রাজধানীর ডেমরা এলাকায় মিনা আক্তার (১৭) নামের এসএসসি পরীক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

ময়নাতদন্তের জন্য মিনা আক্তারের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুরাদ হোসেন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মিনা আক্তার ডেমরার পাইটি গ্রামে মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করত। শনিবার বিকেলে ঘর থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

মৃতের ফুফা শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মিনা আক্তার কোচিং থেকে বাসায় ফিরে নিজের কক্ষে যায়। তার মা ঘরের বাইরে ছিল। পরে দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মিনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মিনা আক্তারের অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি শামসুল আলম।

মিনা আক্তার ডেমরার ই হক স্কুল অ্যান্ড  কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। তার পিতা কাঁচা মাল বেচাকেনা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী কম, অনুপস্থিতিও বেশি, কারণ কী

ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ১০২ জন। গতবারের তুলনায় এবার ২৭ পরীক্ষার্থী কমেছে। এবার এই বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে ৭৫ জন। বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক গতকাল বুধবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এসেছিলেন এসএসসি পরীক্ষা-সংক্রান্ত একটি কাজে। সেখানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই তাঁদের বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থী কম।

এসএসসি পরীক্ষার্থী কমার এই চিত্র শুধু গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়েরই নয়, চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশেই গত বছরের চেয়ে পরীক্ষার্থী অনেক বেশি কমেছে। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। পরীক্ষায় অনুপস্থিতিও এবার অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি।

কিছু কারণ হয়তো আন্দাজ করা যায়। যেমন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও করোনার প্রভাব থাকতে পারে। কারণ, করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান

একদিকে পরীক্ষার্থী কম, অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতি নিয়ে এবার নানা আলোচনা চলছে। এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো অস্পষ্ট। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে একাধিক কারণের কথা উঠে এসেছে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গতবার পাসের হার তুলনামূলক বেশি ছিল (৮৩ শতাংশ)। আর পাসের হার বেশি হওয়ায় এ বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে গেছে। এ জন্যই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। তবে শিক্ষকদের ভাষ্য, এর অন্যতম একটি কারণ হলো করোনা সংক্রমণের প্রভাব।

করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না।

এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে।

অন্যদিকে আবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণ থাকতে পারে। এ জন্য এ বিষয়ে একটি গবেষণা করে প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

১০ এপ্রিল সারা দেশে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার সারা দেশে ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন।

গতবার বেশি পাস করার কারণেই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। কারণ, আগেরবার বেশি পাস করলে পরের বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে। এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু কারণও থাকতে পারে।ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার

শিক্ষা বোর্ডগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখের বেশি, ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ২০ লাখ, ২০২২ সালে প্রায় ২০ লাখ, ২০২১ সালে প্রায় সাড়ে ২২ লাখ ও ২০২০ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় সাড়ে ২০ লাখ।

এদিকে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এই পরীক্ষার প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। দ্বিতীয় দিনে গত মঙ্গলবার অনুপস্থিত ছিল ২৮ হাজার ৯৪৩ জন। অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দিনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীরা পরের পরীক্ষাগুলোতেও অনুপস্থিত থাকে। এই হিসাব বলছে, দ্বিতীয় দিনেও নতুন করে আরও অন্তত দুই হাজারের মতো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, গতবার বেশি পাস করার কারণেই মূলত এবার মোট পরীক্ষার্থী কম। কারণ, আগেরবার বেশি পাস করলে পরের বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে। এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু কারণও থাকতে পারে। এবার কড়াকড়িভাবে পরীক্ষা গ্রহণের কারণে অনুপস্থিতির সংখ্যা তুলনামূলক কিছু বেশি হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

গবেষণা করে প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কারণ হয়তো আন্দাজ করা যায়। যেমন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও করোনার প্রভাব থাকতে পারে। কারণ, করোনার সময় হয়তো তেমন পড়াশোনা না করেই ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা উঠে গেছে। কিন্তু এখন যখন পাবলিক পরীক্ষা এসেছে, তখন হয়তো অনেকেই পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছে না। তবে সব মিলিয়ে এসব কারণ উদ্‌ঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। গবেষণার মাধ্যমে এটি করতে হবে, যা পরবর্তী সময়ে নীতি তৈরির ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘরে ঝুলছিল এসএসসি পরীক্ষার্থীর মরদেহ
  • সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬৪ পদে নিয়োগ, বেতনের সঙ্গে নানা সুবিধা
  • মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বাবা খুন: প্রধান আসামি ও এক সহযোগী গ্রেপ্তার
  • বিভিন্ন স্থানে কারিগরি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে
  • এসএসসি পরীক্ষা খারাপ হওয়ায়..
  • ফেনীতে কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড লোকজ মেলার মাঠ
  • দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে দৃষ্টিহীন মহির
  • উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা খুন, লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে মেয়ে
  • এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী কম, অনুপস্থিতিও বেশি, কারণ কী