সেচের জন্য দিনে টানতে হয় ৫০০ বালতি পানি
Published: 19th, April 2025 GMT
তিন দশক ধরে কৃষিকাজ করে সংসার পরিচালনা করে আসছেন বাগেরহাটের শরণখোলার হাবিবুর রহমান খান। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই চাষি সাধারণত চাষ করেন বাঙ্গি। তাঁর বাড়ি উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়ায়। নিজ এলাকায় দুই একর জমি রয়েছে হাবিবুরের। প্রায় এক কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে চলা বুরিয়ার খালের পানিতেই এতদিন জমির সেচকাজ পরিচালনা করতেন। ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাওয়া খালটি এখন স্থানীয় লোকজন যে যেভাবে পেরেছে, দখল করেছে। সামান্য পানি থাকায় সেচের অন্য উপায় খুঁজতে হয় হাবিবুরকে। তাঁকে জমির প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে কলস-বালতি ভরে আনতে হচ্ছে। এভাবেই বাঙ্গির চারা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, সাউথখালী– এই চারটি ইউনিয়নেই ফসলি জমির চিত্র অনেকটা একই। উপজেলার খালগুলো শুকাতে শুরু করায় পর্যায়ক্রমে ভরাট হয়েছে। এই সুযোগে লোকজন দখল করে নিয়েছে নিজ নিজ জমির পাশের খালের জমিও। ফলে সেচ নিয়ে হাজারো কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পানির অভাবে জমি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে বীজ। কেউ কেউ অনেক দূর থেকে বালতিভর্তি পানি টেনে, কেউ মোটরের মাধ্যমে পানি তুলে পাইপে করে দিচ্ছেন জমিতে। এতে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ, হতাশা জেঁকে বসেছে কৃষকের মনে।
দক্ষিণ আমড়াগাছিয়ায় হাবিবুর রহমান খানের জমির পাশ দিয়ে গেছে বুরিয়ার খাল। সপ্তাহখানেক আগে তাঁকে পাওয়া যায় একটি ধানক্ষেতের পাশে নিজের ৬৬ শতক আয়তনের বাঙ্গি ক্ষেতে পানি ঢালতে। প্রতিটি চারার গোড়ায় বালতি থেকে মগ দিয়ে পানি দিচ্ছিলেন হাবিবুর। পাঁচ সদস্যের পরিবারের সব খরচই চাষের ওপর নির্ভর করে। ফসল বাঁচাতে তিনি প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে পানি টানা শুরু করেন। হাবিবুর রহমান বলেন, দিনে অন্তত ৫০০ বালতি পানি টানতে হয়। তাও গাছ বাঁচাতে পারছি না। এখন যে অবস্থা খরচই উঠবে না। সামনের দিনগুলো কষ্টে কাটবে। এসব কথা বলে আক্ষেপ করতে করতে বাড়ির পথ ধরেন তিনি।
কৃষিকাজ করেই চার সদস্যের পরিবার চালাতে হয় শরণখোলা গ্রামের শাহীন শেখকে। জমির অদূরে বয়ে যাওয়া হরিণটানা খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষিকাজে বেগ পেতে হচ্ছে তাঁকেও। শাহীন জানান, মোটরের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে ৮০০ থেকে ১ হাজার দীর্ঘ ফুট পাইপ দিয়ে বোরো ধানক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে কোনো কৃষকই বাঁচতে পারবেন না।
কিছুদিন আগেই জলাবদ্ধতায় জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ খোন্তাকাটা গ্রামের জাফর মুন্সির। এখন তারা পড়েছেন পানি সংকটে। জাফর মুন্সি বলেন, ‘আমতলির খালে পানি না থাকায় আমরা ফসল চাষ করতে পারিনি। খুবই কষ্টে আছি। সামনের দিনগুলোতে যে কি খাব, কীভাবে জীবন বাঁচাব, সেই চিন্তায় আছি।’
কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত ১১টি খাল খনন করা জরুরি। এগুলোর মধ্যে জিমতলার খাল ১ দশমিক ০৬ কিলোমিটার, হরিণঘাটা খাল ১ দশমিক ২৬, আমতলির খাল ৩, বরইতলার খাল ২ দশমিক ৫, রতিয়ার খাল ৬, নলবুনিয়ার খাল ১ দশমিক ৫, মালসার খাল দশমিক ৬, পরীর খাল ১ দশমিক ১৬, গাজীপাড়া খাল ১ দশমিক ৪, জানের খাল ১ দশমিক ৬ ও গাজীর ব্রিজের খাল ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননে ঊর্ধ্বতন মহলে সুপারিশ করেছে দপ্তরটি।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.
বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকটি খালের তালিকা করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এসব খাল খনন হলে এই অঞ্চলের কৃষি যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন কৃষক।
দ্রুত খনন না হলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির
শিকার হবেন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র খ ল ১ দশম ক উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
সেচের জন্য দিনে টানতে হয় ৫০০ বালতি পানি
তিন দশক ধরে কৃষিকাজ করে সংসার পরিচালনা করে আসছেন বাগেরহাটের শরণখোলার হাবিবুর রহমান খান। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই চাষি সাধারণত চাষ করেন বাঙ্গি। তাঁর বাড়ি উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়ায়। নিজ এলাকায় দুই একর জমি রয়েছে হাবিবুরের। প্রায় এক কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে চলা বুরিয়ার খালের পানিতেই এতদিন জমির সেচকাজ পরিচালনা করতেন। ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাওয়া খালটি এখন স্থানীয় লোকজন যে যেভাবে পেরেছে, দখল করেছে। সামান্য পানি থাকায় সেচের অন্য উপায় খুঁজতে হয় হাবিবুরকে। তাঁকে জমির প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে কলস-বালতি ভরে আনতে হচ্ছে। এভাবেই বাঙ্গির চারা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, সাউথখালী– এই চারটি ইউনিয়নেই ফসলি জমির চিত্র অনেকটা একই। উপজেলার খালগুলো শুকাতে শুরু করায় পর্যায়ক্রমে ভরাট হয়েছে। এই সুযোগে লোকজন দখল করে নিয়েছে নিজ নিজ জমির পাশের খালের জমিও। ফলে সেচ নিয়ে হাজারো কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পানির অভাবে জমি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে বীজ। কেউ কেউ অনেক দূর থেকে বালতিভর্তি পানি টেনে, কেউ মোটরের মাধ্যমে পানি তুলে পাইপে করে দিচ্ছেন জমিতে। এতে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ, হতাশা জেঁকে বসেছে কৃষকের মনে।
দক্ষিণ আমড়াগাছিয়ায় হাবিবুর রহমান খানের জমির পাশ দিয়ে গেছে বুরিয়ার খাল। সপ্তাহখানেক আগে তাঁকে পাওয়া যায় একটি ধানক্ষেতের পাশে নিজের ৬৬ শতক আয়তনের বাঙ্গি ক্ষেতে পানি ঢালতে। প্রতিটি চারার গোড়ায় বালতি থেকে মগ দিয়ে পানি দিচ্ছিলেন হাবিবুর। পাঁচ সদস্যের পরিবারের সব খরচই চাষের ওপর নির্ভর করে। ফসল বাঁচাতে তিনি প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে পানি টানা শুরু করেন। হাবিবুর রহমান বলেন, দিনে অন্তত ৫০০ বালতি পানি টানতে হয়। তাও গাছ বাঁচাতে পারছি না। এখন যে অবস্থা খরচই উঠবে না। সামনের দিনগুলো কষ্টে কাটবে। এসব কথা বলে আক্ষেপ করতে করতে বাড়ির পথ ধরেন তিনি।
কৃষিকাজ করেই চার সদস্যের পরিবার চালাতে হয় শরণখোলা গ্রামের শাহীন শেখকে। জমির অদূরে বয়ে যাওয়া হরিণটানা খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষিকাজে বেগ পেতে হচ্ছে তাঁকেও। শাহীন জানান, মোটরের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে ৮০০ থেকে ১ হাজার দীর্ঘ ফুট পাইপ দিয়ে বোরো ধানক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে কোনো কৃষকই বাঁচতে পারবেন না।
কিছুদিন আগেই জলাবদ্ধতায় জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ খোন্তাকাটা গ্রামের জাফর মুন্সির। এখন তারা পড়েছেন পানি সংকটে। জাফর মুন্সি বলেন, ‘আমতলির খালে পানি না থাকায় আমরা ফসল চাষ করতে পারিনি। খুবই কষ্টে আছি। সামনের দিনগুলোতে যে কি খাব, কীভাবে জীবন বাঁচাব, সেই চিন্তায় আছি।’
কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত ১১টি খাল খনন করা জরুরি। এগুলোর মধ্যে জিমতলার খাল ১ দশমিক ০৬ কিলোমিটার, হরিণঘাটা খাল ১ দশমিক ২৬, আমতলির খাল ৩, বরইতলার খাল ২ দশমিক ৫, রতিয়ার খাল ৬, নলবুনিয়ার খাল ১ দশমিক ৫, মালসার খাল দশমিক ৬, পরীর খাল ১ দশমিক ১৬, গাজীপাড়া খাল ১ দশমিক ৪, জানের খাল ১ দশমিক ৬ ও গাজীর ব্রিজের খাল ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননে ঊর্ধ্বতন মহলে সুপারিশ করেছে দপ্তরটি।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল হাসানের দাবি, কৃষি অফিস থেকে তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। পানির অভাবে চাষাবাদে বেগ পেতে হচ্ছে। বোরো ধান আবাদের জন্যও অনেক দূর থেকে মোটর বা পাম্পের সাহায্যে পানি আনতে হচ্ছে। এতে খরচও বাড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকটি খালের তালিকা করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এসব খাল খনন হলে এই অঞ্চলের কৃষি যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন কৃষক।
দ্রুত খনন না হলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির
শিকার হবেন।’