গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়িতে তুসুকা গ্রুপের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে দুইদিন ধরে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন।  সবগুলো দাবি পূরণ না হলে এই বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি লাগাতার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। 

রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮ টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি শুরু করে কারখানার ভেতরেই বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। কারখানার বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।  

এরআগে তারা গতকাল শনিবার সকালে কর্মবিরতি শুরু করে পরে কাজে যোগদান করে। পরবর্তী দুপুর ২টা থেকে আবারও একই দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। বিকেল ৫টার সময় কারখানা ছুটি হয়ে গেলে শ্রমিকরা সবাই বাসায় চলে যায়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির সঙ্গে একাগ্রতা প্রকাশ করে কারখানা গেটে একটি নোটিশ সাঁটিয়ে দেয়। 

শ্রমিকদের দাবি, বিজিএমইএ কাঠামো অনুযায়ী বেতন কাঠামোর ১০০% গ্রেডিং করতে হবে, ঈদের ছুটিতে কোন জেনারেল ছুটি কাটানো যাবে না, বাৎসরিক পিকনিকের আয়োজন করতে হবে। উপকার স্বজন প্রীতি চলবে না, কারখানায় যোগদান অনুযায়ী ছুটির টাকা প্রদান করতে হবে। যে পাওনা রয়েছে তা চলতি মাসে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করাসহ আরও বেশ কিছু দাবি রয়েছে শ্রমিকদের। 

তুসুকা গ্রুপের পরিচালক মো.

তারেক হাসান বলেন, “শ্রমিকদের গতকাল যে দাবি ছিল তা পুরোপুরি মেনে নিয়ে আমরা নোটিশ দিয়ে দিয়েছি। কারখানা খোলা রাখা হয়েছিল তবুও আজ তারা কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করছেন। আমরা কোন শ্রমিক ছাটাই করি না এবং শ্রমিক আইন অনুযায়ী সবকিছুই করা হয়ে থাকে। যদি কোন সংশোধন থাকে তবু আমরা সেটা আলোচনা করে সমাধান করব বলে নোটিশে জানিয়ে দিয়েছি। শ্রমিকদের এই দাবির পেছনে বহিরাগতদের ইন্ধন রয়েছে। আজও শ্রমিকরা গেট ও অন্যান্য জায়গায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।” 

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করছে। কারখানার সামনে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

ঢাকা/রেজাউল/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা খরচে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে হিসাব খুলতে পারবেন ফ্রিল্যান্সাররা

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ হিসাব সেবা চালু করেছে বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এর নাম ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ফ্রিল্যান্সার অ্যাকাউন্ট’। এই হিসাব পুরোপুরি মাশুলবিহীন। হিসাব খোলা থেকে সবকিছুই ডিজিটাল। ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সাররা এই হিসাব খুলে সেবা নিতে পারবেন।

হিসাব খোলা হলে একই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রা ও টাকায় দুটি হিসাব খোলা হবে। আয়ের ৩৫ শতাংশ অর্থ বিদেশি মুদ্রা হিসাবে ও বাকিটা টাকা হিসাবে জমা রাখা যাবে। এর বিপরীতে ডেবিট কার্ড পাবেন ফ্রিল্যান্সাররা, যা দিয়ে দেশে-বিদেশে খরচ করা যাবে। পাশাপাশি এই হিসাবধারীদের ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিগত ঋণ দেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।

আজ রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে এই সেবা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান লুৎফুল হাবিব, কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিটপী দাশ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমানসহ খাতসংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে শুরুতে বিটপী দাশ চৌধুরী বলেন, ১২০ বছর ধরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কখনো ব্যাংকটির সেবা বন্ধ ছিল না। এখন ডিজিটাল সেবার দিকে প্রাধান্য দিচ্ছে ব্যাংক। ফ্রিল্যান্সারদের কাজের ধরনের সঙ্গে চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। সে জন্য নতুন এই সেবা চালু হচ্ছে। এই সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়া যাবে। সে জন্য কাউকে ব্যাংকে আসতে হবে না।

ব্যাংকটির আমানত বিভাগের প্রধান নাভিদ হাসান বলেন, ঘরে বসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ঘরে বসে সেবা নেওয়ার সুযোগ এসেছে। ঘরে বসেই তাঁরা হিসাব খুলতে পারবেন। বিদেশ থেকে অর্থ আসতে ফরম সি পূরণ করতে হয়, তা-ও ঘরে বসে করা যাবে যাবে। কার্ড দিয়ে বিভিন্ন দেশের এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারবেন। এসব হিসাবে মাশুল কাটা হবে না। ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিগত ঋণও দেওয়া হবে। দেশের অন্য কোনো ব্যাংকে ফ্রিল্যান্সারদের এত সুবিধা দিচ্ছে না।

ব্যাংকটির রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান লুৎফুল হাবিব বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশে এক শতকের বেশি বেশি সময় ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রথম ঋণপত্র, প্রথম এটিএম, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড চালু করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এখন বেসরকারি ব্যাংকের ২০-২৫ জন এমডি রয়েছেন, যাঁরা কোনো না কোনো সময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বা গ্রিনলেজে কাজ করতেন। আমরা দেশের স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছি। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দেশের একমাত্র বিদেশি ব্যাংক, যাদের সব সেবা আছে। এখন আধুনিক ও ডিজিটাল সেবার দিকে নজর দিয়েছে। আমাদের ৭০ শতাংশ গ্রাহক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা গ্রহণ করছেন। গত দুই বছরে শাখায় গ্রাহক আসা ৪৫ শতাংশ কমে গেছে।’

লুৎফুল হাবিব বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সাররা দেশের জন্য বিদেশি মুদ্রা আনছেন। ভারতের পরেই আমাদের দেশে বেশি আয় আসছে। উন্নত দেশে শ্রমের মূল্য অনেক বেশি। তাই আমাদের দেশে এই খাতের বিকশিত হওয়ার আরও সম্ভাবনা আছে। সে জন্য ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ হিসাব সেবা চালু করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। ঘরে বসে বিনা মাশুলে মিলবে এই সেবা। শুধু সরকারি কর কাটা হবে।’

বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান বলেন, ‘দেশে বসে কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাজ পাচ্ছেন ফ্রিল্যান্সাররা। সে জন্য তাঁদের সম্মান দেওয়া উচিত। বিদেশ থেকে টাকা আনতে হয়রানি হতে হয়। এখন বিদেশি ব্যাংক এই সেবা দেওয়ায় অনেকে এই পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন।’

এ পেশায় টিকে থাকার হার ৩৫ শতাংশ। সম্মান পেলে আরও অনেকে এই সেবায় থেকে যাবে বলে মনে করেন তানজিবা রহমান। অভিভাবকেরা সন্তানদের এই পেশায় পাঠাতে আগ্রহী হবেন। এখন দেশের সাড়ে ১০ লাখ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং পেশার সঙ্গে যুক্ত। বছরে ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার আসে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এখন আয়ের মাত্র ৩০ শতাংশ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে, কারণ ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করছে না।

ডা. তানজিবা রহমান আরও বলেন, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবীরাও এখন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। এআইয়ের কারণে অনেক চাকরি চলে যাবে, তবে এআইয়ের পেছনে কাজ করার জন্য অনেক মানুষের প্রয়োজন হবে। ফ্রিল্যান্সার কত আয় করছেন, তা প্রচার না করে কী কাজ করছেন, তাঁর যোগ্যতা কী, সেটাও প্রচারের আহ্বান জানান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ