রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে ছুরিকাঘাতে এক ছাত্র নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাহিদুল ইসলাম পারভেজ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। পুলিশ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের দোকানে দুই ছাত্রীর শিঙাড়া খাওয়া ও তাদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

পারভেজের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাইচান গ্রামে। তাঁর বাবা জসিম উদ্দিন কুয়েতপ্রবাসী। দুই ভাইবোনের মধ্যে পারভেজ বড়। তিনি ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করতেন।

জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েক শিক্ষার্থী এবং ইংরেজি বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী বনানী ক্যাম্পাসের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় ইংরেজি বিভাগের দুই ছাত্রী শিঙাড়া খাচ্ছিলেন। তাদের শিঙাড়া খাওয়া দেখে হাসাহাসি করছিলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পারভেজসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের কাছে হাসাহাসির কারণ জানতে চান ইংরেজির শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নজরে এলে এক কর্মকর্তা মীমাংসা করে দেন। তবে এরপর ৩০ থেকে ৪০ জন বহিরাগত ডেকে নেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পারভেজ ও তাঁর এক বন্ধু ক্যাম্পাস থেকে বের হলে তাদের ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে পারভেজকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাঁর বন্ধু সেখানে চিকিৎসাধীন। তাঁর নাম জানা যায়নি।

বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার সমকালকে বলেন, বিকেলে ইংরেজি ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, শিঙারা খাওয়ার সময় ইংরেজি বিভাগের দুই ছাত্রীকে দেখে হাসাহাসি করছিলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কিছু শিক্ষার্থী। এ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে পারভেজ নিহত হন। রাতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িতদের শনাক্তে কাজ চলছে।

রাতেই নিহতের মামাতো ভাই বনানী থানায় হত্যা মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি। তিনি জানান, মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বাদী দাবি করেছেন, পারভেজ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মী।

এদিকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী হামলায়’ পারভেজ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রাত ১০টা ৫ মিনিটে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, পারভেজ হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি, বিবিএ এবং এলএলবির তিন শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার বিষয়ে জানিয়েছেন। ক্যাম্পাসের সামনে বসার জায়গা নিয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত

এছাড়াও পড়ুন:

‘দিনে একবেলারও কম’ খেয়ে বেঁচে আছে গাজার শিশুরা

ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ ও বিমান হামলায় গাজায় ফিলিস্তিনি শিশুদের দিনে একবেলারও কম খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। উপত্যকাটির ১২টি প্রধান দাতা গোষ্ঠীর নেতারা এক জরুরি সতর্কবার্তায় এ কথা বলেছেন।

গত বৃহস্পতিবার দাতা গোষ্ঠীগুলোর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের ১৮ মাসের সামরিক অভিযান ও গত মাসে আরোপ করা পূর্ণ অবরোধের কারণে গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা ‘সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার উপক্রম’ হয়েছে।

বিবৃতির তথ্যমতে, ৪৩টি আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি সহায়তা গোষ্ঠীর প্রায় ৯৫ শতাংশ এরই মধ্যে গাজায় তাদের পরিষেবা স্থগিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাপকভাবে ও নির্বিচার বোমা হামলার ফলে (গাজায়) চলাফেরা করা খুব বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।

৪৩টি আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি সহায়তা গোষ্ঠীর প্রায় ৯৫ শতাংশ এরই মধ্যে গাজায় তাদের পরিষেবা স্থগিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাপকভাবে ও নির্বিচার বোমা হামলার ফলে (গাজায়) চলাফেরা করা খুব বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।

দাতা গোষ্ঠী অক্সফামের নীতিবিষয়ক প্রধান বুশরা খালিদী বলেন, ‘শিশুরা দিনে একবেলারও কম খাবার খাচ্ছে ও পরবর্তী বেলার খাবার খুঁজে পেতে লড়াই করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবাই শুধু টিনজাত খাবার খাচ্ছে...গাজায় অপুষ্টি এবং কোনো কোনো জায়গায় নিশ্চিতভাবে দুর্ভিক্ষের ঘটনা ঘটছে।’

ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের গাজার জরুরি সমন্বয়কারী আমান্দে বাজেরোল বলেন, ‘এটিকে মানবিক ব্যর্থতা বলা যায় না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই এটি ঘটছে। এটি (ফিলিস্তিনি) জনগণের বেঁচে থাকার অধিকারের ওপর ইচ্ছাকৃত আঘাত, যা (ইসরায়েলি সেনারা) দায়মুক্তির সঙ্গে কার্যকর করছে।’

গাজা সিটি থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ গত শুক্রবার বলেন, শিশুদের ফর্মুলা (প্রস্তুতকৃত খাবার) ফুরিয়ে যাচ্ছে। এতে করে শিশু ও নবজাতকেরা অপুষ্টিতে পড়তে যাচ্ছে।

হানি মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অনেক গুরুতর অপুষ্টির ঘটনা দেখেছি। পরিবারগুলো নিজেদের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না। এমনকি খুবই ঝুঁকিতে থাকা শিশু এবং নবজাতকদের প্রয়োজনও তারা পূরণ করতে পারছে না। বাজার ও ফার্মেসি থেকে শিশুদের ফর্মুলা মোটামুটি উধাও হয়ে গেছে।’

এটিকে মানবিক ব্যর্থতা বলা যায় না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই এটি ঘটছে। এটি (ফিলিস্তিনি) জনগণের বেঁচে থাকার অধিকারের ওপর ইচ্ছাকৃত আঘাত, যা (ইসরায়েলি সেনারা) দায়মুক্তির সঙ্গে কার্যকর করছে।আমান্দে বাজেরোল, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের গাজার জরুরি সমন্বয়কারী

গাজার দির আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে কিছু ফিলিস্তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, অপুষ্টির কারণে তাঁদের সন্তানেরা মারা যাচ্ছে।

ছেলে হারানো ফাদি আহমেদ বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর ছেলের ফুসফুসে ব্যাপক সংক্রমণ শনাক্ত করেন। তার রক্তে অক্সিজেনের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছিল। এই বাবা আরও বলেন, ‘দুর্বলতা ও তীব্র অপুষ্টির কারণে ছেলে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। হাসপাতালে এক সপ্তাহ থাকার পর সে মারা যায়।’

সহায়তাকারী গোষ্ঠীগুলো বলেছে, গাজা মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত কর্মীদের জন্য পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে ভয়ংকর স্থানে পরিণত হয়েছে। ফলে শিশুদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা সরবরাহ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

ইন্তিসার হামদান নামের এক নারী বলেন, ‘আমার নাতির মা-বাবা তিন দিন ধরে কোনো দুধ খুঁজে পাননি। ফলে আমার নাতিকে মারা যেতে হলো।’

আল–জাজিরার তারেক আবু আজম বলেন, ‘শিশুরা শুধু অপুষ্টিতেই ভুগছে না; বরং গুরুতর চিকিৎসা জটিলতা ও রোগেও ভুগছে; যা সহজে নিরাময় করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহেও ঘাটতি রয়েছে।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, উপত্যকাটিতে অন্তত ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খাবার সংগ্রহ করছে গাজার শিশুরা। দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে, ৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ