দ্রুত হাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
Published: 20th, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে দ্রুত হাসপাতালের কার্যক্রম চালু, প্রয়োজনীয় ক্লিনিক্যাল ক্লাস (হাতে-কলমে শিক্ষা) নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করেন।
পুলিশ প্রথমে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে বেলা সাড়ে ১১টার সময় তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের ওপর লাঠিপেটা করেছেন। কারও কারও গায়ে হাত তোলা হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি আন্তরিক। কিন্তু যেহেতু তারা রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল এবং সরতে চায়নি, তাই কিছুটা বল প্রয়োগ করে আমরা তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছি। এর বেশি কিছু হয়নি এখানে।’
বিভিন্ন দাবিতে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছেন। বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০টায় কলেজের সামনে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সড়কে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরির মাধ্যমে সড়ক অবরোধ করে তাঁদের দাবির পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন সড়কের দুই দিকে অনেক যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী শান্তিগঞ্জ থানার পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে আসেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, কিন্তু তাঁরা অবরোধ তুলতে রাজি হননি। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের জোর করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করেছি। তারা মূলত দাবিগুলো নিয়েই সড়কে গিয়েছিল। আমরা সব শিক্ষকেরাই তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।’
২০২১ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০২৩ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়। ২০২৪ সালে ক্যাম্পাসে ৫০০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও এখনো হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি। এখন বলা হচ্ছে ২০২৬ সালে হবে।
হাসপাতাল চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে পারছেন না। ওয়ার্ড সেবা না থাকায় হাতে–কলমে শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। চলতি বছরের জুনের মধ্যে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতাল চালু, পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল ক্লাস নিশ্চিত, এর আগে প্রয়োজনীয় ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লিনিক্যাল ক্লাসের ব্যবস্থা করা। জেলা সদরে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কমপক্ষে তিনটি বাসের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মদনপুর এলাকায় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অবস্থিত। ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এর প্রায় দুই বছর পর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয় প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে কলেজে পাঁচটি ব্যাচে ২৮০ জন শিক্ষার্থী আছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ সড়ক থ ক কল জ র
এছাড়াও পড়ুন:
এভাবে আর কত দিন নেইমারের
সেদিন মাঠ থেকে কার্টে করে যেতে যেতে কাঁদছিলেন তিনি। তা কি শুধুই পেশিতে চোট পাওয়ার যন্ত্রণায়? নাকি অশুভ কোনো শঙ্কায়?
মনেপ্রাণে প্রচণ্ডভাবে নেইমার চাইছেন পরের বছর বিশ্বকাপটি খেলতে। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনেরও তীব্র তাগিদ তাঁকে মাঠে ফেরানোর। যেভাবে বারবার তা পা দুটি বিশ্বাসঘাতকতা করছে, যেভাবে একটু ট্যাকলেই তিনি ভেঙে পড়ছেন– তাতে তাঁর বিশ্বকাপ যাত্রা নিশ্চিতভাবে হুমকির মুখে। গত ছয় মাসে তিন তিন বার দুই উরুতে চোট পেয়েছেন। যেখানে তাঁকে নিয়ে কোচের অনুশীলনে ব্যস্ত থাকার কথা সেখানে সান্তোসের মেডিকেল টিমকে কিনা উঠেপড়ে লেগে থাকতে হয় নেইমারকে ফিট রাখার কাজে।
পেশাদার ফুটবল দুনিয়ায় এতটা তুলতুলে শরীর নিয়ে কীভাবে ২০২৬ বিশ্বকাপে তিনি হলুদ জার্সি গায়ে জড়াবেন– তা নিয়ে কানাঘুষা আছে। শেষ কবে তিনি চোটমুক্ত হয়ে পুরো মৌসুম খেলেছিলেন তা জানতে গুগল করতে হয় সমর্থকদের। জানা যায়, এক মৌসুমে ৩৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি সেই ২০১৬-১৭ মৌসুমে। চোট আঘাতের এই চক্রে বারবার যেন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাঁর দুটি পা। এতে কি নেইমারেরও কোনো গাফিলিত নেই ? ব্রাজিলের ও’গ্লোবা দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকাল, যেখানে নেইমারের উচ্ছল জীবনযাপনের শৃঙ্খলা ভঙ্গকে অনেকটাই দায়ী করা হয়েছে।
গেলো মাসে যেমন, সান্তোসের হয়ে পাওলিস্তা ম্যাচের সময় গোড়ালিতে চোট পেয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে খেলতে দেখা গেছে তাঁকে। অথচ সেই ম্যাচ শেষ হতে না হতেই তাঁকে দেখা যায় সাও পাওলোর একটা কার্নিভালে বন্ধুদের সঙ্গে নাচতে। ওয়াল্টার কাসাগ্লান্দের মতো ব্রাজিলের বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার যা নিয়ে সমালোচনা করেন নেইমারকে। পরে অবশ্য নেইমার জানান তাঁর অতটা চোট লাগেনি ম্যাচে। এটি ঠিক যে নেইমারকে পেয়ে সান্তোসের আর্থিক লাভ হয়েছে অনেকটা। স্পন্সর এসেছে, ম্যাচের টিকিট বিক্রি বেড়েছে, জার্সি বিক্রিও তুঙ্গে। কিন্তু নেইমারকে মাঠে যেভাবে চাইছেন তাদের কোচ পেদ্রা কাইজিনহা সেভাবে তাঁকে মোটেই পাচ্ছেন না।
সান্তোসের হয়ে ৯ ম্যাচের মাত্র একটিতে পুরো ৯০ মিনিট নেইমারকে খেলাতে পেরেছেন কোচ। তবে তিনটি গোল আর তিনটি অ্যাসিস্ট করে চার ম্যাচে সেরা হয়েছেন। এই মুহূর্তে নেইমারের চোটের যে ধরন তাতে দুই থেকে ছয় সপ্তাহ লাগতে পারে তাঁর মাঠে ফেরার। ফেব্রুয়ারিতে যোগ দেওয়ার পরেই একবার চোট পেয়ে ৪২ দিনের বিরতিতে ছিলেন। তাছাড়া ২৫ জুন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সান্তোসের চুক্তি। ক্রীড়া সাংবাদিক ফেব্রেজিও রামানোর মতে সেটা আর নবায়ন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
অথচ নেইমার চেয়েছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবল খেলে জাতীয় দলে ফিরবেন। জুনে ইকুয়েডর আর প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নেইমারকে খেলাতে চেয়েছিল ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা। তারা দেখতে চেয়েছিলেন নেইমারের ফিটনেসের ব্যাপারটি। দু’দিন পরপর চোটে পড়ছেন আর কয়েক মাস পর মাঠে ফিরে আহত হচ্ছেন! ধারাবাহিক ম্যাচ খেলার ফিটনেসের পরীক্ষায় কিছুতেই পাস করতে পারছেন না বছর তেত্রিশের এই লেফট উইঙ্গার। জাতীয় দলের মেডিকেল স্টাফরা গভীরভাবে তাঁর রিহ্যাব প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। জুনে নেইমারের ফেরার আশা ছেড়ে দিয়ে এখন সেপ্টেম্বরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ব্রাজিল ফুটবল সংস্থার মেডিকেল স্টাফ। যারা কিনা এই মুহূর্তে নেইমারের উরুর পেশির সুস্থতার ব্যাপারে সান্তোসের মেডিকেল বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে চলেছেন।
দুই হাঁটুর লিগামেন্ট অস্ত্রোপচারের পরে দারুণভাবে মাঠে ফিরে আসার উদাহরণ আছে ব্রাজিল ফুটবলে। রোনালদো নাজারিও চোট আঘাতের পর ফিরে এসেছিলেন পুরো ফর্মে। এছাড়াও গ্যাব্রিয়াল জেসুস ২০২২ সালে অস্ত্রোপচারের পর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠে। সেখানে নেইমার যদি মাঠে কিছু কৌশল ব্যাবহার করেন এবং শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে জীবনযাপন করেনা তাহলে তিনিও ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
গত তিন বছরে নেইমারের যত ইনজুরি
অক্টোবর, ২০২৩ (ব্রাজিল): এসিয়েল অ্যান্ড মিনিসকাস টিয়ার
অক্টোবর, ২০২৪ (আল হিলাল): ডান পায়ে উরুর পেশিতে চোট
২ মার্চ, ২০২৫ (সান্তোস): বাম পায়ে উরুতে চোট
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ (সান্তোস): বাম পায়ে উরুতে চোট
বার্সেলেনা এবং পিএসজিতে দশ বছর খেলার সময় মোট ১১ বার গুরুতর ইনজুরিতে পড়েছিলেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে পায়ের পাতার হাড় ভেঙে যাওয়া, গোড়ালি মচকে যাওয়া, উরুর পেশিতে টান পড়া। সব মিলিয়ে চোট আঘাত নিয়ে তাঁকে প্রায় ৫০০ দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে।