সংস্কারের স্বার্থে সংবিধানের মূলনীতি বাদ দেওয়ার চিন্তা
Published: 20th, April 2025 GMT
সংবিধানের মূলনীতি রাখার প্রয়োজন আছে কিনা– এই প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির অবস্থান হলো, যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, তারা দলীয় আদর্শকে মূলনীতি হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এবারও এ বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব নয়। তাই সংস্কারকে এগিয়ে নিতে মূলনীতি বাদ দেওয়া যায় কিনা, তা ভাবতে বলেছে তারা। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দিনভর বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন এনসিপি নেতারা।
আলোচনা শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি মৌলিক সংস্কার চায়। এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা থাকতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের স্থায়ী পথ বের করতে হবে। এ নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
নাহিদ জানান, কমিশনের সুপারিশ মতো অন্তর্বর্তী সরকার নয়, নির্বাচনকালীন সরকার চায় এনসিপি। নির্বাচনকালীন সরকার শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজ করবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শাসিত নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের প্রস্তাব করেছেন তারা। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। অর্থবিল ও আস্থা ভোটে সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন।
সাংবিধানিক নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতায় লাগাম টানতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছে কমিশন। এনসিপি জানিয়েছে, এতে তারা একমত হলেও কোন প্রক্রিয়ায় এনসিসি গঠিত হবে, তা নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠক শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বেলা ১১টায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়ে মাঝে মধ্যাহ্নভোজ ও নামাজের বিরতি দিয়ে তা বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে।
প্রথম দিনের বৈঠকে সংবিধান, বিচার ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে তিন কমিশনের সব সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়নি। আগামী মঙ্গলবার বা তার পরে আবার আলোচনা হবে। এতে কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড.
এনসিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন– সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাভেদ রাসেল, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা।
বাহাত্তরের সংবিধানে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি করে। ১৯৭৯ সালে বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস’কে মূলনীতি করে। দলটি আবারও জিয়াউর রহমানের শাসনামলের মূলনীতিতে ফিরতে চাচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধানে মূলনীতির মাধ্যমে দলীয় রাজনৈতিক অবস্থানকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলনীতির প্রয়োজন আছে কিনা– প্রশ্ন রেখেছি। সংবিধানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং মৌলিক অধিকারের কথা বলা থাকে। এতে আলাদা করে মূলনীতির প্রয়োজন আছে কিনা?
আলোচনায় এনসিপির কী অবস্থান ছিল, তা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদে কেউ দু’বারের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী কখনও রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য ও প্রস্তাবিত ‘জেলা সমন্বয় পরিষদ’-এর ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। সারোয়ার তুষার বলেন, এতে একমত হলেও স্থানীয় সরকারে সব জনপ্রতিনিধির ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন চায় এনসিপি। সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনের পাশাপাশি গণভোটেরও পক্ষে দলটি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় রাজনীতিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে মনে করে এনসিপি। আগামীতে যাতে তা না হয়, এ ব্যবস্থা নিতে বলেছি। নির্বাচনের সময় কারা দায়িত্ব পালন করবেন, এ বিষয়ে আরও আলোচনা হতে পারে।
এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টা কারা কীভাবে হবেন, এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এনসিপি কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এনসিসির সদস্যদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেতাকে বাদ রেখে অন্যদের থেকে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার হলেও এনসিপি আলাদা স্বাধীন কমিশন চেয়েছে। নাহিদ বলেন, আগের সীমানায় যেতে চাই না, বরং নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে।
সংস্কারের সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে শনিবার আলোচনা হয়নি জানিয়ে নাহিদ বলেন, গণপরিষদের মাধ্যমে হতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প র ষ ট রপত প রস ত ব মন ত র এনস প ক ষমত সদস য য় এনস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দিনাজপুরে পথেঘাটে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচাপাকা খেজুর
দিনাজপুরে রাস্তার পাশে, খালে-বিলে এবং বাড়ির আনাচে-কানাচে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা-পাকা খেজুর। একসময় রাস্তার ধারে অনেক খেজুর গাছ ছিল। এখন অনেক কমে গেছে। নতুন করে খেজুর গাছের আবাদ করতে দেখা যাচ্ছে না স্থানীয়দের। তবে প্রকৃতির ভারসাম্যের জন্য ও বজ্রপাতের নিরোধক হিসেবে খেজুর গাছের আবাদ বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন তারা।
বছরে দুইবার ফলন আসে খেজুর গাছে, শীতকালে মিষ্টি সুস্বাদু রস, আর গরমকালে খেজুর ফল।
এসময়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে বের হলেই চোখে পড়ছে এই কাঁচাপাকা খেজুর। এখনই অনেক খেজুরে রঙ ধরেছে। তবে এখনো খাওয়ার উপযোগী হয়নি, এখনও খেতে কষ কষ লাগছে, পাকলে তা মিষ্টি হবে। পাকলে অনেকেই এই পাকা খেজুর বাজারেও বিক্রি করবেন। এখনও প্রায় ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগবে খেজুরগুলো পাকতে।
সরকারি সড়কের পাশের গাছগুলো থেকে খেজুর পেড়ে স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা খেতেও শুরু করেছে।
সদর উপজেলার রামনগর এলাকার রুবেল হোসেন বলেন, “আমার বাড়ির পাশে একটি খেজুরের গাছ রয়েছে। বয়স প্রায় অনেক হয়েছে। শীতকালে প্রতিদিন অনেক রস হতো। এখন গরমের সময় গাছে অনেক খেজুর ধরেছে। খেজুরগুলো কাঁচাপাকা, পাকলে খেতে অনেক মিষ্টি। এখনও এক মাস সময় লাগবে খেজুরে পাক ধরতে।”
বিরামপুর রেলগট এলাকার আরাফাত মিয়া বলেন, “এই রেলগেটের দক্ষিণ পাশে রেললাইনের দুই পাশে অনেক খেজুরের গাছ রয়েছে। শীতকালে রাজশাহী থেকে কয়েকজন লোক এসে গাছগুলো থেকে রস নামায়। প্রতিদিন অনেক রস হয়। রস থেকে তারা গুড় তৈরি করে এবং এলাকার মানুষের নিকট বিক্রি করে। এখন গরমকাল, প্রতিটি গাছে প্রচুর খেজুর ধরেছে। খেজুরগুলো পাকলে আমরা এলাকার মানুষেরা পেড়ে খাই। খেতে অনেক সুস্বাদু।”
ঢাকা/মোসলেম/টিপু