বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সমাজচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, ‘গত ৫৩ বছরেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু বিচার ও আইনের শাসন গড়ে ওঠেনি। এই সুযোগ নিয়ে বিদেশিরা আমাদের দেশে এসে তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলেন।’

এই সমাজচিন্তক বলেন, ‘দেশে নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন এবং হানাহানির বর্তমান চিত্র একটি ভয়ংকর অসভ্যতার লক্ষণ। এই অনাচার নিয়ন্ত্রণের গুরুদায়িত্ব রয়েছে সরকার এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলোর। এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

আগামীর বাংলাদেশে বিদেশি শক্তিগুলো যাতে কোনো খবরদারি করতে না পারেন, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্ডার্ড (মান) ঠিক হলে এসব সমস্যা সমাধান করা যায়। সেই মান কীভাবে ঠিক হবে, সেটা আমাদের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।

সম্মিলিত বাংলাদেশ পরিষদ (সবাপ) নামে একটি মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার রাজধানীর বিএমএ ভবনের শহীদ ডা.

মিলন হক মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক-চিন্তক এবং গবেষকেরা অংশ নেন। জুলাই যোদ্ধা জনি আখন্দ এবং মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনার সভাপতিত্ব করেন আমিরুল ইসলাম।

নতুন বাংলাদেশে সংকট কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা উল্লেখ করে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সতর্কতাভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, এমন নীতি দিয়ে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে না।’

দেশ ও রাষ্ট্র এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। এটা মানুষের তৈরি। আর দেশ হলো প্রকৃতির সৃষ্টি। কোনো রাষ্ট্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে পারে না। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট কাঠামোতে প্রবেশের মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজপথের মানুষগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টাদের থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। আমি মনে করতে পারছি না, তাঁদের সঙ্গে আদৌও আমার একসঙ্গে কোনো আন্দোলনের স্মৃতি ছিল। এই দূরত্বকে গুছিয়ে সামনে এগোতে হবে।’

৫ আগস্টের আগে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ ভাবতে পারেনি উল্লেখ করে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘এখন আমাদের স্বপ্ন আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষগুলো এখন তাচ্ছিল্যের শিকার। আমি চাই, রাষ্ট্র আর জনগণ একাকার হয়ে যাক।’

অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা সংস্কারের কোনো পরিকল্পনা নেই অভিযোগ করে এই মুখপাত্র বলেন, ‘সরকার এখনো শিক্ষা সংস্কার কমিশন করেনি। আমি আশা করব, একটি সম্মিলিত বাংলাদেশ গড়তে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। আমাদের গণ-আকাঙ্ক্ষা পূরণে জোর দিতে হবে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ জাবিরের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান না ঘটলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক পক্ষ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করতে পারতেন না।’

‘গণ-অভ্যুত্থান ইউনূস সরকারের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করেছে। কাজেই তাঁরা সংস্কারের জন্য উপযুক্ত। খুনের দায়ে শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করলেই হবে না। আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাও সংস্কারের অংশ।’

আলোচনায় সরকারের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারের কাঠামো ও আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার দাবি জানান অঞ্চল ও নগর পরিকল্পনাবিদ খন্দকার নিয়াজ রহমান।

সংবিধান ও আইনের সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে নিয়াজ রহমান বলেন, ‘আমরা যেকোনো পরিবর্তনের জন্য তাড়াহুড়ো করি৷ কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান কয়েক দিনের ধারাবাহিকতা। কিন্তু এটাকে যদি বিপ্লবে পরিণত করতে চাই তাহলে আমাদের সংস্কারের জন্য কাজ করতে হবে। সংস্কারের মধ্যে দিয়ে বিপ্লব কত দিনে অর্জন হবে হবে সেটা আপেক্ষিক। নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না।

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী প্রতিনিধি উশ্যেপ্রু মারমা, সবাপের সদস্য লুতফর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ, পরিবেশ কর্মী মনোয়ারা, এবিএম মাহমুদুল হক, সবাপের সদস্য সাকিব বিন আলম, হাসান ইমতিয়াজ প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন য় সরক র র আম দ র ও আইন রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন নয়, আগের সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে

সংবিধান সংস্কার কমিশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশালের প্রান্তিক প্রতিনিধিরা বলেছেন, নতুন কোনো সংবিধান নয়, সময়ের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে আগের সংবিধানকে সংশোধন করা যেতে পারে। তবে সেটা করতে পারবে একমাত্র নির্বাচিত সংসদ।

গতকাল শনিবার বরিশাল নগরীতে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সুজন প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর বিষয়ে মতামত নিতে জেলা ও মহানগর সুজন এ বৈঠক আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। জেলা, উপজেলা ও মহানগর সুজন প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। 

সভায় অংশগ্রহণকারীদের সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও সংবিধানের বিদ্যমান ব্যবস্থার কপি দেওয়া হলে তার ওপর আলোচনা করেন। ৯০ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। প্রায় সব আলোচক বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ন রেখে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। 

সুজনের বরিশাল মহানগরের সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, বর্তমান সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। এখন নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বললে সেটা শপথ ভঙ্গের শামিল। সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিক সংসদ সদস্য হতে পারবেন না এবং রাষ্ট্রীয় পদে থাকতে পারবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা দ্বৈত নাগরিক। এমনকি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজও দ্বৈত নাগরিক। তাঁর নেতৃত্বে কমিশন বৈধ নয়।

তবে বানারীপাড়া সুজনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান সোহেল বলেন, আগের দলীয় সরকারগুলোর ব্যর্থতার জন্য ইউনূস সরকারের আবির্ভাব হয়েছে। তাই তাঁর নেতৃত্বেই সংবিধান সংস্কার নিরাপদ হবে।
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সংবিধান সংস্কার বিষয়ে সারাদেশে তৃণমূলের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এসব যথাযথ স্থানে উপস্থাপন করা হবে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ