বলপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে গুমবিরোধী সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের ফটকে এ মানববন্ধনে অংশ নেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, সরকার গণহত্যার বিচারের কথা বলে এই গুম-খুনের বিচার দীর্ঘায়িত করছে। আমরা দেখেছি, সেনানিবাসের ভিতরে আয়নাঘর ছিল। ৫ আগস্টের পরে সেনানিবাসের ভিতরে ৬ শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছিল। সরকার আজও তাদের তালিকা প্রকাশ করেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে গুম-খুন এবং ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার করতে হবে। ছাত্র-জনতা হত্যার সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত, তাদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। 

মায়ের ডাকের মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৮ মাস পরেও বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে না। ৫৩ বছরের বাংলাদেশে এই প্রথম সকলের ঐক্যমতের একটি সরকার রয়েছে। আমরা এই সরকারকে সমর্থন করি। দ্রুত এ বিচার করা উচিত বলে মনে করি।

মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, গুমের সাথে জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী খুনিদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোল চলবে। প্রয়োজনে আমরা আবার রাজপথে নামব।

মানববন্ধনে শেষে সানজিদা ইসলাম তুলির নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয়। স্মারকলিপিতে ছয়টি দাবি জানানো হয়।

মায়ের ডাকের দাবিগুলো হলো:
১। ‘আয়নাঘর’ ও গুম-নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে যে, এই অপরাধীরা দেশের সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে না।

২। খুন, গুম ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠাতে হবে।

৩। অভিযুক্ত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের পদ থেকে অপসারণ এবং তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচারিক তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত র‍্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, ডিবি, সিটিটিসির সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

৪। ‘আয়নাঘর’ সংরক্ষণের জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে প্রমাণ নষ্ট বা গোপন করা না যায়। প্রমাণ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। 

৫। ভবিষ্যতে গুম, নির্যাতন ও গোপন বন্দিশালার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং সংবিধান ও মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার করতে হবে।

৬। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর কর মকর ত র সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আগামীকাল সারা দেশে মহাসমাবেশ করবেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা

ছয় দফা দাবিতে আগামীকাল রোববার সারা দেশে মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। সব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এ সমাবেশ হবে।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। মানববন্ধন শেষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের নামফলক লাল কাপড়ে ঢেকে দেন আন্দোলনকারীরা। আজকে তাঁদের কর্মসূচি ছিল ‘রাইজ ইন রেড’।

আজকের কর্মসূচি পালনকালে আন্দোলনকারীরা ‘মামা থেকে মাস্টার, মামাবাড়ির আবদার’, ‘এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’, ‘ষড়যন্ত্রের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দাও’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম মানববন্ধনে বলেন, আগামীকাল মহাসমাবেশের মাধ্যমে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা করবেন।

উল্লেখ্য, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

আজকের মানববন্ধনে মাসফিক ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে থেকে বলা হয়েছিল বৈঠকে উপদেষ্টা, সচিব থাকবেন। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি। শুধু দাবিদাওয়ার পক্ষে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আর কোনো বৈঠক নয়, রাজপথে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি চলমান থাকবে।

এদিকে একই দাবিতে বেলা দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে আগারগাঁও মেট্রোস্টেশন মোড়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

গত বুধবার ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। পরে তাঁরা সারা দেশে বৃহস্পতিবার ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের বৈঠক আছে। বৈঠকের আগপর্যন্ত রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে।

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থাকায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে ছিলেন না। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামও ঢাকার বাইরে ছিলেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। দুপুর ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ৩টার দিকে।

এই আলোচনায় শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হননি। এ অবস্থায় তাঁরা আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মশালমিছিল করেন তাঁরা। গতকাল শুক্রবার দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জুমার নামাজের পর একযোগে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
  • হাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
  • আমরা আর কত অপেক্ষা করব, প্রশ্ন গুম হওয়া বাবার সন্তানের
  • পদ্মার বালু উত্তোলন ঘিরে নড়িয়ায় বিএনপির দুই পক্ষ মুখোমুখি
  • সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ
  • সারা দেশে সব কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ 
  • শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে ছাত্রদলের মানববন্ধন
  • ঠাকুরগাঁও হতে পারে মেডিকেল ট্যুরিজমের হাব
  • আগামীকাল সারা দেশে মহাসমাবেশ করবেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা