পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যান শিল্পী বেগম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন রোগী। পরে তাঁর পেট কেটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করে সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে।

ভুক্তভোগী নারী নরসিংদীর পটিয়া গ্রামের দারোগা বাড়ির প্রবাসী মাসুম মিয়ার স্ত্রী। প্রচণ্ড পেটে ব্যথা নিয়ে গত বুধবার সকালে ভর্তি হন ভৈরব পৌর শহরের নিউটাউন মোড় এলাকার মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্লিনিক থেকে জানানো হয় তাঁর পেটে টিউমার রয়েছে। এটি বেশি জটিল হয়ে গেছে দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শিল্পী বেগমের পেটে অস্ত্রোপচার শুরু হয়, কিন্তু শেষ না করেই চিকিৎসক তাঁর পেট সেলাই করে বেডে স্থানান্তর করেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে এখন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন শিল্পী বেগম।

শিল্পী বেগম জানান, তাঁর পেটে ব্যথা অনুভব হলে নরসিংদীর একটি হাসপাতাল থেকে ইনজেকশন নিয়ে ব্যথা কমিয়ে মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে যান। চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম করে জানান রোগ বেশি জটিল, তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচার শুরু করে বুঝতে পারেন তারা পারবেন না। পরে পেট সেলাই করে বলে দেন দুই-এক মাস বাসায় থেকে একটু সুস্থ হয়ে ঢাকায় গিয়ে অপারেশন করাতে। পরে তাঁর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিলে চিকিৎসাটা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তারা। এর আগে ভুল স্বীকার করতে চাননি।

রোগীর মেয়ে তানজিনা বলেন, ‘অপারেশন করে রোগী যদি ভালো নাই করা যাবে তাহলে তা করা হলো কেন? অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর আমাদের বলা হয় বাসায় নিয়ে যেতে এবং দুই-এক মাস বাসায় রেখে কিছুটা সুস্থ করে অন্য জায়গায় গিয়ে অপারেশন করাতে। পরে আমাদের চাপে এই হাসপাতালে আরও কয়েকদিন চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে কয়েক মাস পর অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সহযোগিতা করবেন বলে একটি লিখিত দিয়েছেন হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ।’ তাঁর প্রশ্ন, এ হাসপাতালের চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার নাই করতে পারবেন তাহলে কেন রোগীকে ধরল? তারা যা করেছেন তা সম্পূর্ণ অন্যায়। এর কারণে যদি পরবর্তী সময়ে তাঁর মায়ের কোনো ক্ষতি হয় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব এই হাসপাতালকেই নিতে হবে।

হাসপাতালটির মালিক ডা.

একেএম জাহাঙ্গীর আলম। শিল্পী বেগমের অস্ত্রোপচারও শুরু করেন তিনি। 

অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর ভাষ্য, পেট কাটার পর দেখা যায় টিউমারের সঙ্গে পেটের ভেতরের অন্যান্য অঙ্গ পেঁচিয়ে রয়েছে, যার কারণে অস্ত্রোপচার করেননি তারা। যদি তারা অস্ত্রোপচার করতেন তাহলে রোগী মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকত। তাই ঝুঁকি নেননি তারা। পরবর্তী সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে যেকোনো হাসপাতালে এই রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলে তাদের হাসপাতাল থেকে রোগীকে সহযোগিতা করা হবে।

চিকিৎসকরা রোগীর অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে যদি বড় ধরনের সমস্যা পান তবে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে পারেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর। তিনি বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে অপারেশন করতে গিয়ে কোনো গাফিলতি আছে কিনা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে কোনো অবহেলা ছিল কিনা। বিশেষ করে রোগী ও তাঁর স্বজনরা যদি তাঁর কাছে অথবা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অভিযোগ করেন তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

হাসপাতালটির বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, তাঁর জানা মতে মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে। তারপরও রোববার (আজ) খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ চ ক ৎসক

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

জুলাইয়ে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্ত্বরে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

এ সময় ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জেগেছে রে, জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘খুনি লীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘আলি রায়হান মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেব রক্ত’, ‘আওয়ামীলীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে দেন তারা।

আরো পড়ুন:

রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় সন্তোষজনক উপস্থিতি

রাবি ভর্তি পরীক্ষায় শহীদ আবু সাঈদ ও জেন-জি নিয়ে প্রশ্ন

বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজিব বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে নাৎসি পার্টি গণহত্যা চালানোর দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল। তারা এখনো নিষিদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশে গণহত্যা চালানোর পরেও নিষিদ্ধ হচ্ছে না। যে আওয়ামী লীগের গায়ে শাপলা হত্যাকাণ্ড, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রক্ত লেগে আছে, সেই আওয়ামী লীগকে কোন স্বার্থ বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না? অন্তর্বতী সরকারকে বলবো, আপানারা অতিদ্রুত গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন। সারা বাংলার ছাত্র জনতা আপনাদের সঙ্গে আছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “৫ আগস্টে আমরা আওয়ামী লীগকে দাফন করলেও আমাদের কাছে ডেথ সার্টিফিকেট নেই। আমরা আওয়ামী লীগের ডেথ সার্টিফিকেট চাই। যেসব রাজনৈতিক দল আজ আওয়ামী লীগের প্রতি নমনিয়তা দেখাচ্ছে, তাদের জানিয়ে দিতে চাই, ৫ আগস্ট না আসলে জামায়াত-বিএনপিকে ৫ আগস্টের দায় নিয়ে নিষিদ্ধ হতে হত।”

তিনি‌ বলেন, “হাজার হাজার ছাত্র আপনাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে শুধু জুলাই গণহত্যাসহ সব গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য। আমরা ইন্টেরিমকে  জানাতে চাই, আপনারা অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে সংস্কার ও নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। তা না হলে আওয়ামিলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আবারো রাজপথে নামবে ছাত্র-জনতা।”

আরেক সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছেন, তারা রাজনীতি করেনি। তারা রাজনীতির নামে ফ্যাসিবাদের চর্চা করেছে। শেখ মুজিব ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে ধূলিসাৎ করে বাকশাল গঠন করেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাই নষ্ট করে দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “পৃথিবীতে আমরা দেখেছি, যে দেশে কোনো রাজনৈতিক দল গণহত্যায় জরিয়েছে, তারা আর কখনো রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। এই আওয়ামী লীগ শুধু গণহত্যা করেছে, তা নয়। তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেও বিনষ্ট করেছে। সুতরাং আওয়ামী লীগকে অনতিবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অথবা গণভোটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।”

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
  • সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেল হাসপাতল থেকে শিশু নিয়ে পালাচ্ছেন নারী
  • ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে
  • দাদা জাপটে ধরে রাখেন, বিষ প্রয়োগ করেন চাচা
  • অযত্নে ভাসানীর স্মৃতিচিহ্ন, বিলুপ্তপ্রায় প্রতিষ্ঠানগুলোও
  • সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির আবেদন শুরু
  • সচিবালয়ে বৈঠকে সন্তুষ্ট নন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন চলবে
  • রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
  • সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, শিথিল থাকবে রেল ব্লকেড কর্মসূচি