জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হননি তিনি, কিন্তু নিয়েছেন আর্থিক সহায়তা
Published: 20th, April 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে আহত হননি মো. ইলিয়াছ হোসেন হিরণ (৩৭)। কিন্তু তিনি ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন।
একইভাবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকেও আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন ইলিয়াছ। তবে বিষয়টি ধরা পড়লে তিনি ১৫ এপ্রিল ফাউন্ডেশনের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেদিন ইলিয়াছ ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে দুই লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদেরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন। আর আহত ব্যক্তিরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধারা আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি (‘ক্যাটাগরি এ’ ও ‘ক্যাটাগরি বি’) অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় নাম তোলার আগে তা যাচাই-বাছাই করে জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সরকার গঠিত গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল।
ইলিয়াছের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সরকারের তালিকা অনুযায়ী, তিনি ‘ক্যাটাগরি এ’-এর একজন ‘জুলাই যোদ্ধা’।
গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে ইলিয়াছের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। আলাপকালে ইলিয়াছ বুঝতে পারছিলেন না যে তিনি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে দাবি করবেন কি না।
ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে একবার আওয়ামী লীগের কয়েকজন মিলে তাঁকে মারধর করেন। আর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্যদের মতো তিনিও বাইরে বের হয়েছিলেন। উত্তরায় গন্ডগোলের মধ্যে পড়েন। তারপর কোথা থেকে পায়ে কী এসে লাগে, তিনি নিজেও জানেন না। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর অন্যরা মিলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। যেহেতু ৫ আগস্ট আহত হয়েছেন, তাই এক অর্থে নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ বলতেই পারেন।
ইলিয়াছ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ১৪ দিন ভর্তি ছিলেন। নথি অনুযায়ী, তিনি ৭ আগস্ট ভর্তি হন। ২১ আগস্ট ছুটি পান। রোগীর ভর্তি–ছুটিসংক্রান্ত নথিতে জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত কথাটি সিল দেওয়া আছে।
তবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে ১৫ এপ্রিল ইলিয়াছ যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তাতে বলেছেন, ৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা তাঁকে ডেকে নিয়ে মারাত্মক জখম করেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হননি। তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হিসেবে সরকারি তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
পায়ে একটি ক্ষত আছে উল্লেখ করে ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট আহত হওয়ার পর প্রথমে একটি হাসপাতালে তাঁকে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে নিটোরে নেওয়া হয়।
তবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইলিয়াছ প্রথমে যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলেছেন, সেখানকার কেউ তাঁর চিকিৎসা নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
আহত হওয়ার আগে একটি জুতার দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন বলে দাবি ইলিয়াছের। ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে থেকে তাঁর নাম এমআইএসে অন্তর্ভুক্ত করেননি। এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে যে চেক দেওয়া হবে, তা–ও তিনি জানতেন না।
তাহলে চেক আনতে কীভাবে গেলেন, জানতে চাইলে ইলিয়াছ বলেন, ‘নিটোরের পরিচালক ফোন কইরা আমি হিরণ (ইলিয়াছ) কি না জানতে চান। পরে কই যাইতে হইবে, তা বলেন।’
নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কেনান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনে আহত হয়ে নিটোরে চিকিৎসা নিয়েছেন, এমন একটি তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে দ্রুত একজনকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়। তালিকায় শুধু দুজনের ঠিকানা ঢাকার ছিল, অন্যদের কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায়। সেই তালিকা থেকেই ইলিয়াছ নামের ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এখন তিনি শুনছেন, এই ব্যক্তি নাকি আন্দোলনে আহত হননি। কিন্তু আন্দোলনে গিয়ে কে আহত হলেন, কে সঠিক, কে বেঠিক, তা দেখার দায়িত্ব তাঁদের নয়। তাঁদের মূল দায়িত্ব চিকিৎসা দেওয়া। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এ ক্যাটাগরির’ আহত তালিকা থেকেই ইলিয়াছ নামের ব্যক্তিকে ফোন করা হয়।
গত ২৬ নভেম্বর থেকে আবুল কেনান নিটোরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের অনেকে নিটোরে চিকিৎসা নিয়েছেন তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার আগেই। আন্দোলনে আহত ৭০ জনের বেশি এখনো হাসপাতালের দুটি বিশেষায়িত ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন আন্দোলন আহত হননি, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের করা প্রতারণার মামলায় মোহাম্মদ লিটনকে কারাগারে পাঠান আদালত.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ৫ আগস ট অন য য় সরক র আহত হ
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হননি তিনি, কিন্তু নিয়েছেন আর্থিক সহায়তা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে আহত হননি মো. ইলিয়াছ হোসেন হিরণ (৩৭)। কিন্তু তিনি ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন।
একইভাবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকেও আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন ইলিয়াছ। তবে বিষয়টি ধরা পড়লে তিনি ১৫ এপ্রিল ফাউন্ডেশনের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেদিন ইলিয়াছ ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে দুই লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদেরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন। আর আহত ব্যক্তিরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধারা আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি (‘ক্যাটাগরি এ’ ও ‘ক্যাটাগরি বি’) অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় নাম তোলার আগে তা যাচাই-বাছাই করে জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সরকার গঠিত গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল।
ইলিয়াছের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সরকারের তালিকা অনুযায়ী, তিনি ‘ক্যাটাগরি এ’-এর একজন ‘জুলাই যোদ্ধা’।
গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে ইলিয়াছের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। আলাপকালে ইলিয়াছ বুঝতে পারছিলেন না যে তিনি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে দাবি করবেন কি না।
ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে একবার আওয়ামী লীগের কয়েকজন মিলে তাঁকে মারধর করেন। আর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্যদের মতো তিনিও বাইরে বের হয়েছিলেন। উত্তরায় গন্ডগোলের মধ্যে পড়েন। তারপর কোথা থেকে পায়ে কী এসে লাগে, তিনি নিজেও জানেন না। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর অন্যরা মিলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। যেহেতু ৫ আগস্ট আহত হয়েছেন, তাই এক অর্থে নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ বলতেই পারেন।
ইলিয়াছ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ১৪ দিন ভর্তি ছিলেন। নথি অনুযায়ী, তিনি ৭ আগস্ট ভর্তি হন। ২১ আগস্ট ছুটি পান। রোগীর ভর্তি–ছুটিসংক্রান্ত নথিতে জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত কথাটি সিল দেওয়া আছে।
তবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে ১৫ এপ্রিল ইলিয়াছ যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তাতে বলেছেন, ৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা তাঁকে ডেকে নিয়ে মারাত্মক জখম করেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হননি। তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হিসেবে সরকারি তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
পায়ে একটি ক্ষত আছে উল্লেখ করে ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট আহত হওয়ার পর প্রথমে একটি হাসপাতালে তাঁকে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে নিটোরে নেওয়া হয়।
তবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইলিয়াছ প্রথমে যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলেছেন, সেখানকার কেউ তাঁর চিকিৎসা নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
আহত হওয়ার আগে একটি জুতার দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন বলে দাবি ইলিয়াছের। ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে থেকে তাঁর নাম এমআইএসে অন্তর্ভুক্ত করেননি। এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে যে চেক দেওয়া হবে, তা–ও তিনি জানতেন না।
তাহলে চেক আনতে কীভাবে গেলেন, জানতে চাইলে ইলিয়াছ বলেন, ‘নিটোরের পরিচালক ফোন কইরা আমি হিরণ (ইলিয়াছ) কি না জানতে চান। পরে কই যাইতে হইবে, তা বলেন।’
নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কেনান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনে আহত হয়ে নিটোরে চিকিৎসা নিয়েছেন, এমন একটি তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে দ্রুত একজনকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়। তালিকায় শুধু দুজনের ঠিকানা ঢাকার ছিল, অন্যদের কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায়। সেই তালিকা থেকেই ইলিয়াছ নামের ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এখন তিনি শুনছেন, এই ব্যক্তি নাকি আন্দোলনে আহত হননি। কিন্তু আন্দোলনে গিয়ে কে আহত হলেন, কে সঠিক, কে বেঠিক, তা দেখার দায়িত্ব তাঁদের নয়। তাঁদের মূল দায়িত্ব চিকিৎসা দেওয়া। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এ ক্যাটাগরির’ আহত তালিকা থেকেই ইলিয়াছ নামের ব্যক্তিকে ফোন করা হয়।
গত ২৬ নভেম্বর থেকে আবুল কেনান নিটোরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের অনেকে নিটোরে চিকিৎসা নিয়েছেন তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার আগেই। আন্দোলনে আহত ৭০ জনের বেশি এখনো হাসপাতালের দুটি বিশেষায়িত ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন আন্দোলন আহত হননি, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের করা প্রতারণার মামলায় মোহাম্মদ লিটনকে কারাগারে পাঠান আদালত