অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত টাস্কফোর্স গঠন করেছিল, তারা যথাসময়েই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কাজটি সর্বমহলে প্রশংসিতও হয়েছে। কিন্তু শ্বেতপত্র কমিটির সুপারিশ–পরামর্শ বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বৃহস্পতিবার ‘ষষ্ঠ বাংলাদেশ ইকোনমিকস সামিট–২০২৫’-এ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গত (আওয়ামী লীগ) সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়নি। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। এমনকি যে নীতিগুলো এখন নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সেটি নিয়েও তাঁরা সংশয়ে আছেন।

এখানে দুটি বিষয় আছে—প্রথমত, সাবেক সরকারের বাতিল হয়ে যাওয়া মধ্যবর্তী পরিকল্পনার স্থলে নতুন কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, বর্তমান সরকারের নেওয়া নীতিমালা ভবিষ্যতে বহাল থাকবে কি না। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে অন্তত দুই বছরের জন্য একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সরকার সেটি না করায় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে দেবপ্রিয় উল্লেখ করেছেন। বিনিয়োগ হলো একটি দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না, বিনিয়োগ না হলে শিল্প ও কৃষিসহ সব খাতের উৎপাদন কমে যাবে। ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই চাইবেন ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের নীতি–পরিকল্পনা যেন বদলে না যায়। সম্প্রতি সরকারের উদ্যোগে মহাসমারোহে যে বিনিয়োগ সম্মেলন হলো, সেখানেও ব্যবসায়ীরা এই প্রশ্নগুলো তুলেছেন। 

আমরা মনে করি, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সুপারিশ কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে। সরকার যদি কোনো কমিটির সুপারিশ কার্যকর না করে, তার ব্যাখ্যাও জনগণকে জানাতে হবে।

শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। সরকারি প্রকল্প থেকে ঘুষ লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। এসব তথ্য দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে সহায়ক হবে। ইতিমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। 

শ্বেতপত্র কমিটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের কাঠামো তৈরি, ২০২৫-২৭ সময়ের জন্য পরিকল্পনা করা; সংস্কারের অগ্রাধিকার ঠিক করা; এলডিসি উত্তরণের কৌশল ঠিক করার কথা বলেছিল। কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ একেবারেই দৃশ্যমান নয়। 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারলেও অর্থনীতিকে গতিশীল করার কার্যকর ও টেকসই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ায় কর্মসংস্থানও বাড়ছে না; যদিও কর্মবাজারে ২৪ লাখ তরুণ–তরুণী যোগ হচ্ছেন। 

২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়েও জনমনে শঙ্কা আছে। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে অতীতে সব সরকারই তেলা মাথায় তেল দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই ধারা অনুসরণ করলে জনগণের বৃহত্তর অংশের জন্য কোনো সুসংবাদ বয়ে আনবে না। সরকার যদি করের আওতা না বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপানোর পুরোনো পথই বেছে নেয়, তা হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। বাজারের ক্ষেত্রে গত রোজার মাসের উদাহরণকে ধ্রুব সত্য বলে মেনে নেওয়ারও কোনো কারণ নেই। ইতিমধ্যে নিত্যপণ্যের দাম নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে; এটা এখনই থামানো দরকার। 

নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক সংস্কার ছাড়া রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে তাঁরা উদ্যোগী ভূমিকা নেবেন, এটাই প্রত্যাশিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র কম ট র ন কম ট

এছাড়াও পড়ুন:

স্মৃতি-আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরে গেল স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অ্যালামনাই মিট অ্যান্ড গ্রিট-২০২৫

স্মৃতির ভেলায় গৌরবের পথ ধরে সামনে এগিয়ে চলার প্রত্যয় নিয়ে স্মৃতি-আনন্দ-উচ্ছ্বাসে অনুষ্ঠিত হলো স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ‘অ্যালামনাই মিট অ্যান্ড গ্রিট-২০২৫’। গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল ২০২৫) সকাল ৯টা থেকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘অ্যালামনাই মিট অ্যান্ড গ্রিট ২০২৫’-এ রেজিস্ট্রেশনকৃত শত শত প্রাক্তন শিক্ষার্থীর উষ্ণ অভ্যর্থনায় ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয় তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত প্রাণের ক্যাম্পাসে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণে পুরো ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে।

বেলা ১১টায় অ্যালামনাই মিট অ্যান্ড গ্রিট-২০২৫-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আহমেদের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ফারাহ নাজ ফিরোজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিভার্সিটির সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইউনুছ মিয়া এবং অ্যালামনাই মিট অ্যান্ড গ্রিট-২০২৫-এ সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ, ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউনিভার্সিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ফারহনাজ ফিরোজ বলেন, ‘আজ ইউনিভার্সিটির জন্য একটি অত্যন্ত আনন্দের দিন। যে আনন্দের আলো এবং উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে ইউনিভার্সিটির প্রতিটি কোনায় কোনায়। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আজকের এই অবস্থানের পেছনে আপনাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই বিদ্যাপীঠ থেকে শিক্ষা অর্জন শেষে আপনারা ছড়িয়ে পড়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আপনাদের এই ছড়িয়ে পড়া মানেই হচ্ছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছড়িয়ে পড়া।

বেলা তিনটায় মধ্যাহ্নভোজের পর বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান র‌্যাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অ্যালামনাই মিট অ্যান্ড গ্রিট-২০২৫। বিজ্ঞপ্তি

আরও পড়ুননিউজিল্যান্ডের ‘টঙ্গারেওয়া স্কলারশিপ’, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সুযোগ১২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম, আইইএলটিএসে ৭ স্কোরে বৃত্তির আবেদন১৭ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২০ এপ্রিল ২০২৫)
  • নতুন নয়, আগের সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে
  • সিডস ফর দ্য ফিউচার ২০২৫ বাংলাদেশের নিবন্ধন শুরু
  • স্মৃতি-আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরে গেল স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অ্যালামনাই মিট অ্যান্ড গ্রিট-২০২৫
  • দাবি না মানলে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের
  • বাজেটে কোনো থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না
  • দখলদারদের ছাড় দেওয়া হবে না: ডিএনসিসি প্রশাসক 
  • ছয় মাসে কী অর্থনৈতিক সংস্কার করা হয়েছে, প্রশ্ন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের
  • ১ মে থেকে দেশজুড়ে ডিম-মুরগির খামার বন্ধের ঘোষণা