আমন মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন না করায় দিনাজপুরের ৩১৬টি চালকল ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ। যোগ্য হলেও চুক্তিতে না আসায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কলগুলো ধান থেকে চাল উৎপাদন কার্যক্রম, বাজারজাতকরণ ও ধান-চাল মজুত করতে পারবে না। এ নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে ধান-চাল বাজেয়াপ্তসহ সংশ্লিষ্ট চালকল মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বুধবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ৩১৬ চালকলের মধ্যে ২৯৬টি সিদ্ধ ও ২০টি আতপ চালকল রয়েছে। যদিও ধানের দাম বেশি থাকায় চুক্তি সম্পাদন করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এ জন্য সিন্ডিকেট ও মজুতদারদের দুষছেন তারা। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরকারকে চাল দিয়ে কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালকল মালিক। তিনি বলেন, লোকসানে অনেক মালিক সরকারকে চাল দিতে চান না। বাজার যাচাই না করে কিংবা মিলারদের সঙ্গে কথা না বলেই সরকার দাম নির্ধারণ করে। তারপর চাপিয়ে দেওয়া হয় মিলাদের ওপরে। এতে লোকসানের শঙ্কায় অনেকে চুক্তি করেন না। বাজারে ধানের সংকট সৃষ্টি করা হয়। মৌসুমের শুরুতে ধান কিনে পরে দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে চালের দাম বেড়ে যায়।
ব্যবস্থা নেওয়া চালকলের মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ৪০টি। এ ছাড়া বিরল উপজেলায় চারটি, বোচাগঞ্জে ৬০, কাহারোলে ১৫, বীরগঞ্জে ১১, খানসামায় চার, চিরিরবন্দরে ৩৩, পার্বতীপুরে ১৬, ফুলবাড়ীতে ৪০, বিরামপুরে সাত, হাকিমপুরে দুই, নবাবগঞ্জে ২৮ ও ঘোড়াঘাটে ৩৭টি চালকল রয়েছে। লাইসেন্স বাতিল হওয়া আতপ চালকলের মধ্যে দিনাজপুর সদরে ১৯ এবং চিরিরবন্দর উপজেলার একটি রয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে সরকারের খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে জেলায় সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৮৭২ টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৮০৬ টন। ১৭ হাজার ৭৯১ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সরকারের এ অভিযানে ধান-চাল সরবরাহের জন্য জেলার ৯১১টি সেদ্ধ চালকল এবং ৮৩টি আতপ চালকল চুক্তিবদ্ধ হয়। 
২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান চলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ মিল থেকে ৪৮ হাজার ৭২৪ দশমিক ৪০ টন সেদ্ধ চাল, ১১ হাজার ৩০৬ দশমিক ৪৬ টন আতপ এবং ২ হাজার ২৫৮ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ সেদ্ধ ও ৯৬ শতাংশ আতপ চাল এবং ১৩ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ।
এরই মধ্যে গত ৮ এপ্রিল খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগ অভ্যন্তরীণ আমন ২০২৪-২৫ মৌসুমে চুক্তিযোগ্য থাকলেও চুক্তি সম্পাদন করেনি, এমন চালকলের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা দেয়। সে অনুযায়ী ৩১৬ চালকলের মিলিং এবং খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী লাইসেন্স বাতিল করে খাদ্য বিভাগ।
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর সময় বাজার যাচাই না করেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের। 
তারা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ফলে অনেক মিল মালিক সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি। আবার যখন বাজারে ধান থাকে, তখন কৃষক যে দামে বিক্রি করেন, কিছুদিন পর সে দাম বাড়ে।
বাংলাদেশ মেজর ও অটোমেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, মজুতদাররা কৃষকদের ধান কেনার পরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ে। মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে ধান কিংবা চালের দাম বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব না। এ জন্য বাজার তদারকি ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে। মিল মালিকদের দায়ী করলে হবে না। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভিযান শুরু করলে সব মিলারই সরকারকে চাল দেবেন।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, সরকারের অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য নীতিমালা রয়েছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংগ্রহ কার্যক্রম বারিত রাখার শাস্তির বিধান রয়েছে। যেসব মিল চুক্তি করেনি এবং চুক্তি করেও যারা চাল দেবে না, তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মজুতদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ লকল ম ল ক ব যবস য় র চ লকল র ম আতপ চ ল ব যবস থ সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ওষুধ সেবনে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ ইংলিশ ক্রিকেটার

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখাতে না পারলেও ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত মুখ বাঁ-হাতি পেসার কেইথ বার্কার। এবার নিষিদ্ধ ওষুধ সেবনের দায়ে বড় শাস্তির মুখে পড়লেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে বার্কারের শরীরে নিষিদ্ধ দ্রব্য শনাক্ত হয়। তারও আগে, মে মাসে এক ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন তিনি। এরপর ৫ মার্চ ইসিবির অ্যান্টি-ডোপিং নীতিমালার দুটি ধারা ভাঙার কথা স্বীকার করেন এই পেসার। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই থেকে।

যদিও বার্কারের দাবি, তিনি উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় একটি বিকল্প ওষুধ নিয়েছিলেন, যা বিশ্ব অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সির (ওয়াডা) নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত। বিষয়টিকে ‘প্রশাসনিক ত্রুটি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংশ্লিষ্ট রিভিউ প্যানেল। তারা আরও জানায়, বার্কার ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম ভাঙেননি এবং পারফরম্যান্সে বিশেষ কোনো সুবিধাও পাননি।

তবে নিয়ম তো নিয়মই। তাই ১২ মাসের জন্য নিষিদ্ধই হতে হচ্ছে হ্যাম্পশায়ারের ৩৮ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারকে। গত মৌসুমে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ২৪.৩৭ গড়ে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বার্কারের নামের পাশে রয়েছে ১৬৭ ম্যাচে ৫৩৩ উইকেট এবং ৫৪৫০ রান।

নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বার্কার। বলেন, 'গত নয় মাস ছিল ভীষণ কঠিন। শুনানি চলাকালীন সময়টা যেন কঠিনতম শাস্তির মতোই কেটেছে। আজকের রায় আমার পুরো ক্যারিয়ার শেষ করে দিচ্ছে। আমি কৈশোর থেকে যে খেলাটিকে ভালোবেসে এসেছি, সেখান থেকে কিছু প্রশাসনিক ভুল আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আমার পাশে থাকার জন্য হ্যাম্পশায়ার পরিবার ও সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।'

তার অনুপস্থিতি নিয়ে হতাশ হ্যাম্পশায়ার ক্লাবও। ক্লাবের পরিচালক গাইলস হোয়াইট বলেন, 'এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য দুঃখজনক। এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুলের ফল। কেইথ বরাবরই ব্যতিক্রমী ক্রিকেটার। জুলাইয়ের পর থেকে তাকে আবার দলে দেখতে চায় সবাই। গত ছয় বছরে সে ভক্তদেরও প্রিয় হয়ে উঠেছে।'

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন, সামান্য ত্রুটির তাৎক্ষণিক সমাধান
  • ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং-ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং-অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নিতে চান, করুন আবেদন
  • চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, কে কার কাছ থেকে কী কেনে
  • ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু ভর্তিযুদ্ধ
  • আ.লীগের সবার হাতে রক্ত, সেই দলে সাকিবের যাওয়া ঠিক হয়নি: প্রেস সচিব
  • ‘মৃত্যুর দিন গুনতে থাক গুলি করুম ঠিক মাথায়’
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ
  • ওষুধ সেবনে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ ইংলিশ ক্রিকেটার