পবিত্র ঈদুল ফিতরে জনগণকে যানজটহীন মহাসড়ক ও ন্যূনতম লোডশেডিং উপহার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রবিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা বলেছেন, এখন পর্যন্ত আমি শুধু ভালো কথা শুনছি এই ঈদ নিয়ে। সবাই বলছে, সবকিছু খুব সুন্দরভাবে সংগঠিত ছিল।

তিনি আরো বলেন, এখন একটা মানদণ্ড তৈরি হয়েছে এবং এটাকে বছরজুড়ে ধরে রাখার সময় এসেছে। 

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দলটির নেতৃত্ব দেন সড়ক পরিবহন ও সেতু, রেলপথ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

কীভাবে ঈদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, তা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, আমরা আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় হিসেবে নয়, বরং একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করেছি।

তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকে কীভাবে পরিষ্কার করে ঈদযাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল, যেখানে অন্যান্য মন্ত্রণালয়, এমনকি বেসরকারি খাতও পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যুক্ত ছিল।

সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, “যখন আমরা সায়েদাবাদ টার্মিনালে গিয়েছিলাম, তখন সেটি নোংরা এবং বিশৃঙ্খল ছিল। দেখতে ছিল যেন একটি বিশাল ইউরিনাল। আমরা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটা সমাধান করি।”

উপদেষ্টা জানান, কোনো কর্মকর্তা নিজ নিজ বাড়িতে যাননি ঈদের ছুটিতে। সবকিছু ঠিকভাবে চলছে কি না, তা নিশ্চিত করতে তারা মাঠে ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ঈদুল আজহার সময়েও লোডশেডিং ন্যূনতম থাকবে এবং কোনো ধরনের যানজট থাকবে না। ইনশাআল্লাহ, ঈদুল আজহাতেও হবে নির্বিঘ্ন আয়োজন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী শেখ মহিউদ্দিন, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ সাথীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।

ঢাকা/হাসান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কারের সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নের পর নির্বাচন চায় এনসিপি

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশগুলো অক্ষরে অক্ষরে বাস্তাবায়নের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একইসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই সংস্কার বাস্তাবায়ন করে নির্বাচন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র সশরীরে জমা দেওয়া, দল নিবন্ধন নবায়ন, দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানো, ঋণেখেলাপি ও হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে সদস্যপদ বাতিলসহ অন্তত নয়টি দাবি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে তুলে ধরেছে এনসিপি।

রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এতে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন। দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, আইন সংস্কার, নিবন্ধনের সময়সীমা ও নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দলটির প্রতিনিধিরা।

বৈঠক শেষে এনসিপির সার্বিক আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হেসেবে আমরা অনেকগুলো কথা ইসি থেকে শুনতে পাই। যেগুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, এটা ইসি থেকে এসেছে। এজন্য আমরা বলব- কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবেন।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন- সে বিষয়ে কাজ শুরু করতে পারেন বলে জানান তিনি।

‘কিন্তু রোডম্যাপ বা সরকার থেকে কোনো দিকনির্দেশনা আসার আগেই যখন তারা নিজেদের থেকে কথা বলে থাকেন সেজন্য আমরা সন্দেহ পোষণ করি’, যোগ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

ইসি পুনর্গঠন নির্ভর করবে ঐকমত্য কমিশনের ওপর
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, ১৭ এপ্রিলের চিঠিতে সংস্কারের বিষয়গুলো ফোকাস করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের মাধ্যমে যেন নতুন নির্বাচন আসে, ইসি যেন সে দিকে ধাবিত হয়- জনদাবির মুখে সেটা যেন হয় তা জানিয়েছি।’ বৈঠকে ভোটের সময়কাল নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা স্পেসিফিক বলেছিলাম, (সিইসি ও ইসি নিয়োগ) ২০২২ এর যে আইন রয়েছে সে বিষয়ে আমরা পূর্বে জানিয়েছিলাম, আইনটা অবৈধ। অন্যান্য দলও জানিয়েছে অবৈধ। সে আইনের অধীনেই হয়েছে বর্তমান (ইসি)। আমরা এ আইনের বিরোধিতা করি। কিন্তু এখন যারা আছেন, তাদেরকে সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে নিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট আসার পরে তারা থাকতে পারলে থাকবে; না থাকতে পারলে থাকবে না। এটা ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে। কারও প্রতি কোনো অবজেনকশন নেই, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের অনুযায়ী হোক। যারা কমিশনার রয়েছেন, সে বিষয়ে না, আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি (ইসিকে)। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আকারে সরকার, ঐকমত্য কমিশন থেকে ডিসিশন আসে সে বিষয়ে ইসি পুনর্গঠন হলে আমরা দেখব। যদি না হয় তখন এ বিষয়ে কমেন্ট করব।’

প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন চায় এনসিপি
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে এনসিপি। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট যখন ফাইনাল হয়ে আসবে, তখন সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক কমিশনে পাঠাবে। ওই সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবায়ন হয়। আমরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসেছিলাম, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও বলেছি। ফাইনাল হতে তা বাস্তবায়নের জন্য বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘ইসি নিত্যকাজের কাজগুলো করতে পারে। অভ্যন্তরীণ কাজগুলোও করতে পারে। কিন্তু যখন নির্বাচনের ফুল ফেইজের কাজে যাবে সে বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের যে ফাইনাল রিপোর্ট আসবে, তার মতো হওয়া উচিত বলে মনে করি। তাহলে নতুনভাবে দেশে সুন্দর যাত্রা শুরু হবে। ডেমোক্রেটিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য ইলেকশন রিফর্ম অতি জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে প্রক্রিয়া রয়েছে, ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টটা আসার পরে, সিদ্ধান্তগুলো হওয়ার পরে সে অনুযায়ী যদি ইসি পরিচালিত হয় তাহলে বাংলাদেশে সুন্দর নির্বাচন হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক সংস্কার জরুরি। অনেক বিষয়ে ইসি সম্মত হয়েছে, আইনগুলো ঐকমত্য কমিশনের হয়ে আসতে হবে।’

এনসিপির এই মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা তাদের জানিয়েছিলাম, সংস্কারের প্রত্যেকটি রিপোর্টের পাতা বাই পাতা, ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড, প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আগামী একটি নির্বাচনে যেতে হবে।...সংস্কার সুপারিশের প্রতিটি লাইন এসেছে, সেগুলো নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে প্রায়োগিক আকারে বাংলাদেশকে সেদিকে যাত্রা শুরু করতে হবে। সিইসি একমত হয়েছেন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করে, না হলে আমরা আস্থা পোষণ করতে পারব না।’

তিন নির্বাচনের জড়িতদের বিচার দাবি
বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

বৈঠকের বিষয়ে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিস্ট কাঠামোতে নিয়ে গিয়েছিল। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এর দায় নির্বাচন কমিশনেরও। বিগত তিন নির্বাচনগুলোতে যারা প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের সঠিক প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কোনো দলের পক্ষে না যেতে পারে। 

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে অনেক মানুষকে গুম-খুন নির্যাতনের সঙ্গী করা হয়েছিল। আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটা ফ্যাসিস্ট কাঠামোতে রূপান্তর করা হয়েছিল। আর এই ফ্যাসিস্ট কাঠামোর পেছেনে অন্যতম ভূমিকা ছিল নির্বাচন কমিশনের।’

এনসিপির এই নেতা জানান, মনোনয়নপত্র জমা দিতে সশরীরে আসার বিধান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসি থেকে নির্বাচনের সার্টিফিকেশন দেওয়া, প্রার্থীদের হলফনামা তদন্ত করে তার সত্যতা নিরূপণ করা, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে আচরণবিধি ও ব্যয়ের বিধিতে পরিবর্তন আনা, ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বন্ধ করা, হলফনামায় ভুল তথ্য থাকলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ও নির্বাচিত হলেও যেন তারা সংসদে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানো, রাজনৈতিক দলগুলো যেন অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা করে তা মনিটরিং করার কথা তারা তুলে ধরেছেন। এগুলো বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচনে যাওয়া ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্ভব হবে না। 

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, একই নামে দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে, অফিস নেই অথচ দলের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তাই প্রত্যেকটা দলকে নতুন করে নবায়ন করা এবং সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করতে তাগিদ দিয়েছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ