়ির মালিক কিংবা প্রতিবেশীরা নিশ্চিত করতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি বাস কিংবা ভেকু (এক্সকেভেটর) কন্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করেন।

বাড়ির মালিক কালাম মাদবর বলেছেন, ফজরের আগে ঘুম থেকে উঠে গন্ধ পেয়ে নিচতলায় নেমে দেখি, সবগুলো ফ্ল্যাটের ছিটকিনি বাইরে থেকে বন্ধ করা। রোকসানার ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই দেখা যায়, ঘরের ভেতর ধোঁয়া। তখন প্রতিবেশীরা এসে পানি ছিটিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। পরে পেঁচিয়ে রাখা তোষক সরাতেই বের হয়ে আসে রোকসানা আক্তারের মরদেহ। তার বিছানায় রক্তের দাগ ও গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। 

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, পাঁচ বছর ধরে রোকসানার কাছে আসেন না তার স্বামী। হঠাৎ করে তিন দিন আগে বাসায় আসলে রোকসানা আক্তার তাকে ঘরে ঢুকতে দিতে চাননি। স্বামী জানান, দুর্ঘটনায় তিনি আহত হয়েছেন, মাথা ফেটে গেছে। ঘরে ঢোকার জন্য কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন তিনি। পরে বাড়ির মালিক ও অন্যরা রোকসানাকে বুঝিয়ে রাজি করেন। স্বামী পাঁচ বছর ধরে রোকসানার খোঁজ নেননি, ভরণ-পোষণের খরচও দিতেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ চলছিল। 

আশুলিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতের স্বামী মাদকাসক্ত এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে কলহ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন স্বামী। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী পলাতক আছেন।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, হত্যার পর রোকসানার লাশ পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন স্বামী। আগুনের নাটক সাজিয়ে ঘটনা অন্যদিকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন হত্যাকারী। আমরা তদন্ত করছি। পুলিশ কাজ করছে। মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রোকসানার স্বামীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

ঢাকা/সাব্বির/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে হ্যান্ডকাফ পরানো অমর্যাদাকর

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হ্যান্ডকাফ দেখিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। এটা আমার জন্য লজ্জাজনক ও অমর্যাদাকর।’ 

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার অপরাধের মামলায় রোববার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে শাজাহান খানকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় হাতকড়া পরানো নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন আসামি, পুলিশ, প্রসিকিউশন।

এর আগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, হানাসুল হক ইনুসহ ১৮ জনকে এদিন প্রিজন ভ্যান থেকে হাতকড়া পরিয়ে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে তাদের তোলা হয় কাঠগড়ায়। এর মধ্যে শাজাহান খানসহ কয়েকজনকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। 

ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, প্রিজন ভ্যানে থাকা অবস্থায় সাবেকমন্ত্রী-এমপিদের পেছনে হাতমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। যা লজ্জাজনক ও অমর্যাদাকর।  

এদিকে ট্রাইব্যুনালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে এসব আসামিদের হ্যান্ডকাফ, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরানো হয়েছে। তবে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, সামনের দিনে এখানে আর হ্যান্ডকাফ পরানো যাবে না। যারা এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শাহজাহান খান বলেন, ‘অতীতে আমরা রাজাকারদের হাতকড়া পরাইনি, আমাদের কেন হাতকড়া পরানো হয়েছে? এটা লজ্জাজনক।’ 

এ সময় মুহম্মদ ফারুক খানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ইতোপূর্বে এই আসামিদের হ্যান্ডকাফ ছাড়াই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হত। কিন্তু কিছুদিন ধরে তাদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে আনা হচ্ছে। বিশেষ করে আজ কাঠগড়ায় হাজির করার পরেও কয়েকজন হ্যান্ডকাফ পড়ানো অবস্থায় ছিলেন। 

এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য জানতে চান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। পুলিশের দুই সদস্য বলেন, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে আসামিদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিতে হবে।

চেয়ারম্যান বলেন, উনাদের হ্যান্ডকাফ পরানোর প্র্যাকটিস তো এই ট্রাইব্যুনালে নেই, পরাচ্ছেন কেন? 

ট্রাইব্যুনালকে পুলিশ সদস্য নুরুন্নবী জানান, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের হ্যান্ডকাফ, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে এভাবে হাজির করা হয়েছে। 

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের হ্যান্ডকাফ পরানোর নিয়ম রয়েছে। আর কোর্টরুমে আসার আগেই সেটা খোলা হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা আসামিদের আজকের আচরণ নিয়ে যেটা আমাদের বলেছেন, তা বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা। 

এ সময় শাহজাহান খান বলেন, প্রিজন ভ্যান থেকে নামার আগেই আমাকে পেছনে দুই হাতমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। আর এজলাসে উঠানোর পর হ্যান্ডকাফ খোলা হয়েছে। আমি তখন পুলিশকে আপত্তি জানিয়ে বলেছি, তোমরা আমাকে নামার আগেই হ্যান্ডকাফ পরাচ্ছো কেন? তাহলে আমি কীভাবে গাড়ি থেকে নামবো। তারা আমার কোনো কথা শুনেনি। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের আরও ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার ন্যূনতম মর্যাদাটুকু চাই। সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এ সময় প্রশ্ন করেন, ‘আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ দল?’

এদিন এই মামলার ১৭ আসামিকে কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক দুই উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, ডা. দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, বিচারপতি এ এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, সাবেক এমপি সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম। 

এছাড়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ