হামাগুড়ি দিয়েই স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর পথে ইউনুছ
Published: 19th, April 2025 GMT
মুহাম্মদ ইউনুছের বয়স ১৫। বাড়ি টেকনাফের পৌরসভার জালিয়া পাড়ায়। সেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ কিলোমিটার হামাগুড়ি দিয়ে এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যাল কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সে।
অদম্য প্রাণশক্তিতে পড়াশোনার বাধা পেরিয়ে যাচ্ছে। জন্মগতভাবে শারিরিক প্রতিবন্ধী হয়েও সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে স্বপ্ন দেখে একদিন সে উচ্চশিক্ষা শেষ করে চাকরি করবে, পরিবারে সচ্ছলতা আনবে। তার আশা সে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্যও কাজ করবে। হামাগুড়ি দিয়ে ইউনুছের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রথম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করে পড়াশোনা করেছে সে।
ইউনুছ মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তার পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে টেকনাফ এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায়। হামাগুড়ি দিয়ে কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতোই বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে ইউনুছ। গত বৃহস্পতিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পরীক্ষা দিয়েছে ইউনুছ। কক্ষ পরিদর্শকরা জানান, ইউনুছ বাংলা ১ম পত্র ও ইংরেজি দুই পত্রের পরীক্ষায় পুরো তিন ঘণ্টা লিখেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সমাজের আর ১০জন মানুষের মতো স্বাভাবিক নয় মুহাম্মদ ইউনুছ। জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী সে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেলা করতে হয়। তবুও জীবনযুদ্ধে থেমে যায়নি ইউনুছ। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। ফলে প্রতিবন্ধী হয়েও সে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে হামাগাড়ি দিয়ে পড়াশোনা করেছে।
ইউনুছের মা নুরুজ জামাল বলেন, ‘শত কষ্ট ও অভাব অনটনের মধ্যেও আমি সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছি। আমি চাই ওরা মানুষের মতো মানুষ হোক। অর্থের কারণে ওদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে আমার খুবই কষ্ট হয়। তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি তাকে পড়ার।’
ইউনুছ বলে, ‘জন্মের পর থেকে পা নিয়ে হাটঁতে পারি না। প্রথমে কেউ ভাবেননি আমার পক্ষে লেখাপড়া করা সম্ভব হবে। তবে আমার বাবা-মায়ের আগ্রহ আর শিক্ষকদের সহযোগিতায় তা সম্ভব হচ্ছে। আমার চলফেলা করতে খুব কষ্ট হয়। আমার মতো অনেকে প্রতিবন্ধী ভিক্ষা করে জীবনযাপন করছে। প্রতিবন্ধী হলেও আমি একজন মানুষ। আমি কখনো পড়ালেখা বাদ দেব না। আমার ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মতো মানুষ হব। এটাই আমার আসল স্বপ্ন। আমি মনে করি সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমি লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই, বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।’
টেকনাফ এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্র সচিব মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ক ষ পর ক ষ ইউন ছ
এছাড়াও পড়ুন:
দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে দৃষ্টিহীন মহির
বয়স তখন সবে তিন মাস। পৃথিবীর আলো-হাওয়াই ঠিকমতো দেখা হয়নি। তখনই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারায় মহির। তবে এতে দমে যায়নি সে। মনের জোরে দৃষ্টিহীনতা জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে। এবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে অংশ নিচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায়।
মহির উদ্দিন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পূর্ব শুখানপুকুরী গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে। প্রতিকূলতার মধ্যেও তার ইচ্ছা, শিক্ষাজীবন শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে। হাসি ফোটাতে চায় মা-বাবার মুখে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টিশক্তি হারালেও ছেলে মহিরকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা ছিল কৃষক মিলনের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিরকে মুখে মুখে পড়াতে থাকেন মিলন। সেসব পড়া মহিরও দ্রুত রপ্ত করে ফেলত। পরে ছেলেকে বাড়ির পাশের পূর্ব শুখানপুকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন মিলন। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে মহির।
২০১৭ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয় মহিরকে। এরপর একের পর এক শ্রেণি পেরিয়ে যেতে থাকে সে। এবার সেখান থেকেই শ্রুতলেখকের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মহির। মহিরের কেন্দ্র পড়েছে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। ১০ এপ্রিল এ পরীক্ষা শুরু হয়।
মহিরের ছোট ভাই মাসুদ রানা শ্রুতলেখকের দায়িত্ব পালন করছে। মাসুদ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ বৃহস্পতিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষা শেষে মাসুদ বলে, ‘আমার হাত দিয়ে ভাই যদি পরীক্ষায় ভালো করতে পারে, তবে শান্তি পাব।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিরের কাছে ইচ্ছার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, ‘লেখাপড়া করে চাকরি পেলে মা-বাবাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারব। তাঁদের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করার চেষ্টা করব।’