আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) এবং জুলাই বিপ্লব পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। শনিবার বিকেলে যাত্রাবাড়ী মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।

বিক্ষোভ মিছিলের আগে যাত্রাবাড়ী মোড়ে সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক খান মো. মুরসালিন বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটি পরিষ্কার জানতে হবে। আওয়ামী লীগ হলো সন্ত্রাসী সংগঠন। মানুষকে খুন করে গুম করে আর্থিক লুটপাট করে দেশকে ধ্বংস করে পালিয়ে গেছে। তারা দেশকে ঝাঁঝরা বানিয়ে ছেড়েছে। সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার জন্য যা যা করার তার সবই করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে রাষ্ট্রের যে আচরণ হওয়া উচিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেই আচরণ করতে হবে। শুধু আইনগতভাবেই না, সামাজিকভাবেও আওয়ামী লীগকে বয়কট করতে হবে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, প্রতিরোধের বিকল্প নেই এখানে।  

এনসিপির সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) মো.

রাকিব হোসেন রাজ বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয় বরং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার চালিত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। ৪৮ জন শহীদের নাম নিয়ে স্থাপিত শহীদি ঐক্য চত্বরের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছি। সারা জুলাই গঅভ্যুত্থানে সারাদেশ যে প্রকার নির্মমতা দেখেছে লাশ আর রক্ত দেখেছে যাত্রাবাড়ীতে তার পরিমাণ সর্বাধিক। আর এই হত্যায় সহায়তা করেছে খুনি হাসিনার পেটোয়া পুলিশ বাহিনী এবং যাত্রাবাড়ী অঞ্চলে হাসিনার অন্যতম ভ্যানগার্ড হারুনুর রশিদ মুন্না যে এই দেশের অন্যতম চাঁদাবাজ-খুনি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী। এই মুন্না যখন খুনের পর খুনে সহায়তা করেছে তাকে গ্রেপ্তারে পরিবর্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে দ্রুত গ্রেপ্তারের আহ্বান জানাতে চাই এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে সকলতে ঐক্যমতে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এছাড়াও বিক্ষোভ পূর্ববর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম কনক, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নির্বাহী সদস্য আহনাফ জামান, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুজ্জামান হৃদয়, যাত্রাবাড়ী থানা এনসিপির প্রতিনিধি হিমেল, শ্যামপুর থানা এনসিপি নেতা রায়হান হোসেন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল হাসান ও সাদিল আহমেদ, সদস্য সচিব মোদাশ্বের হক তানভীর, মুখপাত্র স্বাধীন খান, উপমুখপাত্র সুরাইক হাসান সিয়াম প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ এনস প র সদস য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক অপরাধ কমছে না কেন

আজকের সমাজে আমরা নানা ধরনের অন্যায়, অবক্ষয় ও অমানবিকতার মুখোমুখি হচ্ছি। খবরে প্রায়ই উঠে আসে হত্যা, ধর্ষণ, দুর্নীতি, প্রতারণা, পারিবারিক সহিংসতা কিংবা সামাজিক বৈষম্যের চিত্র। এসব দেখে আমরা আতঙ্কিত ও বিরক্ত হই। মাঝেমধ্যে প্রতিবাদও করি। আমরা প্রায়ই বলি, সমাজে অন্যায় বেড়ে গেছে; মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে; নৈতিকতা যেন শুধু পাঠ্যবইয়ের পাতায় বন্দি। আমার বিশ্বাস, সমাজে প্রচলিত অন্যায় ও অবক্ষয়ের মূল কারণ মানুষের চিন্তা-চেতনার অভাব বা অপবিকাশ। মানুষ যেমন চিন্তা করে, তেমনি তার আচরণ গড়ে ওঠে। কম্পিউটারের ভাষায় একটি  কথা আছে– গার্বেস ইন গার্বেস আউট। যা ইনপুট করব তাই আউটপুট হবে। চিন্তার ক্ষেত্রেও এমন, যা জানব তা-ই দেব। চিন্তার এই ভিত্তি তৈরি হয় শেখার মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শুধু একাডেমিক সাফল্য গুরুত্ব পাচ্ছে। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিকতা, মানবিকতা ও বিশ্লেষণী শক্তির চর্চা হচ্ছে না বললেই চলে।

আজকের প্রজন্ম বড় হচ্ছে পরীক্ষার ফলের পেছনে ছুটতে ছুটতে। তারা ভালো চাকরি, ভালো জীবন চাইছে। কিন্তু কীভাবে ভালো মানুষ হতে হয়, সে শিক্ষা পাচ্ছে কি? একাডেমিক শিক্ষার বাইরেও যে এক বিশাল জগৎ আছে, যেখানে মানুষ হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ থাকে, তা তারা জানতেই পারছে না। পাঠ্যবইয়ের বাইরে কেউ কিছু পড়তে চায় না; নতুন চিন্তা করতে চায় না। প্রশ্ন করতে ভয় পায়।
এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দরকার চিন্তার বিপ্লব। আমাদের এমন একটি বিকল্প প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে, যেখানে শুধু পাঠ্যবই নয়; শেখানো হবে কীভাবে ভাবতে হয়; নিজেকে প্রশ্ন ও আত্মসমালোচনার চর্চা করতে হয়। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ ঘটবে; শেখানো হবে কীভাবে মানবিক হতে হয়; কীভাবে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই প্ল্যাটফর্ম হতে পারে কোনো সামাজিক উদ্যোগ; স্কুল-কলেজের বাইরে বিশেষ কর্মশালা বা অনলাইন চিন্তা উন্নয়ন কোর্স। এর মূল উদ্দেশ্য হবে নৈতিকতা ও মানবিকতার চর্চা, মুক্তচিন্তার অনুশীলন এবং মননশীল সমাজ গড়ে তোলার পথ তৈরি করা।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিন্তার বিপ্লব ঘটানোর জন্য স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ক্লাব গঠন; গল্প ও নাটকের মাধ্যমে নৈতিক চিন্তার বার্তা দেওয়া; রোল মডেলদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং নিজস্ব ‘ভাবনার  ডায়েরি’ লেখার অভ্যাস গড়ার মতো উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

এ ছাড়া রচনা, বক্তৃতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয়ে মনোযোগী করা যায়। শিক্ষকদের ক্লাসে নিয়মিত নৈতিক চিন্তার প্রশ্ন আলোচনা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে সচেতনতা সভার আয়োজন করাও কার্যকর। ভালো চিন্তার স্বীকৃতিস্বরূপ শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করলে তারা চিন্তা করতে আরও আগ্রহী হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, একমাত্র ভালো চিন্তাই পারে অসাধারণ মানুষ ও শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে। একটি দেশের উন্নয়ন শুধু অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো কিংবা প্রযুক্তির বিকাশে সীমাবদ্ধ নয়। দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটে যখন মানুষ ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে; অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এবং নিজের আচরণ দিয়ে সমাজকে পরিবর্তনের পথে নিয়ে যেতে শেখে।
এখন সময় এসেছে চিন্তার জায়গায় পরিবর্তন আনার। আমাদের সন্তানদের শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যাংকার নয়; ভালো মানুষ হিসেবেও গড়ে তুলতে হবে। চিন্তার এই বিপ্লব ঘটাতে পারলে আমাদের সমাজে অন্যায়-অবিচার অনেকটা কমে যাবে। দেশ এক নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হবে।

মো. সাইদুর রহমান: শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 
saidurpstu53@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধের সুপারিশ 
  • খুলনায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল বাস চলাচল
  • সামাজিক অপরাধ কমছে না কেন
  • সেলিম মাহমুদসহ রবিনটেক্সের গ্রেপ্তার শ্রমিকদের মুক্তি দাবি
  • অল্প বয়সেই সন্তান জেদী হয়ে উঠেছে?