আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেছেন, ‘আমাদের দেশে একসময় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধারণা ছিল যে আইন পেশা নারীদের জন্য উপযুক্ত নয়। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় এই যে বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের নারীরা সেই অচলায়তনকে অতিক্রম করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইন পেশার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন।’

আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) আজ রোববার সকালে এক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিরা এ সময় বেঞ্চে ছিলেন। আইনজীবী ও আগত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আদালতকক্ষ ছিল পূর্ণ।

ফারাহ মাহবুব বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের আইনের আশ্রয় লাভ ও বিচারপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করাই বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব। বিচার বিভাগ দেশ ও জনগণের আইনি ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে যাবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এর আগে ২৪ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। গত ২৫ মার্চ শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁদের নিয়োগ কার্যকর হয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া পঞ্চম নারী বিচারপতি।

প্রথা অনুসারে আজ নবনিযুক্ত দুই বিচারপতিকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান ও পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন দুই বিচারপতির কর্মময় জীবন তুলে ধরে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন।

আজকের সংবর্ধনায় ফারাহ মাহবুব বলেন, বাংলাদেশে মোট আইনজীবীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী আইনজীবী রয়েছেন, যাঁরা আদালতে মামলা পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছেন। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারী বিচারক মোট সংখ্যার ৩৫ শতাংশ, যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে বিচারকার্য পরিচালনা করছেন।

দেশের উচ্চ আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বর্তমানে ১০ জন উল্লেখ করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ‘এ সংখ্যা অদূর ভবিষ্যতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ সংখ্যা বৃদ্ধি শুধু নারীর ক্ষমতায়নের জন্যই যথেষ্ট নয়, বরং সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা নিশ্চিতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক মামলার বিষয়বস্তু রয়েছে, যেখানে বিশেষভাবে নারীরাই ভিকটিম অথবা বিচারপ্রার্থী হন। এসব ক্ষেত্রে নারী আইনজীবী বা নারী বিচারক বিচারকাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে বিচারপ্রার্থীর জন্য স্বস্তিদায়ক হয় এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও জনমুখী ও জেন্ডার ফ্রেন্ডলি করে তোলে।’

শুরুতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ‘গণতন্ত্রের বহুবিধ উৎকর্ষের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণের অভিপ্রায়, বাক্‌স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়।...যাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা লাভ করেছে, সেসব বীর শহীদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা নিবেদন করছি সেসব মা-বোনের প্রতি, যাঁরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত হয়েছেন। একই সঙ্গে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁদের অসামান্য বীরত্ব ও দেশপ্রেমের চেতনা আমাদেরকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিকের মর্যাদা দিয়েছে।’

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আরও বলেন, ‘বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি জুলাই বিপ্লবের সেই সাহসী সন্তানদের, যাঁরা নিঃশঙ্ক চিত্তে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন রচনা করেছেন। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানে শামিল হয়ে যাঁরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার আন্দোলনে অংশ নিয়ে অকাতরে নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন, আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাঁদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপ ল ব ভ গ র র ব চ রপত আইনজ ব র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যারিস্টার সারোয়ারের বক্তব্যের প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের 

বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফের বিরুদ্ধে প্রায় ১০ কোটি টাকার দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেনের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যারিস্টার সারোয়ারের দেওয়া পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিওটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যারিস্টার সরোয়ার গত ১৬ এপ্রিল তৌহিদুল আরিফের সম্পর্কে কম-বেশি ১০ কোটি টাকার দুর্নীতি উল্লেখপূর্বক খাতওয়ারি দুর্নীতির বিভিন্ন পরিমাণ উল্লেখ করেছেন। এমনকি, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহিনীতে কর্মরত কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন না বলেও তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেন। 

এতে আরও বলা হয়, পুলিশ বাহিনীতে কোনো কর্মকর্তা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ অনুসন্ধান করে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো জেলার পুলিশ সুপারসহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইন অনুযায়ী সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে এ রকম বক্তব্য উপস্থাপন করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মানহানির শামিল। একজন স্বনামধন্য আইনজীবী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত একজন কর্মকর্তাকে যথাযথ অনুসন্ধান ছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার বলায় আমাদের হতাশ করেছে এবং পুলিশ বাহিনীর প্রধানকে জড়িয়ে এ ধরনের অসত্য বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের বক্তব্য পুলিশ বাহিনীর মনোবলকে দুর্বল করা ও সুনাম জনসম্মুখে হেয় করার শামিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে রিট
  • যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের নিশানায় কারা, কী তাঁদের অপরাধ
  • সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণে গতি নেই
  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে ভারতে
  • আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষা, প্রস্তুতিতে যা যা করতে পারেন
  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে
  • পুলিশের কোনো কর্মকর্তা অপরাধে জড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হয়
  • ব্যারিস্টার সারোয়ারের বক্তব্যের প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের 
  • আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ শুরু