সাধারণ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন ও গণভোট এবং জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনে শক্ত আপত্তি আছে বিএনপির। তারা এ বিষয়ে কোনো আপসও করবে না। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ এবং রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে চলমান আলোচনায় আজ রোববারের নির্ধারিত আলোচনায়ও বিএনপি এই অবস্থান তুলে ধরবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দলটি কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছিল।   

বিএনপি মনে করছে, ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন বাধ্যতামূলক করা হলে নির্বাচিত সংসদের ক্ষমতা কমে যাবে।

আবার সংবিধানের যে কোনো সংশোধনের জন্য গণভোট বাধ্যতামূলক হলে সংসদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হবে।

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবারের সংলাপে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, এনসিসি গঠনে তারা রাজি নয়। তবে এ বিষয়ে সেদিন বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। আজ এই আলোচনার কথা রয়েছে। 

বিএনপির আশঙ্কা, এনসিসি গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের ক্ষমতা কমে যাবে। আবার সংসদ ভেঙে দেওয়া অবস্থায় উচ্চ ক্ষমতার এই এনসিসির জবাবদিহির কোনো কাঠামো থাকবে না। আবার নির্বাচনকালীন অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এনসিসি চাইলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করারও সুযোগ থাকবে। 

সংস্কারের জন্য গঠিত পাঁচ কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের মধ্যে– আনুপাতিক ভোটে উচ্চকক্ষ ও এনসিসি গঠন বড় পরিবর্তন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এই দুই সুপারিশকে মৌলিক সংস্কার মনে করছে এবং তা সমর্থন করছে। জামায়াতে ইসলামীও আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের সুপারিশে একমত। দলটি এনসিসি গঠনেও রাজি। তবে তারা প্রস্তাব করেছে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনসিসি বিলুপ্ত হবে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে না। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, এনসিসি গঠিত হলে সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হবে। আবার যখন নির্বাচনকালীন সংসদ থাকবে না, তখন সর্বময় ক্ষমতার এনসিসি রাষ্ট্রের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। তাই বিএনপি এনসিসি গঠনে একমত নয়। তিনি বলেন, আশপাশের কোনো দেশে এমন বিধান নেই। বাংলাদেশেও এমন চর্চা নেই। নতুন করে কিছু চাপিয়ে দিলে তা সমাধানের বদলে সমস্যা তৈরি করতে পারে। গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে দেশ যখন একটি পর্যায়ে উপনীত হবে, তখন এসব বিষয়ে ভাবা যাবে।

অবশ্য ঐকমত্য কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড.

বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় এনসিসি কীভাবে কাজ করবে, তা  সুপারিশে বিস্তারিত বলা আছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত হবে– এ আশঙ্কা অমূলক। প্রশ্ন থাকলে আলাপ-আলোচনার মধ্যে পথ বের করা সম্ভব। কমিশন শুধু রাজনৈতিক দলের মতামত এবং ব্যাখ্যা জানছে এখন। 

সংবিধান সংস্কার 
সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০ সুপারিশের মধ্যে ১৪টিতে একমত এবং নীতিগতভাবে একমত বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটি ছয়টি সুপারিশের সঙ্গে আংশিক একমত পোষণ করেছে। বিএনপি যে সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত নয়, সেগুলো  নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে  আলোচনা করেছে। কেন একমত নয়, তার যুক্তি তুলে ধরে।

কমিশন যেসব সুপারিশের সঙ্গে বিএনপি আংশিক একমত, সেগুলোতে কেন পুরোপুরি একমত নয়, তা জানতে চেয়েছে। বিএনপি কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। বাকিগুলো আজকের আলোচনায় উঠবে।

সংবিধান সংস্কারের তিনটি সুপারিশের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানানোর কথা বলেছিল বিএনপি। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, রোববারের আলোচনায় বিএনপি একই অবস্থানে থাকবে। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকতে হবে।

যদিও ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সমকালকে বলেন, প্রাণবন্ত আলোচনা হচ্ছে। বিএনপিকে অনড় মনে হয়নি। তারা প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে বিস্তারিত মতামত জানাচ্ছেন। কমিশনও কিছু বিষয়ে দলটির মতামতকে গ্রহণ করেছে। 

সংস্কারের সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়েও বড় মতপার্থক্য রয়েছে। কমিশন জানতে চেয়েছিল, সুপারিশ বাস্তবায়নে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। বিকল্প হিসেবে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশ, নির্বাচনের আগে গণভোট, নির্বাচনের সময় গণভোট, গণপরিষদে ভোটাভুটি, নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার নাকি গণপরিষদ এবং নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে।

বিএনপি সংবিধান সংস্কারের যেসব সুপারিশে একমত ও আংশিক একমত হয়েছে, সেগুলো আগামী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার গঠন প্রক্রিয়াও সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করার পক্ষে তারা।  

২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঘোষিত বিএনপির ৩১ দফায় উচ্চকক্ষের প্রস্তাব রয়েছে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চায় বিদ্যমান পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে যেভাবে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টন করা হয়, উচ্চকক্ষের আসনও সেভাবে বণ্টিত হবে।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪০ দশমিক ৮ এবং আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। এ দুই সংসদে সংবিধানে চতুর্দশ ও পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। 

৪০-৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসন পেয়েছিল দল দুটি। এতে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সংবিধানের যথেচ্ছ কাটাছেঁড়া রোধে সংস্কার কমিশন উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ করেছে। সুপারিশ অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধন বিলে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং গণভোট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র সমকালকে বলেছে, সংবিধানকে সুরক্ষা দিতে আনুপাতিক ভোটে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন এবং সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনে বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, এভাবে স্বৈরাচার রোধ করা যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করলে সংবিধানে যথেচ্ছা বদলের আশঙ্কা থাকে না। সেদিকেই যেতে হবে।

বিদ্যমান সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বাদে বাকি সব কাজ রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে বাধ্য। এর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ স্বতন্ত্র আইনের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে আদতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ীই নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। 
এ একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, উচ্চ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার,  বিরোধী দল থেকে উচ্চ ও নিম্নকক্ষে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার,  প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার বাইরে দল থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নিয়ে ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। একই সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও।

সুপারিশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হবে। এনসিসি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠান এবং তিন বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ করা হবে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও নিয়োগ হবে এনসিসির মাধ্যমে।

নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে এখনও মতামত জানায়নি বিএনপি। দলটির সূত্র জানিয়েছে, তারা ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল চায়। যাতে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসে। দলের একজন নেতা বলেছেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিএনপি রিভিউ আবেদন করেছে। বিএনপি আশা করছে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরবে। তাই এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ভাবনা তাদের নেই। 

কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদ ভেঙে গেলেও এনসিসি বিলুপ্ত হবে না। নির্বাচনকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার মনোনীত দু’জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের এনসিসি গঠিত হবে।

বিএনপির মূল্যায়ন হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর মনোনীত দুই উপদেষ্টাকে সদস্য করার এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রস্তাবিত এনসিসিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবেন অনির্বাচিত ব্যক্তিরা। একে ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত বিএনপি নেতারা। সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, অতীতে কী হয়েছে, তা মাথায় রেখে এত নিয়মকানুন লিখে গণতন্ত্র হয় না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে যথাযথ চর্চার মাধ্যমে এগোতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র ব চনক ল ন স স প র শ কর ছ ন উপদ ষ ট র র শ অন য য় র ষ ট রপত প রস ত ব সরক র র র ক ষমত ব যবস থ র মত মত ব চ রপত ব এনপ র সদস য র গণভ ট এনস স অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কতগুলো বিষয়ে একমত, তা এখনই বলতে পারব না: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার দিনভর বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক অধিকারসমূহ, আইন বিভাগের সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের কথা হয়েছে। বৈঠক শেষে বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে তাঁরা একমত হয়েছেন, তবে সেগুলো এখন সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিএনপির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এই দলে সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সচিব নিরুজ্জামান খান অংশ নেন। দুপুরে মধ্যাহ্নবিরতি দিয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এদিনের মতো আলোচনা শেষ হয়।

এরপর জাতীয় সংসদের এলডি হলে আলোচনা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম সংবিধান সংস্কার বিষয়ে এবং এর পরবর্তী সময়ে কিছুক্ষণ আগে আমরা বিচার বিভাগ নিয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো বিস্তারিত দফাওয়ারি আমরা আলোচনা করে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে এখন আমি স্পেসিফিক আপনাদের বলতে পারব না, আমরা কতটা একমত।’

সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, ফান্ডামেন্টাল রাইটস এগুলোর ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি এবং কিছু কিছু বিষয়ে আমরা আমাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছি, ওনারাও আমাদের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।’

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ওইখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। ওইখানে গণতন্ত্র ,জাতীয়তাবাদসহ সবকিছু আছে রাষ্ট্র ও সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে। দুইটা দুই জিনিস। আমরা বহুত্ববাদের পক্ষে নই, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নই। আমরা বহুত্ববাদের বিরোধিতা করেছি। তবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা আছে, সেই সমস্ত বিষয়ে ওনারা প্রস্তাবনায় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এখানে প্রস্তাব করেছেন। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত তবে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা আপনাদেরকে পরে জানাব।’

বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির দলীয় ফোরামেও আলোচনা হবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আমাদের মতামত জানিয়েছি, ওনারাও ওনাদের মতামত জানিয়েছেন, কতটুকু গ্রহণ করবেন, সেটা পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে। ৭০ অনুচ্ছেদের অর্থবিল ছাড়া বাকি সব যদি হয়, তাহলে সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধা আসতে পারে। সে জন্য আমরা বলেছি, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থা ভোট এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিধানসংশ্লিষ্ট বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা বাকি সব বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।’

সব বিষয়ে গণভোটের প্রয়োজন নেই বলে মনে করে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে গণভোট হতে পারে। এরপরও ভবিষ্যতে সংসদ যদি কোনো বিষয়ে গণভোট আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা মনে করে, তাহলে তারা সেটা চিন্তা করতে পারে। ঢালাওভাবে গণভোট হওয়া অনুচিত হবে। এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবগুলোর ওপর যে মতামত দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তাঁরা বলেছেন, এই ধারণার সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। কারণ, বাংলাদেশে কখনো এনসিসির প্রয়োগ ছিল না। এখন প্রবর্তন করা হলে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সংসদের ইতিহাসে এটা নতুন হবে।

এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে এমন কোনো ব্যবস্থা হলে সেটা অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগ ও আইন সভাকে দুর্বল করে দিচ্ছে কি না, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, যখন সংসদ থাকবে না অথবা ভেঙে যায়, সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে সেই কমিশন খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্য কিছু করে কি না, এগুলো আমরা চিন্তাভাবনা করেছি। তারপরও আমরা বলেছি, বিষয়টা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে বিস্তর আলোচনার মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা হবে কি হবে না, সেটা তখন দেখা যাবে। এখন আমরা নীতিগতভাবে একমত নই।’

আগে দ্বিমত ছিল, এখন একমত হয়েছেন, এমন কিছু আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অনেক বিষয় আছে। এগুলো কম্পাইল (একসঙ্গে করে) করে আমরা জানাব।’

যেসব বিষয়ে একমত হয়েছেন, তার বাস্তবায়নটা কীভাবে হবে—এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজটা কী? সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো একত্র করে ওনারা রিপোর্ট তৈরি করবে। হয়তো যারা যারা একমত হয়েছে, সেই পক্ষগুলোকে স্বাক্ষর হয়তো করতে বলবে। এটাকে ওনারা জুলাই চার্টার বলবে কি না, এটা ওনাদের বিষয়।’

আগামী রোববার বেলা ১১টা থেকে একই স্থানে কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আবার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকের পর ইরান বলল, ‘ভালো বোঝাপড়া’ হয়েছে
  • ভিন্নমতের জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে আলী রীয়াজ
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার চেষ্টায় বিএনপি, লক্ষ্য ডিসেম্বরে নির্বাচন
  • বিএনপি-ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ঐকমত্য কম
  • কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে: সালাউদ্দিন
  • কতগুলো বিষয়ে একমত, তা এখনই বলতে পারব না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত মৌলিক প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে এক জায়গায় আসার চেষ্টা করবে বিএনপি
  • ঐকমত্য তৈরিতে আলোচনা চালিয়ে যাবে বিএনপি: সালাউদ্দিন আহমেদ