অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিএনপির বৈঠকটি ব্যর্থ হয়েছে। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যে সেটিই প্রতীয়মান হয়। বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি একেবারেই সন্তুষ্ট নয়। প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের সময়সীমার কথা বলেননি। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক যে পরিস্থিতি তা আরও খারাপ হবে।’ বিএনপি নেতারা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজান, তারপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং এর পর বর্ষাকাল শুরুর কথা স্মরণ করিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করা কঠিন হবে। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তিনি নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবেন। কোনোভাবেই জুন পার করবেন না।’ অন্যদিকে বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টা ড.
বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্যে এটি স্পষ্ট যে, তারা চেয়েছিলেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য; যেটিকে তারা শুরু থেকেই ‘রোডম্যাপ’ বলে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারা সেটি পাননি। অন্যদিকে একই দিনে ঢাকা সফররত মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুকলির সঙ্গে বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত সদ্যগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘প্রশাসন (সরকারি) অনেক জায়গায় বিএনপির পক্ষে কাজ করছে। এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়। মৌলিক সংস্কার ছাড়া এনসিপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।’ বৈঠকে নাহিদ মার্কিন কর্মকর্তাকে বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় এনসিপি প্রাথমিকভাবে সমর্থন করেছে। তবে জুলাই গণহত্যা এবং ফ্যাসিবাদের আমলের অপরাধের বিচার, বিচারের রোডম্যাপ, সংস্কার এবং জুলাই সনদ কার্যকর করা ছাড়া নির্বাচনের সময় নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।’ (সমকাল, ১৭ এপ্রিল ২০২৫)।
আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড় দল। আপাতদৃষ্টিতে তাদের সামনে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। তবে, নবগঠিত এনসিপি তাদের পথে নতুন প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষত দ্রুত নির্বাচন আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠার আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃহৎ দল হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপির যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, তার অনেকটাই দৃশ্যমান নয়। বরং সদ্যোজাত এনসিপির প্রতি তাদের আশীর্বাদের বিষয়টি অনেক চেষ্টা করেও ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। বিশেষত দলটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকার বাইরে থেকে লোক আনার জন্য স্থানীয় সরকারি প্রশাসনের বাস-ট্রাক রিকুইজিশনের খবরটি সংবাদমাধ্যমে চাউড় হওয়ার পর বিষয়টি আর অপ্রকাশ্য থাকেনি।
অতি সম্প্রতি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মদতে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন বিএনপি নেতাকর্মীকে হয়রানি করছে। প্রচার রয়েছে সজীব ভূঁইয়া আগামী নির্বাচনে ওই এলাকা থেকে এনসিপির প্রার্থী হবেন। এরকম ঘটনা অন্য অনেক স্থানেও ঘটছে। তাছাড়া সম্প্রতি এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে পঞ্চগড়ে রাজনৈতিক সফরও জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব ঘটনায় অনেকেরই কাছে এটা প্রতীয়মান যে, নেপথ্যে এনসিপি অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ২০০৭ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজে সম্পৃক্ত না হয়ে ‘ছেলেপেলেদের’ দিয়ে রাজনৈতিক দল খাড়া করাতে চাচ্ছেন। মনে থাকার কথা, ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ‘নাগরিক শক্তি’ নামে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেও জনসমর্থনের অভাবে তাতে ক্ষান্ত দিয়েছিলেন।
দেশে অর্ধশতাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থাকলেও বিগত বছরগুলোর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশে অলিখিতভাবে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যায়। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগ নিষ্ক্রিয় থাকায় রাজনৈতিক মাঠ বিএনপির একচ্ছত্র দখলে। জামায়াতে ইসলামীর একটি নিবেদিতপ্রাণ কর্মীবাহিনী থাকলেও জনগণের মধ্যে দলটির সমর্থন ৫-৭ শতাংশের বেশি নয়। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদের দোসরের তকমা লেপটে যাওয়ায় জাতীয় পার্টি রয়েছে ত্রিশঙ্কু অবস্থায়। অনেকে মনে করেন, বিএনপির বিপরীতে রাজনীতির মাঠের এই শূন্যতা এনসিপিকে দিয়ে পূরণের অবিমৃশ্যকারী ভাবনা হয়তো বিশেষ কোনো মহলের রয়েছে। তবে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কল্পনাবিলাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রশ্ন হলো, এ অবস্থায় বিএনপি কী করবে, কোন পথে হাঁটবে? তারা কি নির্বাচনের দাবিতে সহসাই রাজপথে নামবে? দলটির কেন্দ্রীয় অনেক নেতা কিছুদিন ধরে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা বলে আসছেন। তবে সেরকম কোনো আন্দোলন জনসমর্থন পাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পিচঢালা পথ’ সিনেমায় অমর কণ্ঠশিল্পী মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের কণ্ঠে একটি গান আছে– ‘পিচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি/ তার সাথে এই মনটারে বেঁধে নিয়েছি / রঙ ভরা এই শহরে যতই দেখেছি/ গোলকধাঁধার চক্করে ততই পড়েছি...’। অনেকের প্রশ্ন– বিএনপি কি আবারও কোনো গোলকধাঁধায় পড়েছে। পিচঢালা রাজপথই তাদের অবলম্বন, ঠিকানা?
সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, রাজপথে মিছিল-মিটিং, হরতাল-অবরোধের আন্দোলন নয়, বরং নির্বাচনের পক্ষে জনমত গঠন (শুধু দলীয় কর্মীদের নয়, ব্যাপক জনগণের) ও সে জনসমর্থনের প্রমাণ দিয়ে সরকারকে নির্বাচনের পথে আনার চেষ্টা করা হবে সঠিক কাজ।
এটি অবশ্যই স্বীকার্য যে, বিএনপি যদি এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে, তা সামাল দেওয়া সরকারের পক্ষে সহজ হবে না। কেননা, সে আন্দোলনের মিছিল-সমাবেশে ‘বেনামে’ পতিত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাও নির্ঘাত ঢুকে পড়বে। তাহলে ফলাফল যে শুভ হবে না, তা বুঝতে জ্যোতিষ সম্রাট হওয়ার দরকার পড়ে না।
মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক
ও রাজনীতি বিশ্লেষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ সরক র র প র জন ত ক ব এনপ র বল ছ ন এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
রাজপথই কি বিএনপির ঠিকানা?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিএনপির বৈঠকটি ব্যর্থ হয়েছে। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যে সেটিই প্রতীয়মান হয়। বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি একেবারেই সন্তুষ্ট নয়। প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের সময়সীমার কথা বলেননি। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক যে পরিস্থিতি তা আরও খারাপ হবে।’ বিএনপি নেতারা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজান, তারপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং এর পর বর্ষাকাল শুরুর কথা স্মরণ করিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করা কঠিন হবে। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তিনি নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবেন। কোনোভাবেই জুন পার করবেন না।’ অন্যদিকে বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘নির্বাচন কোনোভাবেই আগামী বছরের জুনের পরে যাবে না। এটি পুরো জাতির কাছে প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার।’ (সমকাল, ১৭ এপ্রিল ২০২৫)।
বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্যে এটি স্পষ্ট যে, তারা চেয়েছিলেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য; যেটিকে তারা শুরু থেকেই ‘রোডম্যাপ’ বলে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারা সেটি পাননি। অন্যদিকে একই দিনে ঢাকা সফররত মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুকলির সঙ্গে বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত সদ্যগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘প্রশাসন (সরকারি) অনেক জায়গায় বিএনপির পক্ষে কাজ করছে। এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়। মৌলিক সংস্কার ছাড়া এনসিপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।’ বৈঠকে নাহিদ মার্কিন কর্মকর্তাকে বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় এনসিপি প্রাথমিকভাবে সমর্থন করেছে। তবে জুলাই গণহত্যা এবং ফ্যাসিবাদের আমলের অপরাধের বিচার, বিচারের রোডম্যাপ, সংস্কার এবং জুলাই সনদ কার্যকর করা ছাড়া নির্বাচনের সময় নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।’ (সমকাল, ১৭ এপ্রিল ২০২৫)।
আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড় দল। আপাতদৃষ্টিতে তাদের সামনে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। তবে, নবগঠিত এনসিপি তাদের পথে নতুন প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষত দ্রুত নির্বাচন আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠার আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃহৎ দল হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপির যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, তার অনেকটাই দৃশ্যমান নয়। বরং সদ্যোজাত এনসিপির প্রতি তাদের আশীর্বাদের বিষয়টি অনেক চেষ্টা করেও ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। বিশেষত দলটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকার বাইরে থেকে লোক আনার জন্য স্থানীয় সরকারি প্রশাসনের বাস-ট্রাক রিকুইজিশনের খবরটি সংবাদমাধ্যমে চাউড় হওয়ার পর বিষয়টি আর অপ্রকাশ্য থাকেনি।
অতি সম্প্রতি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মদতে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন বিএনপি নেতাকর্মীকে হয়রানি করছে। প্রচার রয়েছে সজীব ভূঁইয়া আগামী নির্বাচনে ওই এলাকা থেকে এনসিপির প্রার্থী হবেন। এরকম ঘটনা অন্য অনেক স্থানেও ঘটছে। তাছাড়া সম্প্রতি এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে পঞ্চগড়ে রাজনৈতিক সফরও জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব ঘটনায় অনেকেরই কাছে এটা প্রতীয়মান যে, নেপথ্যে এনসিপি অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ২০০৭ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজে সম্পৃক্ত না হয়ে ‘ছেলেপেলেদের’ দিয়ে রাজনৈতিক দল খাড়া করাতে চাচ্ছেন। মনে থাকার কথা, ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ‘নাগরিক শক্তি’ নামে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেও জনসমর্থনের অভাবে তাতে ক্ষান্ত দিয়েছিলেন।
দেশে অর্ধশতাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থাকলেও বিগত বছরগুলোর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশে অলিখিতভাবে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যায়। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগ নিষ্ক্রিয় থাকায় রাজনৈতিক মাঠ বিএনপির একচ্ছত্র দখলে। জামায়াতে ইসলামীর একটি নিবেদিতপ্রাণ কর্মীবাহিনী থাকলেও জনগণের মধ্যে দলটির সমর্থন ৫-৭ শতাংশের বেশি নয়। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদের দোসরের তকমা লেপটে যাওয়ায় জাতীয় পার্টি রয়েছে ত্রিশঙ্কু অবস্থায়। অনেকে মনে করেন, বিএনপির বিপরীতে রাজনীতির মাঠের এই শূন্যতা এনসিপিকে দিয়ে পূরণের অবিমৃশ্যকারী ভাবনা হয়তো বিশেষ কোনো মহলের রয়েছে। তবে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কল্পনাবিলাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রশ্ন হলো, এ অবস্থায় বিএনপি কী করবে, কোন পথে হাঁটবে? তারা কি নির্বাচনের দাবিতে সহসাই রাজপথে নামবে? দলটির কেন্দ্রীয় অনেক নেতা কিছুদিন ধরে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা বলে আসছেন। তবে সেরকম কোনো আন্দোলন জনসমর্থন পাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পিচঢালা পথ’ সিনেমায় অমর কণ্ঠশিল্পী মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের কণ্ঠে একটি গান আছে– ‘পিচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি/ তার সাথে এই মনটারে বেঁধে নিয়েছি / রঙ ভরা এই শহরে যতই দেখেছি/ গোলকধাঁধার চক্করে ততই পড়েছি...’। অনেকের প্রশ্ন– বিএনপি কি আবারও কোনো গোলকধাঁধায় পড়েছে। পিচঢালা রাজপথই তাদের অবলম্বন, ঠিকানা?
সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, রাজপথে মিছিল-মিটিং, হরতাল-অবরোধের আন্দোলন নয়, বরং নির্বাচনের পক্ষে জনমত গঠন (শুধু দলীয় কর্মীদের নয়, ব্যাপক জনগণের) ও সে জনসমর্থনের প্রমাণ দিয়ে সরকারকে নির্বাচনের পথে আনার চেষ্টা করা হবে সঠিক কাজ।
এটি অবশ্যই স্বীকার্য যে, বিএনপি যদি এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে, তা সামাল দেওয়া সরকারের পক্ষে সহজ হবে না। কেননা, সে আন্দোলনের মিছিল-সমাবেশে ‘বেনামে’ পতিত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাও নির্ঘাত ঢুকে পড়বে। তাহলে ফলাফল যে শুভ হবে না, তা বুঝতে জ্যোতিষ সম্রাট হওয়ার দরকার পড়ে না।
মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক
ও রাজনীতি বিশ্লেষক