Samakal:
2025-04-19@21:07:00 GMT

সারাদিন কাটল মর্গের সামনে

Published: 19th, April 2025 GMT

সারাদিন কাটল মর্গের সামনে

শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দিনমজুর বিল্লাল হোসেন (৫৫)। শরীরে রক্তস্বল্পতার কারণে চিকিৎসক তাঁকে পরামর্শ দেন বাড়তি রক্ত দেওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আনা হয় ভুল গ্রুপের রক্ত। সেই রক্তই শরীরে সঞ্চালন করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স। কিছুক্ষণের মধ্যে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাঁর। বিষয়টি বুঝতে পেরে নার্সরা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান বিল্লাল।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মৃত্যু হয় বিল্লালের। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামে। পেশায় মাটিকাটার এই শ্রমিক মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুধবার। স্বজন জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে বিল্লালের জন্য রক্ত সরবরাহ করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসকের পরামর্শে নার্সরা সেই রক্ত সঞ্চালন করেন। বিল্লাল হোসেনের রক্ত ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের হলেও তাঁর শরীরে পুশ করা হয় ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। কিছু রক্ত শরীরে যাওয়ার পর রোগীর অবস্থার অবনতি হয়।
মেয়ে সেলিনা আক্তারের অভিযোগ, তাঁর বাবার শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারার পরপরই চিকিৎসক-নার্সদের ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তারা কেউই এগিয়ে আসেননি। উল্টো নার্সেরা তড়িঘড়ি করে রক্তের ব্যাগ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। রাত ৮টার দিকে অন্য এক চিকিৎসক এসে রোগীর অবস্থা দেখে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাত ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেলেই তাঁর বাবা মারা যান। 

এ ঘটনায় বিল্লালের ক্ষুব্ধ স্বজন কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালের একটি কক্ষে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে অন্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিন রাত ৮টার দিকে দায়িত্ব শুরু হয়েছিল চিকিৎসক ইশতিয়াক আহমেদের। তাঁর ভাষ্য, বিকেল ৪টার দিকে রক্ত পুশ করার সময় দায়িত্বে ছিলেন মেডিকেল অফিসার নূর জাহান ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী। তিনি দায়িত্ব শুরুর পর সাধ্যমতো রোগীকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর পরও বাঁচানো যায়নি।
বিল্লালের স্বজনের ভাষ্য, তাঁর শরীরে এক চতুর্থাংশ রক্ত যাওয়ার পর ব্যাগ খুলে ফেলা হয়েছিল। একই রকম মন্তব্য করেন চিকিৎসক ইশতিয়াক। তিনি দাবি করেন, রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে এভাবে রক্ত দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি মারাত্মক ভুল। 
এদিকে বিল্লালের মৃত্যুসনদে কী উল্লেখ করা হয়েছে জানতে চাইলে ডা.

ইশতিয়াক বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি কেন এতে লেখা হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শেই এটি লেখা হয়নি।

২৪ ঘণ্টা পরও মেলেনি লাশ
বিল্লাল হোসেনের নাতনি জামাই সিজান মিয়ার ভাষ্য, তাঁর নানাশ্বশুর মারা গেছেন শুক্রবার রাত ১০টার দিকে। শনিবার সারাদিন তারা লাশকাটা ঘরের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন। কখন ময়নাতদন্ত হবে, বারবার জানতে চাইলেও কেউ কিছু বলেনি। সন্ধ্যার পর পুলিশ জানায়, রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দেওয়া হবে। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ জানায়, রাতে ময়নাতদন্ত হবে না। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও লাশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বহুদিন আগে বিল্লালের একমাত্র ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর পর থেকে তাঁর দেখাশোনা করেন চার মেয়ে। বিল্লালের জামাতা হাসানের ভাষ্য, জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে তারা লাশ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিকেল পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যায়নি। অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য তারা মানিকগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস এম আমান উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে দেওয়া হয়। সারাদিনেও ময়নাতদন্ত হয়নি। শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ সেখানে অপেক্ষা করে চলে এসেছে।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে এসব অভিযোগ জানতে চিকিৎসক নূর জাহার ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশীকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্ব) ডাক্তার আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ওই ব্যক্তির স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যেতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শনিবার বিকেল পর্যন্ত তা মঞ্জুর হয়নি। সন্ধ্যার পর লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য চিকিৎসক ছিলেন না। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম ড ক ল র ন চ ক ৎসক ময়ন তদন ত শ ক রব র র জন য হয় ছ ল ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

মালয়েশিয়ায় যাত্রার স্বপ্ন ভঙ্গ, মিয়ানমারের জেলে

দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারের এক কিশোর। কিন্তু ধরা পড়ে মিয়ানমার পুলিশের হাতে। ২২ মাস জেল খেটে অবশেষে সে ফিরেছে মায়ের বুকে।

উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী খোঁজপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সাজ্জাদ মিয়া। অর্থ উপার্জনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে সাজ্জাদ। ২০২৩ সালের জুন মাসেই সে ধরা পড়ে মিয়ানমার পুলিশের হাতে। সেই দেশের আদালত তাকে দুই বছরের সাজা দিয়ে মালাইবানের কেলিকং জেলে আটকে রাখে। তবে মিয়ানমার সরকার এ কিশোরকে পাঁচ মাস জেল খাটার পর দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় কাগজপত্রে। পরে কূটনৈতিক পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে তাকে সেই দেশের জেল থেকে মুক্ত করে মঙ্গলবার সমুদ্র পথে আনা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও থানার ওসির উপস্থিতিতে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

গতকাল বুধবার বিকেলে আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাজ্জাদের বাবা আব্দুল হান্নান জানান, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ। দালালের খপ্পরে পড়ে তাঁর ছেলে মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিল। তাদের কিছু না বলেই সে চলে গিয়েছিল। তাকে অনেক দিন খুঁজে না পাওয়ায় যোগাযোগ করে দেখেন সাজ্জাদের মতো হোয়াইকং ও আশপাশের উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজারের অনেক ছেলে দালালের খপ্পরে পড়ে দেশত্যাগ করেছে।

মিয়ানমারে সাজ্জাদের আটক থাকার খবর প্রসঙ্গে হান্নান জানান, বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার মাসখানেক পর তিনি জানতে পারেন সাজ্জাদ মালাইবানের কেলিকং জেলে আছে। এরপর অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) সাথে যোগাযোগ করেন। ওকাপ সাজ্জাদকে মিয়ানমার থেকে দেশে আনতে সার্বিক সহযোগিতা করে। তার পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পুলিশ, ইউএনও অফিস, ডিসি অফিস, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে যায়। তাদের সহযোগিতায় সাজ্জাদকে ফেরত পান। সাজ্জাদকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে আনন্দ অশ্রুতে সিক্ত হন তার মা আনু বেগম। 

সাজ্জাদ মিয়া বলে, ‘প্রথমে অন্যদের সঙ্গে আমাকে একটা গুদামে রেখেছে ওরা। সেখানে চার দিন থাকার পর মিয়ানমারের বোটে তুলে দেওয়া হয়। মিয়ানমারের শামিলা নামের একটা জায়গা আছে, সেখানে নিয়ে আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছিল, গালাগাল করছিল। পরে মিয়ানমারের মিলিটারির কাছে ধরা খাই।’

ওকাপের ফিল্ড অর্গানাইজার ছোবাহান আলী জানান, সাজ্জাদের বয়স বিবেচনায় তাকে আটকের পাঁচ মাস পর খালাস দেওয়া হয়। কিন্তু কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় তাকে দেশে ফেরত আনতে দেরি হয়।

ইউএনও সাজ্জাত হোসেন জানান, মানব পাচারকারীদের শনাক্তকরণের কাজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। গ্রামের নিরীহ ও সহজসরল কিশোর-যুবকদের স্বপ্ন দেখিয়ে অবৈধভাবে যারা বিদেশে পাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি না জেনে বুঝে কেউ যাতে পাচারকারীদের ফাঁদে না পড়ে সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে ভারতে
  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে
  • সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
  • মালয়েশিয়ায় যাত্রার স্বপ্ন ভঙ্গ, মিয়ানমারের জেলে