খুলনায় আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, পুলিশের নীরবতায় ক্ষুব্ধ এনসিপি
Published: 20th, April 2025 GMT
খুলনায় ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, খুলনা জেলা শাখার’ ব্যানারে মিছিল করে। তবে মিছিলে দলের নগর, জেলা বা ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার পদ-পদবীধারী কাউকে দেখা যায়নি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুলনায় এটাই আওয়ামী লীগের প্রথম কোনো কর্মসূচি পালিত হলো। মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই ভিডিও এবং ছবি থেকে দেখা যায়, একদল লোক ব্যানার নিয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ করছেন। ব্যানারে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি আছে। এ সময় ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘শেখ হাসিনা ফিরবে আবার বীরের বেশে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
আ.
গাইবান্ধার সাবেক এমপি সারোয়ার কবির কারাগারে
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘‘আমাদের নির্দেশনা ছিল মিছিলে পরিচিত কোনো মুখ থাকবে না। এ কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অপরিচিত নেতা–কর্মীদের দিয়ে মিছিল করানো হয়েছে।’’
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল বাশার বলেন, হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে ঝটিকা মিছিল করে পালিয়ে গেছে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। সকালের দিকে হওয়ায় সেই সময় রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা ছিল। পুলিশ মিছিলকারীদের আটক করতে তৎপর আছে।
গণহত্যা ও গুম, খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এ দলটি প্রকাশ্যে মিছিল করা এবং পুলিশের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি- এনসিপি। আজ রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের খুলনার সংগঠক আহাম্মদ হামিম রাহাত।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ ম ছ ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
ছাদ উড়ে যাওয়া সেই বাসের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় একাধিক সংঘর্ষে ছাদ উড়ে যাওয়ার পরও কয়েক কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই যাত্রীবাহী বাসের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
গত শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রেজিস্ট্রেশন স্থগীত করে বাস মালিককে গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) একটি নোটিশ দিয়েছে বিআরটিএ। যেখানে রেজিস্ট্রেশন স্থায়ীভাবে বাতিল না করার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।
বিআরটিএ’র ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেল (একুরিয়া) এর উপপরিচালক (প্রকৌশল) মো. সানাউল হক এই নোটিশ ইস্যু করেন।
নোটিশে বলা হয়, দ্রুতগতির বাসটি এক্সপ্রেসওয়ের কামারখোলা রেল ফ্লাইওভারে একটি প্রাইভেট কারে ধাক্কা দেয়। পরে একটি কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়। এতে বাসটির সামনের অংশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পেছনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে চালক আতঙ্কিত হয়ে বেপরোয়া গতিতে বাস চালাতে থাকে। এরপর বাসটি সমসপুর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ে ধাক্কা দেয়, ফলে বাসটির পুরো ছাদ উড়ে যায়। এত বড় দুর্ঘটনার পরও চালক বাসটি চালাতে থাকে। এতে বাসে থাকা ৬০ জন যাত্রীর মধ্যে ৮ জন আহত হন।
বিআরটিএ মালিককে বাসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ঢাকার কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবাহী বাসের ছাদ উড়ে যাওয়া আলোচিত যাত্রীবাহী বাসটির গন্তব্য ছিল বরগুনার পাথরঘাটায়। ছাদ উড়ে যাওয়ার পর বেপরোয়া গতির বাসটি প্রায় ছয় কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই বাসটির চালকের নাম শহিদুল ইসলাম।
বরিশাল বাসমালিক গ্রুপের কার্যালয়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, এই বাস কোম্পানির কোনো কাউন্টার সেখানে নেই। এই কোম্পানির পাঁচটি বাস ঢাকা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি হয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় চলাচল করে।
দুর্ঘটনায় ছাদ উড়ে যাওয়ার পরেও বাসটি কেনো প্রায় ৬ কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে গেলেন চালক? এর মূল কারণ কী? এমন প্রশ্নে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক মো. জগলুল ফারুক বলেন, “বাসটির ব্রেকের পাইপ ফেটে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন চালক। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাসটি ছয় কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। আর এতে ৮ যাত্রী আহত হলেও বাকি যাত্রীরা সবাই অক্ষত অবস্থায় আছেন।”
তবে বেশ কয়েকজন বাস চালক এমন কথার যুক্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী চালকরা বলেন, ব্রেক ফেল হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত নিশ্চিত। কিন্তু এখানে তা হয়নি। মূলত চালক ভয়ের কারণে এতটা পথ বেপরোয়াভাবে চালিয়ে এসেছেন। কারণ, বাসটির পেছনে সেনাবাহিনীর গাড়ি ছিল এবং হাইওয়ে পুলিশ ছিল কাছাকাছি।
ঢাকার সায়েদাবাদে বাসটির টিকিট কাউন্টারে ওই দিন দায়িত্বে ছিলেন মো. সাইফুল। তিনি বলেন, “আমরা যাত্রীদের নাম ও মুঠোফোন নম্বর টিকিটে লিখে দেই। কোনো খাতায় তা লিবিবদ্ধ করি না।”
পাথরঘাটায় বাসটির টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান বলেন, “বাসটি ঢাকা থেকে ছেড়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটায় পাথরঘাটায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তবে আমার কাছে ওই বাসে থাকা যাত্রীদের কোনো নাম, মুঠোফোন নম্বর নেই। আমরা এসব বিবরণী রাখি না।”
বিভিন্ন চেষ্টার পর গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) চালক শহিদুলকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়। কেন বাসটি এতটা পথ তিনি বেপরোয়াভাবে চালিয়ে নিয়ে গেলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই অবস্থায় গাড়ি থামানোর কোনো পরিস্থিতি ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে অনেকটা হতভম্ব হয়ে পড়ি। ভেতরে আতঙ্ক কাজ করছিল। এর আগে আমি কখনো এমন অবস্থার মুখোমুখি হইনি। কীভাবে কী করেছি, বলতে পারব না।”
দুর্ঘটনা কীভাবে হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এক্সপ্রেসওয়েতে উল্টো পথ (রং সাইড) দিয়ে হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার এসে পড়ে। সেটাকে সাইড দিতে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে প্রায় ৬০ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে বাসটি ছাড়ে। ঘণ্টাখানেক পর বাসটি ঢাকা–মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে। বাসটি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের কামারখোলা সেতুতে উঠলে একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে সজোরে ধাক্কা লাগে। সে সময়ই বাসের ছাদ সামনে থেকে ভেঙে পেছনে গিয়ে আটকে থাকে। চালক বাসটি না থামিয়ে আরও দ্রুতগতিতে চালাতে থাকেন। পরে বাসটি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে সমষপুরে গেলে ছাদটি উড়ে পড়ে যায়। এসময় একটি প্রাইভেট কারকেও ধাক্কা দেয় বাসটি।
যাত্রীসহ ছাদবিহীন বাস চালিয়ে যেতে থাকেন চালক। সমষপুর অতিক্রম করে আরও একটি প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয় বাসটি।
ঢাকা/রতন/এস