আজ ২০ এপ্রিল, রোববার, ২০২৫। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য খ্রিষ্টের জন্মের ২০২৫ বছর। তাই যিশুখ্রিষ্টের জন্মজয়ন্তী বা জুবিলি। আর এই জুবিলি বছরের ২০ এপ্রিল যিশুর গৌরবময় পুনরুত্থানের মহোৎসব শুভ পাস্কা বা ইস্টার। ‘পাস্কা’ হিব্রু শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ পেরিয়ে যাওয়া, বের করে আনা, লাফ দেওয়া। যিশু তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে পাপ বা মন্দতা থেকে মানবজাতিকে পাপমুক্ত করে স্বর্গে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছেন।

এককথায় যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান পাপের ওপর বিজয়! তাই যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের ভিত্তি। অতএব একজন খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসীর জন্য যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান হলো তাঁর বিশ্বাসের আবশ্যিক অঙ্গ ও কেন্দ্র।

গুড ফ্রাইডেকে বলা হয় পুণ্য শুক্রবার (এ বছর এটা ছিল ১৮ এপ্রিল, শুক্রবার)। এই দিন হলো যিশুর মৃত্যুদিবস। মানবজাতির পাপ-পঙ্কিলতার জন্য যিশুর অসহনীয় যাতনাভোগ ও ক্রুশমৃত্যু ঘটে এদিন। যেহেতু মানবজাতির পাপের কারণে এই মৃত্যু, সেহেতু এই দিনে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা নিজ পাপের জন্য অনুতাপ করেন, কৃচ্ছ্রসাধন করেন, উপবাস থাকেন, পাপের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করেন এবং অভিষিক্ত ধর্মযাজকের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর কর্তৃক পাপের ক্ষমা লাভ করেন।

সেদিন যিশুর যন্ত্রণা ও মৃত্যুর কাহিনি পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়, ধ্যান করা হয়। আরও আছে পবিত্র ক্রুশের আরাধনা ও ভক্তিচুম্বন। উপাসনা হয় বেলা তিনটায়। গির্জা বা চার্চ থাকে পরিপূর্ণ।

ইস্টার সানডে হলো মৃত্যু থেকে যিশুর গৌরবময় পুনরুত্থান। রোববারের আগের দিন শনিবার নিস্তার জগরণী অর্থাৎ ইস্টার বা যিশুর পুনরুত্থানের জন্য জেগে থাকা। রাত ১০টায় বা ৮টায় জাগরণী উপাসনা শুরু হয়। ঈশ্বরের মনোনীত জাতিকে যে মোশীর পরিচালনায় মিসরীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত করা হয়, এই ঐতিহাসিক ঘটনাকেন্দ্রিক বাইবেল পাঠ করা হয়। সৃষ্টির কাহিনি শোনানো হয় এবং ঈশ্বর যে মানবজাতিকে তাঁর সেবক যিশুর মধ্য দিয়ে পাপমুক্ত করে নতুন করবেন, সে বিষয়ও পবিত্র বাইবেল থেকে উপাসকমণ্ডলীকে শোনানো হয়।

এরপরই যিশুর গৌরবময় পুনরুত্থান ঘোষণা করেন চিরকুমার অভিষিক্ত যাজক এবং তিনি ও গোটা উপাসকমণ্ডলী গেয়ে উঠে পুনরুত্থিত যিশুখ্রিষ্টের জয়গান। এমন রাতের উপাসনার এই আনন্দক্ষণে বেজে ওঠে বড় ঘণ্টা, জানিয়ে দেয় সবাইকে যিশুর গৌরবময় পুনরুত্থানের শুভবার্তা।

ঐতিহ্য অনুসারে, শনিবারের জাগরণী উপাসনা হওয়ার কথা মধ্যরাত, তথা ১২টা ১ মিনিটে, অর্থাৎ রোববার। বর্তমান পরিস্থিতির আদলে এখন তা হয় আরও আগে রাত ৮ অথবা ৯টায়। তবে বিশ্বাস ঠিকই রেখে মৃত্যুর তিন দিন পর বা তৃতীয় দিবসে যিশু পুনরুত্থান করেছেন।

৪০ দিন কৃচ্ছ্রসাধন, উপবাসের পর খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান যে কতটাই একক ও গুরুত্বপূর্ণ, তা ওপরের অংশে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করা হয়েছে। ইস্টার সানডে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের কেন্দ্র। এই সত্যটির স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশ সরকার কি আদৌ সচেতন?

উদ্‌যাপনের বেলায় বুদ্ধপূর্ণিমা ছুটি পায়, সরকারি ছুটি; দুর্গোৎসবে থাকে ছুটি। এগুলো প্রশংসনীয়। তাহলে গুড ফ্রাইডে ও ইস্টার সানডে, বিশেষভাবে ইস্টার সানডে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের কেন্দ্র ও ভিত্তি হিসেবে কি মহামান্য সরকারের কাছে একই রকম বিবেচনা দাবি করতে পারে না? সরকার এ পর্যন্ত ‘ঐচ্ছিক ছুটি’ দিয়ে খ্রিষ্টানসমাজকে সান্ত্বনার পুরস্কার দিয়ে আসছে।

অনেক বছর ধরে চার্চের কর্তৃপক্ষরা সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কাছে ইস্টারের ছুটির বিষয়ে আবেদন করেই আসছেন! এর কোনো ইতিবাচক ফল এখনো পাওয়া যায়নি।

বৈষম্যহীন দেশ গড়ার প্রত্যয় বর্তমান যুবসমাজ, রাজনৈতিক দল এবং অন্তর্বর্তী সরকারেরও। ধর্মীয় উৎসবগুলোর ছুটির ব্যাপারেও কি ন্যায্যতার সঙ্গে বৈষম্যহীন হওয়া উচিত। সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার; তাই ১৮ এপ্রিল গুড ফ্রাইডে উদ্‌যাপন করতে পারা যাবে। কিন্তু ইস্টার সানডে (পুনরুত্থান রোববার) ২০ এপ্রিল।

ইস্টার ব্যতীত গুড ফ্রাইডের কোনো অর্থই হয় না। তাই অসহায়ের মতোই ইস্টার সানডেতে ২০ এপ্রিল খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের যেতে হবে চাকরিতে, শিক্ষার্থীদের যেতে হবে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে। ইস্টারের দিনে, ইস্টার মহোৎসবে এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। হ্যাপি ইস্টার এমন করে হয়ে ওঠে নিরানন্দ ও বেদনাবিধুর ইস্টার! বৈষম্যহীনতার মর্ম ধারণ করে সেই দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হবে—তার প্রতীক্ষা করছি! সবাইকে ইস্টারের শুভেচ্ছা।

প্যাট্রিক গোমেজ ক্যাথলিক ধর্মযাজক এবং নির্বাহী সচিব, জাতীয় খ্রিষ্টীয় ঐক্য ও আন্তধর্মীয় সংলাপ কমিশন, বাংলাদেশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম নবজ ত র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার পরীক্ষার ফল প্রকাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের (গ ইউনিট) বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শনিবারের (১৯ এপ্রিল) মধ্যে বিস্তারিত ও বিষয় পছন্দক্রম ফরম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে পূরণ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের শুধু বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখের মধ্যে (ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট + অন্যান্য ইউনিট একই সঙ্গে পাসকৃত শিক্ষার্থীসহ) বিস্তারিত ও বিষয় পছন্দক্রম ফরম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে পূরণ করবে। বাণিজ্য শাখার উপস্থিত পরীক্ষার্থীদের শুধু এমসিকিউ অংশের পরীক্ষা আগামী ১৭ মে, ২০২৫ বেলা তিনটায় পূর্বনির্ধাতির অঞ্চলে নতুন আসনবিন্যাস অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুনফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম, আইইএলটিএসে ৭ স্কোরে বৃত্তির আবেদন৭ ঘণ্টা আগে

বিজ্ঞান ইউনিটে যারা ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছিল, তাদের পুনর্নিরীক্ষিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ড্যাশবোর্ডে তাদের ফলাফল দেখতে পারবে এবং ১৬ এপ্রিলের মধ্যে বিস্তারিত এবং বিষয়পছন্দক্রম ফরম অনলাইনে পূরণ করতে হবে।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে সরকার, আবেদন শুরু১৫ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২০ এপ্রিল ২০২৫)
  • সিডস ফর দ্য ফিউচার ২০২৫ বাংলাদেশের নিবন্ধন শুরু
  • স্মৃতি-আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরে গেল স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অ্যালামনাই মিট অ্যান্ড গ্রিট-২০২৫
  • পাকিস্তানের কাছে আজ হারলেও যেভাবে বিশ্বকাপে যেতে পারে বাংলাদেশ
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৯ এপ্রিল ২০২৫)
  • ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত এবং নতুন চ্যালেঞ্জ
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ এপ্রিল ২০২৫)
  • জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘এআই অলিম্পিয়াড ২০২৫’
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার পরীক্ষার ফল প্রকাশ